স্বাস্থ্য

যক্ষ্মা নির্মূলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হবে

যক্ষ্মা একটি প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য রোগ। তবুও এই রোগটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশে প্রায় তিন লাখ ৭৯ হাজার মানুষ প্রতিবছর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। আর প্রতিবছর মারা যান ৪২ হাজার মানুষ। এছাড়া বাংলাদেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মাও সমস্যা সৃষ্টি করছে।

Advertisement

এ অবস্থায় বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্ণয় এবং চিকিৎসার আওতা বাড়াতে পাবলিক-প্রাইভেট মিক্স (পিপিএম) অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা জানান, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে আরও বেশি জনগোষ্ঠীর কাছে সময়মতো ও কার্যকর যক্ষ্মা চিকিৎসা পৌঁছানোর সুযোগ আছে। পিপিএম কৌশলের মাধ্যমে সবাইকে উন্নত যক্ষ্মা সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে বাংলাদেশে।

প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বক্তারা জানান, সরকারি-বেসরকারি সেক্টর একসঙ্গে কাজ করা ছাড়া কীভাবে ২০৩০ সালের মাঝে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে?

Advertisement

মঙ্গলবার (৪ জুন) মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইসিডিডিআর,বি) যক্ষ্মা চিকিৎসা ও নির্মূলে পলিসি অ্যাডভোকেসি এবং বেসরকারিখাতের যুক্তকরণ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য দেওয়া হয়। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) ও দ্য স্টপ টিবি পার্টনারশিপের সহযোগিতায় এ সভার আয়োজন হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে সরকারিভাবে ৩৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৬৫ জেলা সদর হাসপাতাল, ৪২৯ উপজেলা হেলথ কেয়ার, ১ হাজার ৪৫৯ ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, ১৪ হাজার ৭০০ কমিউনিটি ক্লিনিক দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে থাকে।

অন্যদিকে দেশের ৬০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। আর ৮৪ শতাংশ মানুষ বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেন। দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ৬৭ মেডিকেল কলেজ, ৪ হাজার ২৮০ হাসপাতাল, ৯ হাজার ক্লিনিক ও ৬০ হাজার স্বতন্ত্র চিকিৎসক সেবা ও ৫ লাখ ফার্মেসি রয়েছে। এছাড়া কাজ করে চার হাজার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি’র বক্তারা জানান, দেশে এখনো ১৮ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হচ্ছে না। এছাড়া দেশে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগীর পরিমাণও বাড়ছে। অন্যদিকে ২০৩০ সালে যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বড় পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে এই সংখ্যক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে করে যক্ষ্মা নির্মূলে কাজ করতে পারলে ২০৩০ সালের মধ্যে সরকারের যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে।

Advertisement

ইউএসআইডি বাংলাদেশের ওপিএইচএনের ডেপুটি অফিস ডিরেক্টর মিরান্ডা বেকম্যান বলেন, বাংলাদেশে শুধুমাত্র সরকারিভাবে সব স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। যক্ষ্মা একটি ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় যেই শ্বাস নেয় সবাই যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারে। বাংলাদেশে এখনো যক্ষ্মা রোগের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমি সেই ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কিন্তু এখনো কেন এটি সম্ভব হচ্ছে না তা বুঝা উচিৎ। যক্ষ্মা নির্মূলের লক্ষ্যে কাজ করলেও এখনো ৩০ ভাগের বেশি রোগীদের আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। তবে আমাদের শনাক্তকরণ রোগীদের ক্ষেত্রে ৯৮ শতাংশ নিরাময় হচ্ছে। এই অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শুধু লাভের কথা চিন্তা না করে এগিয়ে আসা উচিত।

এএএম/জেডএইচ/এমএস