সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে ধনী থেকে নিম্নবিত্ত সবাইকে করজালের মধ্যে নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে থাকছে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ।
Advertisement
মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষকে এবার কিছুটা স্বস্তি দিতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর দাবি তোলা হয়েছিল। তবে তাতে কর্ণপাত করেননি অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রাখা হতে পারে। একই সঙ্গে প্রায় অর্ধশত পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট হার এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ফলে অতি দরিদ্র থেকে কোটিপতি- সবাইকেই সমানভাবে বহন করতে হবে ভ্যাটের ভার।
করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত থাকলেও স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের জন্য করধাপ একটি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ধাপ অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে আয়করের সর্বোচ্চ হার রয়েছে ২৫ শতাংশ। এক ধাপ বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরে আয়করের সর্বোচ্চ হার ৩০ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। এর ফলে ধনীদের আরও বেশি কর দিতে হবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দেশের কর ব্যবস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার উন্নয়নে বাজেটে উদ্যোগ থাকবে। পাশাপাশি স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত করহার ২০২৫-২৬ করবর্ষের জন্য বহাল রাখার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থমন্ত্রী।
Advertisement
আগামী অর্থবছরে শর্তসাপেক্ষে করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো হতে পারে। একই সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য নির্ধারণ করা করপোরেট করহার ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও বহাল রাখার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থমন্ত্রী।
আগামীকাল ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। বাজেট প্রস্তাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্যে করদাতা, ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব করনীতি প্রণয়নের বিষয় উল্লেখ থাকতে পরে। এর মাধ্যমে রাজস্ব আয়ে প্রত্যক্ষ করের অবদান ২০৩১ সালের মধ্যে ৪২ শতাংশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ হতে পারে। এরই ধারাবাহিকতায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন, করজাল সম্প্রসারণ ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম তুলে ধরতে পারেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নীতি ও কর সহায়তা প্রদান, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি, রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, সম্পদের পুনর্বণ্টন ও বৈষম্য হ্রাসের উদ্যোগ থাকতে পারে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, দেশীয় শিল্পের সংরক্ষণ ও বিকাশ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণে নীতি ও কর সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হতে পারে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সাধারণ করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা চলতি বছরের মতো সাড়ে ৩ লাখ টাকা রাখা হতে পারে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের মতো নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ৫ লাখ টাকা এবং তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকতে পারে।
Advertisement
আগামী অর্থবছরে স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা হতে পারে। এছাড়া নগদ অর্থসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ থাকতে পারে।
চলতি অর্থবছরে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত রেখে তার পরবর্তী এক লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ আয়কর দিতে হচ্ছে। এর পরবর্তী ৩ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর ধার্য রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রথম চার ধাপের আয়কর অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে পরবর্তী ২০ লাখ টাকার ওপর ২৫ শতাংশ এবং বাকি আয়ের ওপর কর ধার্য হতে পারে ৩০ শতাংশ।
ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, দেশের কর ব্যবস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার উন্নয়নে বাজেটে উদ্যোগ থাকবে। পাশাপাশি স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত করহার ২০২৫-২৬ করবর্ষের জন্য বহাল রাখার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থমন্ত্রী।
আরও পড়ুন
এবার বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুতে বড় লোকসান, পানি বেচে আসবে লাভ বাজেটে কী চান খেটে খাওয়া মানুষ?বর্তমানে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার কোম্পানি করদাতা ছাড়া অন্য করদাতাদের জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার কোম্পানি করদাতা ছাড়া অন্য করদাতাদের জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম কর ৪ হাজার টাকা। এছাড়া সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকার কোম্পানি করদাতা ছাড়া অন্য করদাতাদের জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা। আগামী অর্থবছরে এই ন্যূনতম কর কাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব থাকতে পারে।
বর্তমানে নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত সারচার্জের হার শূন্য। নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকার বেশি হলে ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হয়। এছাড়া নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে সারচার্জ ৩৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে অপরিবর্তিত থাকতে পারে এসব সারচার্জ।
কোম্পানি করদাতার জন্য বর্তমানে কার্যকর রয়েছে খাতভিত্তিক অনেকগুলো করহার। আয়কর আইনে সংজ্ঞায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার শর্তসাপেক্ষে সাড়ে ২৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রতিটি একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া বাড়ানো হতে পারে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের শুল্ক। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে।
এছাড়া এক ব্যক্তি কোম্পানি উৎসাহিত করতে নন-লিস্টেড কোম্পানির মতোই শর্তসাপেক্ষে এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হতে পারে। পরিশোধিত মূলধনের নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার শর্তসাপেক্ষে করা হতে পারে সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ। কর-জিডিপি হার বাড়ানোর প্রচেষ্টা হিসেবে সার্বিক বিবেচনায় সমবায় সমিতির জন্য করহার ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হতে পারে।
