দেশজুড়ে

রিমালের তাণ্ডবে কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে লিচু

লিচু উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে এখন বোম্বাই লিচুর ভরা মৌসুম। কিন্তু লিচু বাজারে ওঠার ঠিক আগমুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সর্বনাশ হয়েছে চাষিদের। রিমালের তাণ্ডবে লিচু গাছের এক ডাল আরেক ডালে আঘাত লেগে অধিকাংশ লিচু ঝরে গেছে। এছাড়া লিচুর খোসায় আঘাত লেগে কালচে হয়ে গেছে। এখন পুরোপুরি পাকার পর এসব লিচু ফেটে যাচ্ছে।

Advertisement

এছাড়াও এবার প্রায় মাসজুড়ে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে বেশিরভাগ লিচুর চামড়া পাতলা ও কালচে হয়েছিল। এবার হঠাৎ টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে লিচুর ভেতরের মাশ বেড়ে তা ফেটে যাচ্ছে এবং গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। লিচুর বাজারে গেলেই হাজার হাজার কেজি ফাটা ও ঝরে পড়া লিচুতে রিমালের ক্ষতচিহ্ন চোখে পড়ছে।

সোমবার (৩ জুন) ঈশ্বরদীর সর্ববৃহৎ লিচুর হাট জয়নগরের শিমুলতলায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা হাজার হাজার লিচু বেচাকেনার জন্য ডালায় সাজিয়ে রেখেছেন। এসব লিচুর বেশিরভাগই কালচে ফাটা ও ঝরে পড়া। রিমালের আঘাতে বোটা নরম হয়ে যাওয়া লিচু গাছ থেকে ঝরে পড়ছে এবং ফেটে যাচ্ছে। এসব লিচু কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি ঝরে পড়া লিচু ডালাই ভরে চাষিরা বাজারে তুলছেন। প্রতি কেজি ঝরা লিচু ২০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। অতীতে কোনোদিন এতো ঝরে পড়া লিচু বাজারে দেখা যায়নি।

শিমুলতলা লিচুর হাটে ঝরে পড়া ১০০ কেজি লিচু নিয়ে এসেছেন জয়নগর গ্রামের চাষি আনিসুল হক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বাগানের ৪০টি গাছের লিচু সংগ্রহ করে পাইকারের কাছে বিক্রি করেছি। লিচু গাছ থেকে সংগ্রহের পর ১০০-১২০ কেজি ফাটা ও কালচে লিচু বের হয়েছে। এসব লিচু কেজি দরে বিক্রির জন্য বাজারে এনেছি। ভালো থাকলে এসব লিচু ২৫-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এখন সর্বোচ্চ ৫-৬ হাজার টাকায় বিক্রি হতে পারে।

Advertisement

উপজেলার মানিকনগর গ্রামের লিচুচাষি রমজান আলী বলেন, লিচুর গুটি আসার পর থেকেই প্রায় দেড় মাস একটানা তাপপ্রবাহ ছিল। সেসময় গাছের অধিকাংশ গুটি ঝরে পড়ে। এরপর লিচু পাকার শুরুতেই ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হলো যা অপূরণীয়। শতকরা ৪০-৫০ ভাগ পাকা লিচু রিমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঝরে পড়া লিচু কেজি দরে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া চামড়া পুড়ে যাওয়া ফাটা লিচু বাধ্য হয়ে ফেলে দিতে হচ্ছে।

লিচুচাষে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃষক আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে এমনিতেই লিচুর ওপরের অংশ কিছুটা কালচে হয়ে গিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে টানা দুইদিন বৃষ্টি হওয়ায় হঠাৎ লিচুরের ভেতরের মাশ বেড়ে গিয়ে তা ফেটে যাচ্ছে। ফলে বাগানের ৪০-৫০ ভাগ লিচু ফেটে গেছে এবং ঝড়ে লিচুর বোটা নরম হয়ে যাওয়ায় তা ঝরে পড়েছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার ঈশ্বরদীতে লিচু উৎপাদনে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা ব্যাহত হয়েছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ৩ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এবার ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ঈশ্বরদী উপজেলায় এবছর প্রথম থেকে আবহাওয়াজনিত জটিলতায় পড়ে লিচু। মুকুলের শুরুতেই তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। তখন কৃষকদের সেচসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। যাতে তারা উৎপাদন ধরে রাখতে পারে। লিচু যখন বাজারজাতকরণ পর্যায়ে আসে ঠিক তখনই ঘূর্ণিঝড় রিমালে লিচু ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রিমাল পরবর্তীতে উৎপাদন ধরে রাখতে কৃষকদের নানান পরামর্শ দিয়েছি।

এফএ/এমএস

Advertisement