ক্যাম্পাস

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩০ শতাংশ কোটা বাতিল নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হাইকোর্টের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছেন।

Advertisement

এই রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।

কোটাব্যবস্থা বন্ধের পর থেকে সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল এবং এটা পুনরায় চালু হলে ফের যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হবেন বলেও মনে করছেন অনেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী হযরত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোটাব্যবস্থা কিছু কিছু ক্ষেত্রে যৌক্তিক হতে পারে। যেসব জাতি-গোষ্ঠী, সম্প্রদায় অনগ্রসর তাদের জন্য কোটা থাকতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা যে ৩০ শতাংশ বহাল করার কথা বলা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। দেশ স্বাধীনের এত বছর পরও যদি এ কোটা বহাল রাখা হয়, তাহলে যারা মেধার দিক থেকে এগিয়ে আছে তাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া চাকরিতে কোনো কোটা থাকা উচিত নয়। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে, মেধায় যারা এগিয়ে থাকবে তাদেরই চাকরি দেওয়া উচিত।’

Advertisement

আরও পড়ুন

সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫, কোটায় ৩৭ বছর করার সুপারিশ কোটা বাতিলের পরিপত্র কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্টের রুল

মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় প্রজন্মের কোটা সুবিধার সমালোচনা করে ফেইসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের নাজমুস সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তারা সব কিছুতে অগ্রাধিকার পাবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের সন্তানরা পাবে এটাও মেনে নেওয়ার মতো। কিন্তু তৃতীয় প্রজন্ম মানে নাতি-নাতনিদের কেন এ কোটার আওতায় আনতে হবে? এটার যুক্তি কি?’

ইমরান হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘সারাদিন লাইব্রেরি আর রিডিংরুমে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পঁচে মরবে আর কোটায় চাকরি নিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণির পদধারি হবে তারা (কোটাধারীরা)।’

কোটা বহালের এমন সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গও করছেন কেউ কেউ। কোটা বহালের সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করে শফিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা কি পুরস্কার নাকি ক্ষতিপূরণ? যুদ্ধের এত বছর পরও যদি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, এরকম আরও কত বছর দিয়ে যেতে হবে?’

Advertisement

কোটার ব্যপারে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘এমনিতেই দেশে প্রচুর বেকারত্ব, শিক্ষার্থীরা পাস করে চাকরি পাচ্ছে না। চাকরির বাজার মন্দা। এ অবস্থায় আবার কোটা ব্যবস্থা চালু করার কারণে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে আরও প্রতিযোগিতা বাড়বে। একটি পক্ষ সুবিধা পাবে, এ গ্রুপের জন্য মেধাবীরা চাকরি বঞ্চিত হবে। ফলে নতুন প্রজন্মের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে প্রচুর অসন্তোষ দেখা দেবে। অনেকদিন পর এটা পুনর্বহাল করাটা আমার কাছে মোটেও বেকারত্ব দূরীকরণের সহায়ক বলে মনে হচ্ছে না।’

আরবি বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত পরিমাণ কোটার মাধ্যমে যারা এমনিতে আগে থেকেই সুবিধা পাচ্ছে তাদের আবারও সুবিধা দেওয়াটা কোনো ভাবেই যৌক্তিক না। কিছু ক্ষেত্রে কোটা থাকতে পারে। উপজাতি, প্রতিবন্ধী বা এ রকম পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কোটা থাকতে পারে। কিন্তু সেটা এত বেশি নয়।’

এমএইচএ/এমআইএইচএস/এমএস