ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের চুরি হওয়া আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স মডেলের মোবাইল ফোন এক মাস পর মালয়েশিয়া থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ এটি উদ্ধার করে। পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে মোবাইল ফোন চুরির সঙ্গে জড়িত চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে।
Advertisement
গ্রেফতাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. জাকির হোসেন (৪০), মাসুদ শরীফ (৪১), মো. জিয়াউল মোল্লা জিয়া (৪৮), রাজিব খান মুন্না (২২), মো. আল আমিন মিয়া (২০), মো. আনোয়ার হোসেন ওরফে সোহেল (২৭), মো. রাসেল (৩৮), মো. খোকন আলী (৩৬) ও মো. বিল্লাল হোসেন (৩৭)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৬৩টি চোরাই মোবাইল ফোন ও ১৪টি বিভিন্ন কোম্পানির সিম উদ্ধার করে ডিবি।
গত ৩০ এপ্রিল জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার মোশাররফগঞ্জে এক আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রীর জানাজা পড়তে যান ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক। জানাজা পড়ার সময়ে পকেট থেকে তার মোবাইল ফোন চুরি হয়। এ ঘটনায় মন্ত্রীর সহকারী একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মন্ত্রীর মোবাইল ফোন উদ্ধারে কাজ শুরু করে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আইফোন উদ্ধার করা হয় মালয়েশিয়া থেকে।
Advertisement
বুধবার (৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সমাবেশ-জানাজায় টার্গেট করে আইফোন চুরিমোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, চোরচক্র ৮০টি গ্রুপে ভাগ হয়ে কাজ করে। ৮০টি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন জাকির। ঢাকায় কাজ করা চক্রটি পকেটমার ও ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নেয়। ঢাকার বাইরে চক্রের সদস্যরা বড় কোনো সমাবেশ, জানাজা বা জনসমাবেশকে টার্গেট করে আইফোন চুরি করে। চুরি করতে গিয়ে যদি কেউ ধরা পড়ে যায় তখন ভুক্তভোগীকে ঘিরে রেখে তাদের সদস্যদের পালাতে সাহায্য করে চক্রের অন্য সদস্যরা।
চোরাই আইফোন পাচার হচ্ছে মালয়েশিয়া-ভারত-দুবাইঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি বা ছিনতাই করে আনা ফোনগুলো জাকিরের কাছে জমা হয়। জাকির দামি মোবাইল ফোনগুলো (আইফোন) চক্রের বিদেশে থাকা সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, ভারত ও দুবাইতে পাঠিয়ে দেন তিনি। জাকিরের কাছে আসা মোবাইল ফোন কুরিয়ারের মাধ্যমে চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন মার্কেটে থাকা চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। তারাই দেশ থেকে বিভিন্ন দেশে এগুলো পাচার করেন।
আরও পড়ুন
Advertisement
মোবাইল ফোনের লক খুললে বেশি দাম, না খুললে কম দামে বিক্রিহারুন অর রশীদ আরও বলেন, প্রথমে চোরাই মোবাইল ফোনের ‘লক’ খোলার চেষ্টা করা হয়। কয়েকবার চেষ্টার পরে যদি সফল হয় তাহলে সেই ফোনটি তারা বেশি দামে বিক্রি করেন। আর লক খুলতে না পারলে সেগুলো কম দামে বিক্রি করা হয়। ডিবির ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম এমন শতাধিক চোরাই মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। চোর চক্রের মূলহোতাসহ নয় জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যেভাবে চুরি হয় মন্ত্রীর আইফোনধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান গত ৩০ এপ্রিল সকালে ইসলামপুর পৌরসভার মোশাররফগঞ্জে এক ব্যক্তির জানাজায় অংশ নেন। সেখানে পাঞ্জাবির পকেট থেকে তার আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স মডেলের মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। মোবাইল ফোনটি মন্ত্রীর কাছে থেকে চুরি করেন মুন্না। এরপর তা যায় রাসেলের কাছে। রাসেল ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন বোরহানের কাছে। এরপর ওই মোবাইল ফোন কামরুজ্জামান হিরু নামের একজনের কাছে দেন বোরহান। হিরু মোবাইল ফোনটি মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেন। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মালয়েশিয়া থেকে ফেরত আনা হয় ধর্মমন্ত্রীর চুরি হওয়া আইফোন।
এভাবেই চক্রের সদস্যরা আমলা বা বড় সরকারি কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের টার্গেট করেন। তারা কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে গেলে কৌশলে মোবাইল ফোন চুরি করে পালিয়ে যান।
মোবাইল ফোন কেনার আগে সতর্ক হওয়া প্রয়োজনঅনুমোদিত বিক্রয়কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনো স্থান বা ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল ফোন না কেনা। পুরাতন মোবাইল ফোন কেনা থেকে বিরত থাকা। চিকিৎসা করার টাকা নেই তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোন বিক্রি করতে চাচ্ছেন- এমন ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল ফোন না কেনা। পূর্ণাঙ্গ তথ্যসহ রশিদ ছাড়া মোবাইল ফোন না কেনা।
চুরি ঠেকাতে পাঞ্জাবির পকেটে মোবাইল ফোন রাখা উচিৎ নয়। এরপরও চুরি হলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে হারানোর জিডি না করে চুরির মামলা করতে হবে। মোবাইল ফোনে থাকা তথ্যের সুরক্ষায় স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
টিটি/কেএসআর/জিকেএস