অর্থনীতি

এবার বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটের আকার বাড়লেও আগামী অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি কম ধরা হচ্ছে পাঁচ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদের মাধ্যমে জাতীর সামনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। এই বাজেটের আকার হবে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি ধরা হবে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বৈদেশি ঋণ পরিশোধ করা হবে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এতে নিট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়াবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

Advertisement

বাজেটে কী চান খেটে খাওয়া মানুষ? ল্যাপটপ আমদানিতে কমছে কর, খরচ বাড়বে মোবাইলে সমৃদ্ধির সোপান ধরে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট’ বাংলাদেশ

আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি, যার ৭২ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এবং ৬৪ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ঋণ। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের ব্যয় ধরা হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর-বহির্ভূত কর ধরা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ৬৪ শতাংশ অর্থ পরিচালন ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হতে পারে। পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর আগে কখনো পরিচালন ব্যয়ে এত বেশি হারে বরাদ্দ রাখা হয়নি। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে আবর্তক ব্যয় চার লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। আর দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবার মূলধন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩৭ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা।

Advertisement

আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৮১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্কিমে ব্যয় হবে পাঁচ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। এডিপি-বহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হচ্ছে সাত হাজার ৬২৭ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (এডিপি-বহির্ভূত) ও স্থানান্তরে দুই হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।

আরও পড়ুন

বাজেট অধিবেশন বসছে বুধবার অর্থনীতি সমিতির ১১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব চিনি-চলচ্চিত্রে কমবে লোকসান, বিলুপ্ত পাট করপোরেশনে আসবে মুনাফা

আগামী অর্থবছরের বাজেটে অনুদান ছাড়া সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। তবে অনুদানসহ সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে দুই লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধারা হচ্ছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেখানে অনুদান ছাড়া সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয় দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্র ধরা হয় এক লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বিপরীতে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়। তাতে নিট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ দুই হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

অপরদিকে অভ্যন্তরীণ ঋণের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয় এক হাজার ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা এবং ব্যাংকবহির্ভূত ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যামাত্রা ধরা হয়। আর সঞ্চয়পত্র থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে বৈদেশি ঋণ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নেওয়া হবে। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অর্থ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয় চলতি অর্থবছরের চেয়ে বেশি হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ধরা হয় এক লাখ ১৭৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এর পরিমাণ বাড়িয়ে এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেওয়া হতে পারে বিদ্যুৎ খাতে। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে ৪২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বিদ্যুতের জন্য ভর্তুকি ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি বাড়তে পারে সাত হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ভর্তুকি ধরা হতে পারে সাত হাজার কোটি টাকা, কৃষিতে ২৫ হাজার কোটি টাকা, খাদ্যে সাত হাজার কোটি টাকা এবং রেমিট্যান্সের জন্য ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা ভর্তুকি ধরা হতে পারে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে এক লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে প্রায় পাঁচ লাখ। মাথাপিছু ভাতা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অবশ্য প্রবীণ নাগরিক এবং বিধবা, পরিত্যক্তা বা নিঃস্ব নারী সুবিধাভোগীদের ভাতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি প্রতি মাসে ৬০০ টাকা এবং বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা বা দুস্থ নারী মাসে ৫৫০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হতে পারে।

এমএএস/এমকেআর/জেআইএম/ইএ