আগামী অর্থবছরে স্থাবর সম্পত্তি যেমন- ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত আয় (কালো টাকা) বৈধ করার সুযোগ রাখা হতে পারে। এছাড়া নগদ অর্থসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ থাকতে পারে। দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, এ ক্ষেত্রে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
এই সুবিধা দেওয়ার কারণ হিসেবে অধিক পরিমাণ রাজস্ব জোগান দেওয়া এবং বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখার কথা উল্লেখ করতে পারেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া রিটার্ন দাখিলে করদাতার অজ্ঞতাসহ অনিবার্য কারণে অর্জিত সম্পদ প্রদর্শনে যদি ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে তাহলে ওই ত্রুটি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। অর্থনীতির মূল স্রোতে অর্থ প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করতে পারেন অর্থমন্ত্রী।
দেশের পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে সিসি-ভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকতে পারে পরিবেশ সারচার্জের বর্তমান কাঠামো।
অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রভাব ক্রমাগত কমিয়ে দেশে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির বিকাশের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের জন্য রিসোর্ট, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টারকে নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। একই সঙ্গে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মোটেল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নের সময় এবং কমিউনিটি সেন্টার, কনভেনশন হল বা সমজাতীয় কোনো সেবা গ্রহণের সময় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হতে পারে।
আরও পড়ুন
অর্থনীতি সমিতির ১১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরও বেড়েছে রপ্তানিতে উৎসে কর ০.২৫ শতাংশ চায় বিজিএপিএমইএব্যবসাস্থানে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হলে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হতে পারে। রিটার্ন দাখিলে বাধ্য নয় এমন কোনো কোম্পানির যে কোনো গ্রস আয়, যা করমুক্ত নয় বা দান-অনুদান নয় বা কোনো প্রকারের কর, খাজনা ও শুল্ক নয়- এমন আয়ের ওপর হতে পারে কর আরোপ।
এছাড়া ধান, গম, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মশুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, মোটা আটা, আটা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি, কালো গোল মরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, ক্যাসিয়া পাতা, পাট, তুলা এবং সুতা কিনতে খোলা ঋণপত্রে করহার যৌক্তিক করা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় ঋণপত্র খোলা বা অন্য কোনো অর্থায়ন চুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিশোধিত বা ঋণকৃত পরিমাণের ওপর ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর কর্তনের হার যৌক্তিক করা হতে পারে।
আগামী অর্থবছরে ট্রাস্ট, ব্যক্তিসংঘ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সুদ আয় থেকে কর নেওয়া হতে পারে ২০ শতাংশ হারে। এছাড়া বিভিন্ন ফান্ড ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুদ আয় থেকে ১০ শতাংশ হারে কর কাটা হতে পারে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সহায়ক হিসেবে কোনো নিবাসী ব্যক্তি বা অনিবাসী বাংলাদেশি স্বাভাবিক ব্যক্তির ব্যবসার আয়ে তিন বছর করমুক্ত সুবিধা দেওয়া হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত থাকবে ওই ব্যক্তির সব ব্যবসায়িক কার্যক্রম হতে হবে ক্যাশলেস।
আগামী অর্থবছরে মিষ্টি পানীয় উৎপাদন থেকে আয়ের ওপর বিদ্যমান করহার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশের পরিবর্তে কার্বোনেটেড বেভারেজের মতো ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর আরোপের প্রস্তাব করতে পারেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে যে কোনো ট্রাস্ট থেকে টার্নওভার কর সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হতে পারে।
তবে উত্তরাধিকার, উইল, অছিয়ত এবং অবাতিলযোগ্য ট্রাস্টমূলে কোনো পরিসম্পদ অর্জিত হলে তা সুস্পষ্টভাবে করমুক্ত রাখা হতে পারে আগামী অর্থবছরে। একই সঙ্গে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অনুমোদিত কোনো ব্যক্তির নেওয়া যে কোনো দান বা অনুদান থাকতে পারে করমুক্ত। এতিমখানা, অনাথ আশ্রম ও ধর্মীয় উপাসনালয়কে গাড়ির অগ্রিম কর পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।
করদাতাদের রিটার্ন দাখিল এবং কর প্রদান জনপ্রিয় করতে স্বাভাবিক ব্যক্তি-কোম্পানি নির্বিশেষে সব রিটার্ন সংশ্লিষ্ট করবছরের জন্য স্বনির্ধারণী ব্যবস্থায় দাখিলের বিধান আনার প্রস্তাব করতে পারেন অর্থমন্ত্রী। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা সর্বোচ্চ এক মাস বাড়াতে পারবে- এমন বিধান করা হতে পারে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্যস্তর বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া বাড়ানো হতে পারে এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের শুল্ক। বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হতে পারে ১৫ শতাংশ।
খোসা ছাড়ানো কাজুবাদাম আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। একই সঙ্গে এলইডি বাল্ব ও এনার্জি সেভিং বাল্ব উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। গাড়ি সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনে ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হতে পারে ৫ শতাংশ। জেনারেটর সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক আরোপ হতে পারে এক শতাংশ। পাশাপাশি প্রায় অর্ধশত পণ্যের উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট হার এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হতে পারে।
আসন্ন বাজেটে বেশকিছু পণ্যের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। ২৮২ পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার-হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি) কমানো হতে পারে। এতে ওইসব পণ্যের দাম কমতে পারে। প্যাকেটজাত গুঁড়োদুধ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার হতে পারে। চকোলেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে হতে পারে ২০ শতাংশ। কার্পেট তৈরির প্রধান কাঁচামাল পলিপ্রোপাইলিন ইয়ার্ন আমদানির শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে। এছাড়া রড, বার ও অ্যাঙ্গেল তৈরির কাঁচামাল ম্যাঙ্গানিজ আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হতে পারে ৫ শতাংশ।
এমএএস/কেএসআর/জিকেএস