জাতীয়

পরিবেশ রক্ষায় ঢাকার প্রথম ‘নগর বন’

রাজধানীর উচ্চ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ রোধসহ পরিবেশ রক্ষায় ‘নগর বন’ তৈরির পরিকল্পনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। হিট অফিসার বুশরা আফরিনের পরামর্শে নগর বনায়নের জন্য এরই মধ্যে দুটি স্থানও নির্ধারণ করা হয়েছে। অপেক্ষা শুধু পৃষ্ঠপোষকের। অর্থসহায়তা পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে কাজ।

Advertisement

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে রাজধানীর বনানী ও কল্যাণপুরে বনায়ন করা হবে। কল্যাণপুরে ডিএনসিসির নিজস্ব জায়গা রয়েছে। আর বনানীতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জায়গা চায় ডিএনসিসি। পরে ১৮ দফা শর্তে জায়গা দিতে সম্মতি দিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

রাজধানীর প্রথম পরিকল্পিত নগর বনায়নে এরই মধ্যে অর্থসহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন সংস্থাটিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের (আরশট-রক) চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন। এশিয়ার প্রথম হিট অফিসার হিসেবে ঢাকার তাপমাত্রা কমাতে ডিএনসিসির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন তিনি।

অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে নগরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসিকে পরামর্শ দিচ্ছেন। এখন তার পরামর্শ এবং পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বনানী ও কল্যাণপুরে নগর বনায়ন করার চেষ্টা চলছে। এ বনায়নে পৃষ্ঠপোষক পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে।- ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম

Advertisement

সূত্র জানায়, এ নগর বনায়ন প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রকৃতি ও শিশুদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন গড়ে তোলা। এখানে স্থানীয় প্রজাতির গাছ ব্যবহার বা লাগানো হবে। যাতে স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে অনায়াসে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এমন ছোট বন সৃষ্টি করলে টেকসই বাস্তুতন্ত্র তৈরি সম্ভব। তবে এ বন তৈরির জন্য সঠিক প্রজাতির উদ্ভিদ নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।

ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘নগর বনায়ন শহরের পরিবেশ একটু ঠান্ডা করতে, পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে, জীববৈচিত্র্য বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া নগর বনায়ন তৈরির প্রথম ধাপে স্থানীয় প্রজাতির গাছের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ছোট বনে সাধারণত ২০ থেকে ৪০ প্রজাতির বৃক্ষ ও গুল্ম প্রজাতির উদ্ভিদ থাকে।’

এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশনের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে নগরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসিকে পরামর্শ দিচ্ছেন। এখন তার পরামর্শ এবং পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বনানী ও কল্যাণপুরে নগর বনায়ন করার চেষ্টা চলছে। এ বনায়নে পৃষ্ঠপোষক পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে।’

আরও পড়ুনগাছ কেটে ছায়া খুঁজি‘গাছ কাটা বন্ধে সিটি করপোরেশন-রাজউকের উন্নয়ন দর্শন বদলানো উচিত’সবুজ হারাচ্ছে ঢাকার পার্ক

তিনি বলেন, ‘গত চার বছরে উত্তর সিটির ২৪টি পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন করেছি। সবগুলো পার্ক ও খেলার মাঠ সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নাগরিকরা তার সুফল ভোগ করছেন।’

Advertisement

নগর বনায়নডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, কল্যাণপুরে ডিএনসিসির ৫৩ একর আয়তনের একটি জলাধার রয়েছে। কয়েক যুগ ধরে এ জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বসতি গড়ে তুলেছিল একটি চক্র। এক বছর আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন সেখানে হাইড্রো ইকোপার্ক নির্মাণ করতে চায় ডিএনসিসি। এর একাংশে আলাদাভাবে ‘নগর বনায়ন’ করার প্রস্তাব করেছেন চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন।

ঢাকার কল্যাণপুর ও বনানীতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা ‘নগর বনায়ন’ তৈরি করতে চাই। এ বনায়ন বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি। তবে প্রকল্পটি এখনো পরিকল্পনা পর্যায়ে। পৃষ্ঠপোষক পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে।- চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন

একইভাবে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ থেকে বনানী ২৭ নম্বর রোড পর্যন্ত বিমানবন্দর রোডের পূর্বপাশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মালিকানাধীন অব্যবহৃত জায়গায় নগর বনায়নে ডিএনসিসিকে পরামর্শ দেন বুশরা আফরিন। পরে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মালিকানাধীন অব্যবহৃত জায়গাটি সাময়িকভাবে ব্যবহারের অনুমতি চায় ডিএনসিসি। চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্পত্তি শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. গোলাম জিলানী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নগর বনায়নের অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে বনায়নের জায়গার মালিকানা ডিএনসিসি নিজের বলে দাবি করতে পারবে না, ভবিষ্যতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সড়ক সম্প্রসারণ করতে চাইলে নগর বনায়নের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে- এমন ১৮টি শর্ত দেওয়া হয়। এসব শর্ত মেনে ডিএনসিসিকে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্বাক্ষর করতেও বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী ডিএনসিসি প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যায়।

জানতে চাইলে চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকার কল্যাণপুর ও বনানীতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা ‘নগর বনায়ন’ তৈরি করতে চাই। এ বনায়ন বাস্তবায়ন করবে ডিএনসিসি। তবে প্রকল্পটি এখনো পরিকল্পনা পর্যায়ে আছে। পৃষ্ঠপোষক পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘কল্যাণপুরে যে জায়গায় বনায়ন করতে চাই, সেটি সিটি করপোরেশন মালিকানাধীন। আর বনানীর জায়গাটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। এরই মধ্যে এ অধিদপ্তর জায়গা বরাদ্দ দেবে বলে ডিএনসিসিকে চিঠি দিয়েছে। তবে তারা বেশকিছু কঠিন শর্ত দিয়েছে। তাদের শর্ত মেনেই আমরা কাজ এগিয়ে নিতে চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, বনানী ২৭ নম্বর রোডের দক্ষিণ পাশ থেকে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ পর্যন্ত বিমানবন্দর রোডের পূর্বপাশে লম্বালম্বিভাবে একটি ফাঁকা জায়গা অব্যহৃত অবস্থায় রয়েছে। এখানে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রয়েছে কিছু ফুলগাছ। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা নষ্ট হচ্ছে। জায়গাটি সরকারের কোন সংস্থার তার কোনো বোর্ড দেখা যায়নি।

বনানী ২৭ নম্বর রোডের বাসিন্দা আহসান হাবিব। প্রতিদিন সকাল-বিকেল বনানীর বিভিন্ন সড়কে হাঁটাহাঁটি করেন তিনি। আলাপকালে আহসান হাবিব বলেন, ‘এখন যে জায়গায় নগর বনায়ন করার কথা বলা হচ্ছে, আগে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় অনেক গাছ ছিল। সড়ক চওড়া করার নামে বিভিন্ন সময় সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।

এছাড়া কয়েক বছর আগে এখানে কয়েকটি নার্সারি করা হয়েছিল। দেখতে ভালোই লাগতো। কিন্তু এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‌্যাম বনানী নামার কারণে অনেকখানি জায়গা তারা নিয়ে নিয়েছে। নার্সারিগুলো চলে গেছে। এখন সেখানে নগর বনায়ন করা হলে নগরবাসী উপকৃত হবেন।’

ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান খান বলেন, ‘চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিনের পরামর্শেই বনানীতে নগর বনায়নের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন বনায়নে পৃষ্ঠপোষক পেলেই নকশা তৈরি ও সমঝোতা স্মারক করা হবে।’

এমএমএ/এএসএ/জেআইএম