জাতীয়

রিমালের তাণ্ডবে দীর্ঘ ক্ষতির মুখে দক্ষিণাঞ্চল

শুরুতে ভয়ংকর রূপ ধারণ না করলেও এবার উপকূলে দীর্ঘ সময় তাণ্ডব চালায় ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ২০০৯ সালে আইলা তাণ্ডব চালায় প্রায় ৩০ ঘণ্টা। রিমাল সেখানে প্রায় ৪০ ঘণ্টা প্রভাব বিস্তার করায় আইলা কিংবা আম্ফানের চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে উপকূলবাসীর। বিশেষ করে মাছের ঘের ও কৃষিজমিতে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। রিমালের ক্ষত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে দীর্ঘ সময় টানতে হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

গত ২৭ মে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালে উপকূলীয় এলাকার ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে, আর আংশিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘরবাড়ি। পরবর্তীসময়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, ১৮ জনের মৃত্যুর খবর। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ২০ জেলায় ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কৃষিতে ক্ষতিকৃষি বিভাগের সামগ্রিক কৃষির ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে শুধু উপকূলীয় বরিশাল অঞ্চলেই ৫০৮ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় এক লাখ ৭৩ হাজার ৪৯১ জন কৃষক। প্রাথমিকভাবে ৪৮টি জেলার কৃষিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়েছে। উল্লেখযোগ্য হারে আক্রান্ত হয়েছে উপকূলীয় বরিশাল অঞ্চলের ছয় জেলা এবং খুলনা অঞ্চলের চারটি জেলা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার।

শুধু ত্রাণ দিয়ে তো জনগণের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে এসব কিছু জানিয়ে আসছি। দেখা যাক সরকার কীভাবে বিবেচনা করছে। আমরা মনে করি স্থায়ী বাঁধ দিতে পারলে কিছুটা সমাধান হবে। এতে কৃষি অর্থনীতির ক্ষতি কমবে।- খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন

Advertisement

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ হওয়ায় প্রতি বছর উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করতে হয়। যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় মানুষ। এসব দুর্যোগে প্রাণহানির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা, যা পুষিয়ে নিতে সময় লাগে বছরের পর বছর। সুন্দরবন ঢাল হয়ে ঠেকানোর পরও যা ক্ষয়ক্ষতি হয় সেটা কম নয়।

সবশেষ ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলাবদ্ধতা ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। এতে দীর্ঘ ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগে সিডর, আইলা, আম্ফানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলীয় অঞ্চলে তীব্র সুপেয় পানির সংকট, পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই, কৃষিজমিতে লবণাক্ততার প্রভাব, জলাবদ্ধতা দীর্ঘ সময় ভুগিয়েছে। রিমাল পরবর্তীসময়েও এসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এসব সংকট সমাধানে এগিয়ে আসে। দীর্ঘমেয়াদি এসব সংকট কাটাতে টেকসই বেড়িবাঁধের ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলার সমন্বয়ক মান্নু রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় এলেই এ অঞ্চলের মানুষের ক্ষতির কোনো শেষ থাকে না। লাখ লাখ টাকার ফসল, ফসলি জমি নষ্ট হয়। কিছু গ্রাম আছে পানিবন্দি অবস্থায় তিন থেকে চারদিন কাটাতে হয়। এখনো উপজেলাজুড়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এদিকের খালগুলো দখল হওয়ায় পানি বের হচ্ছে না।’

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পটুয়াখালীঘূর্ণিঝড় রিমালের গতিপথ ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার ওপর দিয়ে। ফলে এই জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা বেশি। নিহত হয়েছেন তিনজন। ক্ষতিগ্রস্ত তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ।

Advertisement

এছাড়া বেড়িবাঁধ, মৎস্য, কৃষি, শিক্ষা, সড়ক ও বিদ্যুৎখাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ২৬ কোটি ২১ লাখ টাকার। মৎস্যখাতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। এছাড়া বেড়িবাঁধে ২০ কোটি, বনাঞ্চলে সাত কোটি ২৩ লাখ, তিন কোটি ৬ লাখ টাকার গভীর নলকূপ ও আট কোটি টাকার স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ক্ষতি হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন দেবনাথ এ তথ্য জানান।

কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পটুয়াখালী। জেলার অনেক জায়গায় এখনো কৃষিজমিতে পানি জমে আছে। কয়েক হাজার কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন। বিশেষ করে রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে বেশি।

কলাপাড়ার বাসিন্দা নাঈমুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন মুগডাল, বাদাম, মরিচের সময়। ঝড়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরবাড়ির চারপাশ থেকে পানি নামলেও ফসলি জমি এখনো পানির নিচে। ফসলি জমি আবার উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। ১০ বছর কৃষিকাজ করি, দুর্যোগের কারণে কখনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।’

