ঢাকা শহরে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার পানির সংকট প্রকট। ওয়াসার পানি পানের অনুপযুক্ত। বাধ্য হয়ে নগরবাসী ফুটিয়ে পানি পান করেন। এতে গ্যাসের অপচয় হয়। আবার যাদের সামর্থ্য আছে, তারা বাজার থেকে ফিল্টার কিনে তাতে পানি শোধন করে পান করেন। এজন্য মোটা অংকের টাকা খরচ হয়। পাশাপাশি এ পদ্ধতি স্থায়ীও নয়।
Advertisement
নগরবাসীর এমন সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া পাঁচ ছাত্রী। বাসার ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাবার পানির সরবরাহের পদ্ধতি উদ্ভাবন ও ব্যবসায়িক ধারণা দিয়েছেন তারা। তা দিয়েই বাজিমাত করেছেন এই পাঁচ ছাত্রী। ‘উইমেন ইন টেক’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাদের দল ‘টিম এমপাওয়ার’। পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন তিন লাখ টাকা।
মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এবারই ‘উইমেন ইন টেক’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন ৭৫০ জন প্রতিযোগী। তাদের মধ্যে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচিত হন ১৮ জন। চূড়ান্ত পর্যায়ে একক ও দলীয় প্রতিযোগিতা হয়।
Advertisement
আরও পড়ুন
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্টার্টআপরাই হবে মূল চালিকাশক্তি: পলকআইসিটিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে নতুন সমাধান সম্ভব এবং ব্যবসায়িক সফলতার ভিত্তিতে দলগত আইডিয়াগুলো নির্বাচিত করা হয়। যুক্তিসংগত মূল্যায়ন, ব্যবসায়ের পরিকল্পনার অভিনবত্ব, বিজনেস কেস, অ্যাসাইনমেন্ট স্কোর মূল্যায়ন করে বিজয়ী ঠিক করা হয়।
‘ধারা’ নামে একটি প্রজেক্ট দিয়ে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘টিম এমপাওয়ার’। টিমের দলনেতা মাহমুদা নাঈম। তিনি গাজীপুরে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি ম্যানেজমেন্ট (বিটিএম) বিভাগের ছাত্রী।
চ্যাম্পিয়ন টিমের অন্য চারজন হলেন—ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের ছাত্রী পুষ্পিতা খান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের প্রিমা সরকার, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের বুশরা হাসান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সুমাইয়া লাবিবা তারিক।
Advertisement
চ্যাম্পিয়ন টিমের অন্যতম সদস্য আইইউটির ইইই বিভাগের ছাত্রী পুষ্পিতা খান অনুষ্ঠান শেষে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মানুষকে সাশ্রয়ী খরচে সহজে খাবার পানি কীভাবে সরবরাহ করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করেছি। সেটা এমন যে, আবাসিক ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে তার মাধ্যমে পানি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর করে খাবার উপযোগী করা তোলা হবে। এরপর তা ওই ভবনে বসবাস করা সব পরিবারকে সরবরাহ করা হবে।’
তাদের উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে খরচ কেমন হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়ী হবে। সোলার প্যানেল বসাতে প্রথমবার এককালীন খরচ বেশি হলেও তা দীর্ঘদিন চলবে। ফলে বিদ্যুৎ এবং পানি ফোটাতে গ্যাস প্রয়োজন হবে না। যেকোনো ভবনে এককালীন এ প্রকল্প বসাতে দুই লাখ টাকা খরচ হবে। যদি পাঁচতলা একটি ভবনে ১০টি ইউনিট থাকে, প্রত্যেক ইউনিট থেকে আমরা ৪০০ টাকা করে ইউটিলিটি চার্জ আদায় করবো। প্রতি মাসে চার হাজার টাকা উঠে আসবে। অর্থাৎ চার বছরের মধ্যে প্রকল্প বসানোর খরচ তুলে ফেলা সম্ভব হবে। এরপর যতদিন এ প্রকল্প চলবে, তা থেকে লাভ হবে।’
প্রতিযোগিতায় আরও দুটি টিমকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এতে প্রথম রানার আপ হয়েছে ‘টিম টেরা বিন’। এই টিমের ব্যবসায়িক আইডিয়া ছিল সোলার কম্পোস্টার ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা যায়। পুরস্কার হিসেবে তারা পেয়েছেন দুই লাখ টাকা।
দ্বিতীয় রানার আপ হয়েছে ‘টিম সোলনেট’। দলটি ক্লাউড প্রযুক্তি ও অ্যাপ ব্যবহার করে কীভাবে সহজে ও কম খরচে সোলার প্ল্যান্ট তৈরি ও ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে ধারণা দেন। তাদের এক লাখ টাকা প্রাইজমানি দেওয়া হয়।
এছাড়া ব্যক্তিগত সাফল্য মূল্যায়ন করে চারজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের ছাত্রী কায়সারী ফেরদৌস, আইইউটির ছাত্রী মাহমুদা নাঈম, এসবিআইটি লিমিটেডের ডিজাইন ভেরিফিকেশন ইঞ্জিনিয়ার সুমাইয়া তারিক লাবিব ও আইইউটির ইইই বিভাগের সাফরিনা কবির। বিজয়ী এ চারজন বিনামূল্যে চীন ভ্রমণ ও সেখানার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য জারা জাবিন মাহবুব, ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ, ইউনেস্কোর বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান ড. সুজান ডাইজ, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, হুয়াওয়ের দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের সিইও প্যান জুনফেং।
এএএইচ/ইএ