কোয়ার্টজ পাউডার মানবদেহ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে ক্ষতিকারক দিকগুলো উল্লেখ করতে বলা হয়েছে।
Advertisement
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের ডিনকে প্রধান করে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন অ্যাডভোকেট মো. লুৎফুর রহমানের (রাসেল)।
মঙ্গলবার (৪ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট তৌহিদা আখি, ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন, মো. লুৎফুর রহমানের (রাসেল)। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
Advertisement
নারায়ণগঞ্জের রহিম স্টিল মিলে ‘শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুতে’ তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর সোমবার (৩ জুন) শুনানি নিয়ে আজ এই আদেশ দেন আদালত।
এর আগে ২৩ মে জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. লুৎফুর রহমানের পক্ষে ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ রিট করেন। রিটে রহিম স্টিল মিলে নিহত-আহতদের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি যৌথ তদন্ত কমিটি করে দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলের আর্জি জানানো হয়।
এতে বিবাদী করা হয়েছে- শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ইন্সপেক্টর জেনারেল), পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান, রহিম স্টিল মিলস কো. প্রা. লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফেরো এলয় কো. প্রা. লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে।
গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘রহিম স্টিল মিলে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ক্ষতিপূরণ ও বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা/ তিন সংস্থার তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি আট বছরেও’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে করা হয় রিট।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়, এক দশকে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয় রহিম স্টিল মিলে। ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে এ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ভুক্তভোগীদের কাছে ছুটে যায়। পরিবেশবাদীরাও সোচ্চার হন। শ্রমিক সংগঠনগুলো বিবৃতি দেয়। রাজধানীতে মিছিল ও মানববন্ধন করে।
‘কলকারখানা এবং প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর’ তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে তদন্ত চালায়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অতিরিক্ত জেলা জজ শরীফউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে চার সদস্যের উচ্চতর কমিটি করে তদন্ত করে। পরিবেশ অধিদপ্তর রহিম স্টিল মিলের প্রাণঘাতী কোয়ার্টজ উৎপাদনকারী কূপ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চললেও কিছু দিন যেতেই থেমে যায় সব তৎপরতা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রহিম স্টিল মিলস লিমিটেডের’ ক্রাশিং সেকশনে কাজ করে ১০ বছরে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ কিংবা মৃত্যুপথযাত্রী আরও দুই শতাধিক। প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিক হিসেবে যিনি দুই মাস কাজ করেন, তার মৃত্যু অবধারিত।
পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ‘কোয়ার্টজ পাউডার’। চুনা পাথর, বরিক পাউডার, পটাশিয়ামসহ কয়েক ধরনের কেমিক্যালের সংমিশ্রণে উৎপাদন করা হতো এ পাউডার। এটি এক সময় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হতো। পরে রহিম স্টিল মিল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই পাথর মেশিনে গুঁড়া করে কোয়ার্টজ পাউডার উৎপাদন শুরু করে। রোলিং মিলে পাথর গুঁড়া করার কোনো অনুমোদন ছিল না।
এফএইচ/জেডএইচ/জেআইএম