আরও পড়ুনঘূর্ণিঝড় রিমালে ২০ জেলায় ৬৮৮০ কোটি টাকার ক্ষতিরিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড সুন্দরবনঘূর্ণিঝড় রিমাল/সুন্দরবনের কটকা থেকে ৩০ মৃত হরিণ উদ্ধারঘূর্ণিঝড় রিমালে আম চাষিদের মাথায় হাত

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নূর কুতুবুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকাতে পারবো না। এ অঞ্চলের এই দুর্ভোগের পরিপূর্ণ সমাধান হচ্ছে না। ঘূর্ণিঝড় যদি ২০ বছর আগে হতো অনেক ক্ষতি হতো। এখন ক্ষতি অনেকটা কমেছে। এই যে এত বড় একটি ঘূর্ণিঝড় হলো, পটুয়াখালীতে সাড়ে ১৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত। তার ভিতরে মারা গেলো মাত্র তিনজন। এখন আমরা বাঁধ স্থায়ীকরণে মনোযোগ দিচ্ছি।’

এখনো অনেক বাড়িতে জলাবদ্ধতা। লবণাক্ততার আগ্রাসনের কারণে কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মানুষ এখন কাজের সন্ধানে শহরে চলে আসছে। জীবিকার কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে স্থানান্তরিত হচ্ছে।- উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র

পুরো দক্ষিণাঞ্চল ক্ষতিগ্রস্তদক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢোকে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জীবন-জীবিকা। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড়ের এমন তাণ্ডবে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হচ্ছে প্রান্তিক মানুষ। যার প্রভাবও দীর্ঘমেয়াদি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হয় ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার। সে তুলনায় এ এলাকার নদীর যে বাঁধ সেগুলার উচ্চতা কম। সাগর ও নদীর পানি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সহজেই বাঁধ উপচে পানি চলে আসে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ সংস্কার বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নিচ্ছে না।

বরিশালের উজিরপুরের বাসিন্দা মাহতাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মাছের ঘের ও পানের বরজ নষ্ট হয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে পুনরায় ব্যবসা করার মতো অবস্থা নেই।’

একই পরিস্থিতি দেশের খুলনা, বাগেরহাট, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, নোয়াখালীর হাতিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। এসব এলাকার অনেক ফসলি জমি এখনো পানির নিচে।

খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতি বছর যে ক্ষতি হচ্ছে, জলোচ্ছ্বাস তো প্রাকৃতিক বিষয়। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। শুধু ত্রাণ দিয়ে তো জনগণের ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব নয়। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে এসব কিছু জানিয়ে আসছি। দেখা যাক সরকার কীভাবে বিবেচনা করছে। আমরা মনে করি স্থায়ী বাঁধ দিতে পারলে কিছুটা সমাধান হবে। এতে কৃষি অর্থনীতির ক্ষতি কমবে।’

বাগেরহাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জায়গা প্লাবিত হয়েছে মোড়েলগঞ্জ উপজেলায়। এ উপজেলায় তিন থেকে পাঁচ ফুটের জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ফসলি জমির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত এ এলাকার অসংখ্য মাছের ঘের। এলাকার চাষিরা জানান, এত দীর্ঘস্থায়ী জলোচ্ছ্বাস আগে কখনো দেখেননি। মাছ আর কৃষি তো শেষ।

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের বাসিন্দা স্থানীয় কৃষক শরিফ বলেন, ‘তিনদিন পর ফসলের ক্ষেত থেকে পানি নেমেছে। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দুদিনও জোয়ারের পানিতে ডুবেছিল ফসলের মাঠ। এই তিন নদী থেকে আসা জলোচ্ছ্বাসের পানি বেশি ক্ষতি করেছে। আমাদের দুই ভাইয়ের বড় একটা মাছের ঘেরও নষ্ট হয়েছে।’

উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই ঘূর্ণিঝড়ে জীবনহানি বেশি ঘটেনি। কিন্তু এর ক্ষতি অবর্ণনীয়। একটি পরিবারের একটি মাত্র থাকার ঘরও চলে গেছে। যাদের একটি গরু আছে সেটিও গেছে মারা। একমাত্র জীবিকার সম্বল যার মাছের ঘের, সেটি নিয়ে গেছে ভাসিয়ে। এমন হাজার হাজার পরিবার আমাদের অঞ্চলে আছে। এদের ক্ষতি অনুমান করা যাবে? ওদের জীবন-জীবিকা বলতে কিছু নেই। সব হারিয়ে শূন্য থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অনেক দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এই ক্ষতিগুলো এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক বিষয়ের ওপর ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে।’

