আন্তর্জাতিক

এক কোটি টনের বেশি প্লাস্টিকে দূষিত হচ্ছে সমুদ্র

সাজিদ হাসান, আন্তর্জাতিক ডেস্কবর্তমানে সমুদ্রের পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হলো সামুদ্রিক বর্জ্য। মূলত ইচ্ছাকৃতভাবে বা দুর্ঘটনাক্রমে সমুদ্রে পড়া মানবসৃষ্ট কোনো কঠিন পদার্থকেই সামুদ্রিক বর্জ্য বলা হয়।

Advertisement

জাতিসংঘের এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম অনুসারে, প্লাস্টিক, কাচ, কাঠ ও রাবারকে প্রধান সামুদ্রিক বর্জ্য হিসেবে ধরা হয়। সারা বিশ্বের সামুদ্রিক বর্জ্যের মধ্যে ৬১ থেকে ৮১ শতাংশই হলো এগুলো। প্রতি বছর এক কোটি টনের বেশি প্লাস্টিকে দূষিত হচ্ছে সমুদ্রগুলো।

এসব বর্জ্য যেভাবে সমুদ্রে প্রবেশ করে

সামুদ্রিক আবর্জনার অধিকাংশ, আনুমানিক ৮০ শতাংশই ভূমিভিত্তিক উৎস থেকে উদ্ভূত। এর মধ্যে রয়েছে উপকূল বা নদী তীরবর্তী ডাম্পসাইট, সমুদ্র সৈকতে ফেলা ময়লা-আবর্জনা, উপকূলীয় পর্যটন ও বিনোদনমূলক ব্যবহার, সড়ক, মৎস্য শিল্প ও জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড। আবার বাতাস, বৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ হারিকেন, সুনামি, টর্নেডো ও বন্যার কারণে উপকূলীয় এলাকার আবর্জনা সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হয়। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ বর্জ্য আসে সমুদ্রভিত্তিক উৎস থেকে। যার মধ্যে রয়েছে পরিত্যক্ত, হারিয়ে যাওয়া বা ফেলে দেওয়া মাছ ধরার জিনিসপত্র, শিপিং কার্যক্রম ও অবৈধ ডাম্পিং।

Advertisement

এগুলো কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়?

সমুদ্রতলের নির্দিষ্ট স্থান ছাড়াও খুব ক্ষুদ্র ধ্বংসাবশেষগুলো (৫ মিলিমিটার বা তার কম ঘনত্বের) ঘনবসতিপূর্ণ উপকূলীয় অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থান করে। মূলত ধ্বংসাবশেষের আকার ও ধরন নির্ধারণ করে যে এগুলো জলরাশির কোন অংশে অবস্থান করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রক্রিয়াজাত কাঠ ও রাবার সাধারণত উপকূলে জমা হওয়ার আগে নদীর মাধ্যমে ভেসে আসে। অন্যদিকে, কাচ, ধাতু ও জৈব পদার্থের মতো ধ্বংসাবশেষগুলো সরাসরি উপকূলীয় জলরাশিতে ফেলে দেওয়া হয়। প্রবল বাতাস ও বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক পরিস্থিতি এসব পদার্থকে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সমুদ্রের স্রোতে সেগুলো আবার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।

কেন এটা গুরুতর বিষয়?

সামুদ্রিক বর্জ্য বৈশ্বিক পরিবেশ, অর্থনীতি ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন। এসব বর্জ্য সব সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য চরম উদ্বেগের। পর্যায়ক্রমে এসব আবর্জনা ক্ষয় বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জলজ প্রাণীর খাদ্যজালে ঢুকে যাচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র প্লাংকটোনিক জীব থেকে শুরু করে তিমিদের মতো বড় স্তন্যপায়ী প্রাণী পর্যন্ত দুর্ভোগে পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালে গ্রিসের উপকূলে আটকে পড়া একটি তিমির পেটে ৩৩ পাউন্ড (প্রায় ১৫ কেজি) প্লাস্টিক পাওয়া যায়।

Advertisement

আবার সামুদ্রিক বর্জ্য পর্যটনখাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ স্বাভাবিকভাবেই মানুষ নোংরা সমুদ্র সৈকত পছন্দ করে না। ২০১৯ সালে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবিটি গ্লোবালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, সমুদ্রের তীরে ভেসে আসা আবর্জনা পর্যটনখাত, বিনোদনখাত ও আঞ্চলিক অর্থনীতিতে বাজে প্রভাব ফেলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের অরেঞ্জ কাউন্টিতে করা একই ধরনের আরেকটি গবেষণায় উঠে আসে, প্রতি বছর নোংড়া সমুদ্রতীর ছেড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সৈকতে যেতে পর্যটকদের বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। কারণ পরিষ্কার সুন্দর সমুদ্র সৈকতগুলো সচরাচর দূরে হয়। তাছাড়া সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষের জন্য মৎস্যখাতেরও বিশাল ক্ষতি হচ্ছে।

এক জরিপে দেখা গেছে, এ সমস্যার কারণে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২১টি দেশের মৎস্যজীবীরা প্রায় ১২৬ কোটি ডলারের ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন।

আবার সমুদ্রের এসব আবর্জনা মানবস্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে বিজ্ঞানীরা মানুষের ফুসফুস, মল ও রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছেন।

২০১৮ সালে গবেষকরা বিভিন্ন দেশের ২৫৯টি পানির বোতলের ৯৩ শতাংশটিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পেয়েছেন। ক্যানসার, হরমোনের তারতম্য, প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধা ছাড়াও মারাত্মক সব ক্ষতির কারণ এই মাইক্রোপ্লাস্টিক।

সমাধান কী?

সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষ থেকে মুক্তি পাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সমাধান নেই। আবর্জনার ধরন, দূষণের উৎস ও আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটের আলোকে সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সেই সঙ্গে দরকার আন্তর্জাতিক সমন্বয়।

সূত্র: এবিটিগ্লোবালডটকম

আরও পড়ুন বালি দ্বীপের এ কী হাল!সমুদ্র দূষণে মানুষ সবচেয়ে বেশি দায়ীদূষণ থেকে সমুদ্রকে বাঁচাবেন যেভাবেসমুদ্র দূষণপ্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসসমুদ্রে দূষণ বন্ধে কাজ করার প্রতিশ্রুতি এশীয় দেশগুলোরবছরে ভৌতিক জালে আটকে মারা যায় ১ লাখ ৩৬ হাজার সামুদ্রিক প্রাণীবিষাক্ত পলিথিনে বিষিয়ে উঠছে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ

এসএএইচ/এমএমএআর/জেআইএম