আইন-আদালত

সঞ্জীবা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্র ছিল শাহীন-সিলিস্তির নামে

কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনসের এক আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর কক্ষে খুন হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। সঞ্জীবা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্র ছিল ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন ও সিলিস্তি রহমানের নামে। এমপি আনার হত্যা ও মরদেহ গুমের সময় সিলিস্তি রহমান ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন। এরপর তিনি হত্যা ও মরদেহ গুমের সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন।

Advertisement

সোমবার (৩ জুন) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন আসামি সিলিস্তি রহমানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে সিলিস্তি এসব কথা বলেছেন বলে সূত্রে জানা যায়। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

জবানবন্দির আবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সিলিস্তি রহমানের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সিলিস্তি জানিয়েছে, তিনি আনোয়ারুল আজীম আনার অপহরণের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের কথিত বান্ধবী। ভিকটিমকে হত্যা ও মরদেহ গুমের সমন্বয়ক শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে গত ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যান। সেখানে শাহীনের ভাড়া বাসায় ওঠেন। বাসাটি শাহীন ও সিলিস্তির নামে চুক্তিপত্র ছিল। হত্যা ও মরদেহ গুমের সময় তিনি বাসাতেই ছিলেন।

আরও পড়ুনএমপি আনার হত্যা: দায় স্বীকার করে সিলিস্তির জবানবন্দিএমপি আনোয়ারুলের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল শিমুলের

এরপর গত ১৫ মে বাংলাদেশে চলে আসেন। ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই তিনি ওই বাসাতে উঠেছিলেন মর্মে স্বীকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা সম্পর্কে ধারাবাহিক বর্ণনা দেন সিলিস্তি।

Advertisement

এ মামলায় গত শুক্রবার (৩১ মে) কয়েকজন আসামির প্রথম দফা রিমান্ড শেষ হয়। তারা হলেন- সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। ওই তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আরও আটদিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে গত ২৪ মে দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিন আসামিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি প্রত্যেকের আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এমপি আনারকে কলকাতায় রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন সিলিস্তিকলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে খুন হয় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। রহস্যে ঘেরা এ হত্যার পর একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশে গ্রেফতার তিন আসামির মধ্যে আলোচিত নাম সিলিস্তি রহমান। সিলিস্তি আগে থেকেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসে উপস্থিত ছিলেন। হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এমপি আনারকে রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। মামলার রিমান্ড আবেদনে এমন তথ্যই উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান।

আরও পড়ুনএমপি আনারকে কলকাতায় রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন সিলিস্তিখুলনার চরমপন্থি নেতা শিমুল যেভাবে হয়ে ওঠেন আমানুল্লাহ

শুক্রবার (৩১ মে) দুপুর আট দিনের রিমান্ড শেষে সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমানকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় মামলার সুষ্ঠু-তদন্তের জন্য তাদের ফের আটদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড আবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

Advertisement

আমি তো সাক্ষী দিতে এসেছি, কিছুই জানি না: সিলিস্তিগত ২৪ মে সিলিস্তিসহ তিন আসামির আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিন রিমান্ড শুনানির আগে আদালতের হাজতখানা থেকে তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সিলিস্তি রহমান বলেন, আমাকে এখানে কেন আনা হয়েছে জানতে চাই। আমাকে বলা হয়েছে সাক্ষী দিয়ে চলে যাবো। আমিতো সাক্ষী দিতে এসেছি। কিছু জানি না। তবে অপর দুই আসামি কোনো কথা বলেনি। আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবীও ছিল না।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আনোয়ারুল আজীম।

আরও পড়ুনআনারের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল শিমুলেরএমপি আনার হত্যা: তিন আসামি ৮ দিনের রিমান্ডে

বাড়ি থেকে বেরোনোর পাঁচদিন পর গত ১৮ মে বরাহনগর থানায় আনোয়ারুল আজীম নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলেনি তিনবারের এ সংসদ সদস্যের। এরপর ২২ মে হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনমের একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে খুন হয়েছেন আনোয়ারুল আজীম। ঘরের ভেতর পাওয়া গেছে রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ।

গত ২২ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। মামলাটি করা হয় দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩৪ ধারায়।

মামলার বিষয়ে ওইদিন শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মু. আহাদ আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ করা হয়নি। সবাইকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এখন তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

আরও পড়ুনযেভাবে এমপি আনারের খণ্ডিত লাশ নিয়ে বের হন আমানুল্লাহ-জিহাদ

মামলার পর হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও সিলিস্তি রহমান। গ্রেফতাররা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এমনকি মরদেহের খোঁজ যেন না মেলে সেজন্য গ্রেফতাররা একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

জেএ/এমএএইচ/কেএসআর