প্রিন্স মামুন ও লায়লা সামাজিক মাধ্যম টিকটকের আলোচিত নাম। ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো সামাজিক মাধ্যমে বিনোদনভিত্তিক কন্টেন্ট বানিয়ে বরাবরই আলোচনায় ছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎই ঘটে ছন্দপতন। মদ্যপানে যেতে বাধা দেওয়ায় গত বছর হবু স্ত্রী লায়লাকে মারধরের অভিযোগ উঠে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে। মামুন দেশীয় ভোতা অস্ত্র দিয়ে লায়লাকে সাধারণ জখম করে বলে মামলার প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পায় পুলিশ।
Advertisement
গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মারধরের অভিযোগে আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনসহ তার দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী লায়লা আখতার ফরহাদ। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামুনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বায়োজিদ বোস্তামী। চার্জশিটেই উঠে আসে ঘটনার চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
সেই চার্জশিট আমলে নিয়ে সোমবার (৩ জুন) প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মঙ্গলবার (৪ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে আসামি মামুন আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত এক হাজার টাকা মুচলেকায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।
আরও পড়ুনলায়লার মামলায় জামিন পেলেন প্রিন্স মামুনজামিন পেয়ে প্রিন্স মামুন আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা। আসলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Advertisement
তিন বছর আগে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে লায়লার পরিচয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়েও চূড়ান্ত হয়। এরপর থেকে মামুন বাদীর বারিধারার ডিওএইচএস বাসায় বসবাস করতে থাকেন। মামুন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে লায়লার কাছ থেকে টাকাও নিতেন এবং প্রায়ই মদ্যপান করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতেন
তবে এদিন মামলার এজহারে দেওয়া লায়লার মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোনকল করা হলেও তিনি রিসিভ হয়নি।
মদ্যপান করে গভীর রাতে বাসা ফিরতেন প্রিন্স মামুনমামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই বায়োজিদ বোস্তামী গত ৩১ জানুয়ারি মামুনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মামলার বাদী লায়লা আখতার ফরহাদ (৪৮) আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের (২৫) হবু স্ত্রী। আসামি হেলাল (২৫) ও জুবায়ের (২৪) প্রিন্স মামুনের বন্ধু।
মামলার ঘটনার প্রায় তিন বছর আগে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে ফেসবুকের মাধ্যমে লায়লার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। বিয়ের তারিখ চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই মামুন বাদীর বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় একসঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। মামুন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে লায়লার কাছ থেকে টাকা নিতেন এবং প্রায়ই মদ্যপান করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতেন।
Advertisement
লায়লাকে টেনেহিঁচড়ে রাস্তা নিয়ে যান প্রিন্স মামুনমামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর বাদী ও আসামি উত্তরায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরেন। পর দিন মামুনসহ তার বন্ধুরা মদ্যপান করতে মিরপুর যাওয়ার পরিকল্পনা করলে লায়লা সেটি টের পেয়ে যান। পরে মামুনকে মদ্যপানের জন্য বাসার বাইরে যেতে নিষেধ করলে আসামি মামুন উত্তেজিত হয়ে লায়লাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন।
আরও পড়ুনপাপিয়ার নির্যাতনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রুনা লায়লালায়লা এর প্রতিবাদ করলে মামুন তার হাতে থাকা মোবাইল ফোন দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে জখম করে। এতে লায়লার মুখমণ্ডলসহ দুই চোখের নিচে-উপরে ও মাথায় জখম হয়। পরে মামুন বাদীকে টেনেহিঁচড়ে বাসা থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে যান।
হত্যার উদ্দেশে লায়লার গলা চেপে ধরেন মামুনচার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, লায়লা রাস্তায় পড়ে গেলে প্রিন্স মামুন তাকে হত্যার উদ্দেশে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। শোরগোল শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে লায়লা প্রাণে বেঁচে যান এবং মামুনসহ তার বন্ধুরা লায়লাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
আমার বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা। আসলে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাকে হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।- প্রিন্স মামুন
মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা যায়, মামলার ১ নম্বর আসামি আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুন দেশীয় ভোতা অস্ত্র দিয়ে বাদীকে সাধারণ জখম করেন। বাদীকে শ্বাসরোধের চেষ্টা এবং ভয়ভীতি ও হুমকি দেখানোয় মামুন, হেলাল ও জুবায়েরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩/৩০৭/৫০৬ ধারায় চার্জশিট দাখিল করেনি। হেলাল ও জুবায়েরের নাম-ঠিকানা সঠিক না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হলো।
মামলার এজহারে যা বলেছেন লায়লামামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রিন্স মামুনের সঙ্গে তিন বছর আগে ফেসবুকে পরিচয় হয় লায়লার। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই পরিবারের সম্মতিতে প্রিন্স মামুনের সঙ্গে লায়লার বিয়ের কথা চূড়ান্ত হয়। তখন থেকে প্রিন্স মামুন লায়লার বারিধারা ডিওএইচএসের বাসায় বাস করতে থাকেন।
এতে আরও বলা হয়, এরপর থেকে প্রিন্স মামুন বিভিন্ন অজুহাতে লায়লার কাছ থেকে টাকা নিতেন। প্রায় সময়ই মাদকসেবন করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতেন। অশ্লীল ভাষায় কথা বলতেন। এমনকি মাঝেমধ্যে লায়লাকে মারপিটও করতেন। বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবি আদায়ের চেষ্টা করতেন মামুন।
আরও পড়ুনসঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্র ছিল শাহীন-সিলিস্তির নামেগত বছরের ১১ ডিসেম্বর উত্তরায় একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বাসায় ফেরেন তারা। এসময় মামুনসহ আরও দুজন মদপানের জন্য মিরপুরে যাওয়ার পরামর্শ করেন। লায়লা তাকে নিষেধ করেন এবং বাধা দেন। এতে মামুন উত্তেজিত হয়ে লায়লাকে গালি দেন। গালি দিতে নিষেধ করলে মামুন লায়লাকে মারধর করেন ও হত্যার চেষ্টা করেন।
লায়লা রাস্তায় পড়ে গেলে প্রিন্স মামুন তাকে হত্যার উদ্দেশে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। শোরগোল শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে লায়লা প্রাণে বেঁচে যান এবং মামুনসহ তার বন্ধুরা লায়লাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে সেখান থেকে চলে যান
ক্যান্টনমেন্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লায়লা আখতার ফরহাদকে করা মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে টিকটকার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমানে দেখা যায় যে, আসামি মামুন দেশীয় ভোতা অস্ত্র দিয়ে বাদীকে সাধারণ জখম করেছে। বাদীকে শ্বাসরোধ এবং ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়ায় মামুন, হেলাল ও জুবায়েরের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩২৩/৩০৭/৫০৬ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হয়নি। হেলাল ও জুবায়েরের নাম-ঠিকানা সঠিক না পাওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করা হলো।
ক্যান্টনমেন্ট থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা শাহজাহান জাগো নিউজকে বলেন, প্রিন্স মামুনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। সোমবার আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পাশাপাশি অন্য দুই আসামিকে অব্যাহতি দেন আদালত। প্রিন্স মামুন আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
জেএ/এমকেআর/জেআইএম