তিনি বলেন, ‘এখনো অনেক বাড়িতে জলাবদ্ধতা। লবণাক্ততার আগ্রাসনের কারণে কৃষিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মানুষ এখন কাজের সন্ধানে শহরে চলে আসছে। জীবিকার কোনো ব্যবস্থা না করতে পেরে স্থানান্তরিত হচ্ছে।’

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১০ বছর স্থানীয়রা একটা কথাই বলছেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না, টেকসই বাঁধ চাই।’ গত ১০ বছরে কি টেকসই বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়েছে? প্রশাসন তো বলে বাঁধ ইঁদুরে খেয়ে ফেলে। এখন ১৫ ফুট উচ্চতায় বাঁধ করা অসম্ভব নয়। বাঁধ করলেও সেগুলোর পাড়ে গাছ লাগিয়ে টেকসই করা যায়। কিন্তু তারা সেটা না করে দুর্নীতি করে।’

‘এখন দুর্যোগ হলো কারও শোক, কারও উৎসব। যখন বাঁধের প্রকল্প করা হয় তখন স্থানীয় মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা টেন্ডার নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে। এ কাজগুলোর কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। পরবর্তীসময়ে আরও দুর্যোগ আসবে কিন্তু দুর্নীতির কারণে এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা কষ্ট। আমি মনে করি, এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ সবচেয়ে বড় বাধা দুর্নীতি।’

সুন্দরবনজুড়ে ক্ষত

রিমালসহ যে কোনো ঝড়ের তাণ্ডব প্রতি বছর ঠেকায় সুন্দরবন। ঠেকাতে গিয়ে বন হয় ক্ষতবিক্ষত। ক্ষত সেরে ওঠার আগেই আবার আঘাত হানে কোনো কোনো ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ। এবার রিমালের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় সুন্দরবন। এতে মারা যায় শতাধিক প্রাণী। গাছগাছালির ক্ষতি তো আছেই। বন বিভাগও নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বনবিভাগের বিভিন্ন বন অফিস, টহল বোট, টিনের চালা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। এসময় জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কটকা অভয়ারণ্যের অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কচিখালী, বগিসহ বিভিন্ন বন অফিসসহ ২৫টি টহল ফাঁড়ির টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড়।

সিডর ও আইলার পর দেশে আঘাত হানা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে বরিশাল বিভাগে সাড়ে ১৭ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেখানে রিমালে ক্ষতির শিকার ২২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরে সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা বলা হয় তিন হাজার ৩৬৩ জন। তবে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার বলে জানায় রেড ক্রিসেন্ট।

সিডরে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণ পানি ঢোকায় তাৎক্ষণিকভাবে চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়া জমির পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭৮৭ হেক্টর। মৃত্যু ঘটে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬০টি হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর। জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাওয়া এবং বিধ্বস্ত হওয়া সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ৮ হাজার ৭৫ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার তথ্য অনুযায়ী, সাইক্লোন আইলা যখন আঘাত হানে ওই সময় নিহত হন ২৫ জন, এতে ক্ষতি ছিল ২২শ কোটি টাকা। ২০২০ সালে আঘাত হানা সাইক্লোন আম্ফানে ক্ষতি হয় প্রায় ১১শ কোটি টাকা। আর রিমালে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।

ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা সবচেয়ে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ। গত ২০ বছর থেকে আইলা, আম্ফান, ইয়াসসহ একের পর এক দুর্যোগের কারণে ওই অঞ্চলে জীবন-জীবিকার ঝুঁকি বেড়েছে। আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। অভিভাসন হয়ে শহরগুলোতে চাপ বাড়ছে। এতে দারিদ্র্যের সংখ্যা বাড়ছে। এর প্রভাব পুরো দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে।’

এই পরিবেশবিদ বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলা এ এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমন্বিত প্রকল্পের কাজ হচ্ছে না। তাই উপকূলের উন্নয়নের জন্য সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন পরিকল্পনা নিতে হবে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।’

এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার যে দুর্যোগটা হলো এটা ক্যাটাগরি-৪। দশ নম্বর বিপদ সংকেত ছিল। শক্তি সঞ্চয় করে অতিবৃষ্টি হয়েছে। এতে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে, গ্রীষ্মকালীন সবজি নষ্ট হয়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো বন্ধ করা যাবে না। আমরা যেটা করতে পারি সেটা হলো অভিযোজন। আর দুর্যোগ হয়ে যাওয়ার পর যেটা করি সেটা হলো মিটিগেশন। অভিযোজনের কারণে আমরা এখন প্রো-অ্যাক্টিভ অবস্থায় আছি। বিভিন্ন দুর্যোগে যে পরিমাণ ক্ষতি হতো, এখন সেই ক্ষতি আগের তুলনায় অনেক কমেছে।’

আরএএস/এএসএ/জেআইএম