জাতীয়

সংসদে অর্থপাচারকারীদের নাম প্রকাশের দাবি তারানা হালিমের

অর্থপাচারকারী ও বাজার সিন্ডিকেটকারীদের নাম জাতীয় সংসদে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য তারানা হালিম। বুধবার (৫ জুন) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তিনি।

Advertisement

এর আগে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি নিয়ে সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে কথা বলেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মজিবুল হক ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ। এদিন তারানা হালিমের বক্তব্যের একপর্যায়ে চিফ হুইফ নূর-ই আলম চৌধুরী ফ্লোর নিয়ে কার্যপ্রণালীর বিধির কোন বিধির আলোকে এ আলোচনা হচ্ছে তা জানতে চান।

তারানা হালিম তার বক্তব্যে বলেন, যানবাহনে সিন্ডিকেট, রাস্তাঘাটে সিন্ডিকেট, বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না? সিন্ডিকেট। ‍ওমুকখানে সিন্ডিকেট, চালের গুদামে সিন্ডিকেট, বস্ত্র বিতরণে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কারা? আমরা জানতে চাই, নাম প্রকাশ করা হোক। আমরা জানতে চাই পানামা পেপারসে, প্যারাডাইস পেপারসে কাদের নাম আছে।

তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, আওয়ামী লীগকর্মী, তার কন্যার (বঙ্গবন্ধুর) আওয়ামী লীগ করি। তাই আমরা চাই না একটি, দুটি, তিনটি লোকের জন্য আমাদের মতো যারা তাদের সমস্ত জীবন সততার শপথবাক্য রক্ষার জন্য ব্যয় করেছেন, তাদের গায়ে একটি ফোঁটা কালি লাগুক। আমি আহ্বান করবো সবার নাম প্রকাশ করা হোক এই সংসদে। কার কানাডায় বাড়ি আছে, বেগমপাড়ায় বাড়ি আছে, কে টাকা পাচার করেছে, কে কালোবাজারি করেছে, সবার নাম প্রকাশ করা হোক।

Advertisement

আরও পড়ুন

স্ত্রী-কন্যাসহ বেনজীরের বিরুদ্ধে মামলার পথে দুদক

তিনি বলেন, এই সংসদের মধ্যে যারা সিন্ডিকেটের মধ্যে পড়েন তারা আত্মসমালোচনা করেন, আত্মশুদ্ধি করেন। আর যারা সিন্ডিকেটের মধ্যে না পড়েন অনুগ্রহ করে সাধারণ জনগণ যেন কখনো সবাইকে একরঙ্গে রঞ্জিত না করে। অনেক সৎমানুষ আছেন, যারা তাদের সততার জন্য আজ প্রতিষ্ঠিত এবং এখানে আছেন।

তারানা হালিম বলেন, আমরা যদি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হয়ে থাকি এবং সত্যিকারের সৈনিক হয়ে থাকি তাহলে একটি টাকা ঘুস খাওয়ার সময় আমার বুক চুরমার হয়ে যাওয়ার কথা। আমাদের তার পথ থেকে সরে যাওয়ার কথা, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে দাবি করতে পারবো না, এ চিন্তা হওয়ার কথা।

আগের দুই বক্তার আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তারানা হালিম বলেন, এখানে যার (বেনজীর ইস্যুতে আলোচনা হয়েছিল) কথা বলা হলো এতক্ষণ, তার মন খারাপ হলে ১০টা বাড়ি কিনেছেন। আমাদের মন খারাপ হলে আমরা বড়জোর দুই-একটা শাড়ি কিনতে পারি। ওনার মন খারাপ হলে অনেক বড় বড় কিছু কিনতে পারেন।

Advertisement

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে টাকা পাচার রোধের বিষয় উল্লেখ আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যখন শাঁখের করাত কাটে তখন এদিকেও কাটে, ওইদিকেও কাটে। চোর ধরলে বলে কে ধরেছে? মানে সব চোর। চোর না ধরলে বলে কেন ধরেনি। সব দোষ তাদের। দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় সরকারের প্রশংসা করার জন্য বিরোধীদের অনুরোধ জানান তারানা হালিম। তিনি বলেন, আমরা শুরু করেছি। এটার শেষ করেই ছাড়বো।

আরও পড়ুন

বেনজীর ও তার পরিবারের ১০৯ একর জমি অবৈধ

তারানা হালিমের বক্তব্য শেষ হওয়ার আগে সংসদে ফ্লোর চান চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী। তাকে ফ্লোর দেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। নূর-ই-আলম চৌধুরী আলোচনাটা কিসের ওপর হচ্ছে তা জানতে চান।

তিনি বলেন, আলোচনাটা কীসের ওপর হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। আপনি কীসের ওপর আলোচনা..., এটা কি সাধারণ আলোচনা, এটা কি বাজেট অধিবেশন আলোচনা? পয়েন্ট অব অর্ডার হলে এটা কিসের ওপর পয়েন্ট অব অর্ডার সেটা থাকতে হবে, সেটা সময়ের মধ্যে থাকবে। আপনি পয়েন্ট অব অর্ডারে যদি একজনকে আধাঘণ্টা সময় দেন, তাহলে তো সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি, নীতিমালা কোনোটাই মানা হচ্ছে না।

নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, পয়েন্ট অব অর্ডারে অবশ্যই বলতে হবে কী পয়েন্টের ওপর, সেটা সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। আপনি তো (ডেপুটি স্পিকার) সাধারণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। এটা কোন ধারায় বলছেন। এখানে অনেক এমপি বসে আছেন, তাদের মূল্যবান সময় আছে, কিন্তু আপনি তো পয়েন্ট অব অর্ডারে সাধারণ আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন।

পরে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু বলেন, চিফ হুইপ সঠিক কথা বলেছেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে আমাদের আইন আছে, কার্যপ্রণালী বিধি আছে। অভিজ্ঞ সদস্য আছেন, তাদের সেই অনুযায়ী কথা বলার দরকার। পয়েন্ট অব অর্ডারে নির্দিষ্ট বিষয়ে এমপিদের কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি।

অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ বাহিনীর প্রধান- দেশ তো তাদের। বেনজীর, আজিজ, আনোয়ারুল আজীমের ঘটনা নিয়ে তিনি নির্বিকার বলে জানান। বলেন, লাখ লাখ আজিজ, বেনজীর সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।

আইএইচআর/ইএ