খেলাধুলা

ক্রিকেটে মুস্তাফিজের এক বছর

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের পর থেকেই বল হাতে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিচ্ছে বাংলাদেশের বোলিং বিস্ময় মুস্তাফিজুর রহমান। অফ কার্টার, অন কার্টারের সঙ্গে স্লোয়ার, ইয়র্কার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশ দলের নতুন পেস সেনসেশন। সাতক্ষীরার অজ-পাড়া গাঁ থেকে উঠে আসা ২১ বছর বয়সী এই পেসারের হাতের তালুতে যে কী আছে, এখন রীতিমত গবেষণার বিষয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। সেদিন আফ্রিদি-হাফিজদের নাকানি-চুবানি খাইয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আফ্রিদিরমত গ্রেট ক্রিকেটারের উইকেট দিয়েই মুস্তাফিজের শিকার শুরু। অফ কার্টার, অন কার্টার- যেন কার্টারের সমারোহ তার হাতে। সঙ্গে স্লোয়ার, ইয়র্কার তো আছেই। ওয়াসিম আকরাম যেমন ওভারের ৬টি বল ৬ রকম করতে পারতেন, মুস্তাফিজও তেমনি। তার কার্টার আর স্লোয়ারে দিকভ্রান্ত বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যান। জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংকে মুস্তাফিজকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘প্রতিপক্ষ তাকে কিভাবে রিড করবে? সে তো এক এক ম্যাচে এক একটি তীর নিয়ে হাজির হন!’ওয়ানডে অনেকটা রূপকথার মতই অভিষেক হয়েছিল মুস্তাফিজ নামক বাংলাদেশের ক্রিকেট নক্ষত্রের। তিন পেসার নিয়ে খেলতে নামা যেখানে বিস্ময় ছিল বাংলাদেশের জন্য, সেখানে প্রতিশোধের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে চার পেসার নিয়ে খেলতে নামলেন মাশরাফি! সেদিন বাংলাদেশের একাদশ দেখে বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। একাদশে চার পেসার দেখে সেদিন যারা সমালোচনার তূনে ধার দিচ্ছিলেন, ম্যাচ শেষেই তারাই করেছেন প্রসংশা।ভারতীয় শিবিরকে স্তব্ধ করে দিয়ে মুস্তাফিজ একাই তুলে নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। ম্যাচের মাঝপথে ভারতের মহেন্দ্র সিং ধোনি কাঁধ দিয়ে ধাক্কা দিয়েছিলেন মুস্তাফিজকে। যে কারণে মাঠের বাইরেই চলে যেতে হয়েছিল তাকে। পরে যখন ফিরলেন, তখন একাই এক ধাক্কায় পুরো ভারতকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলে দিলেন। পরের ম্যাচে আরও একধাপ এগিয়ে। ছয় উইকেট নিয়ে প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বাদ এনে দেন বাংলাদেশকে। বিষাক্ত কাটার দিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।টেস্ট অভিষেকেও দারুণ উজ্জ্বল মুস্তাফিজ। চার উইকেট পেলেও মূল্যবান সময়ে ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। এক ওভারে পরপর চার বলে নিয়েছেন তিন উইকেট। হাশিম আমলা, ডু প্লেসিসের উইকেট নেয়ার পর কুইন্টন ডি ককের স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেয়ার দ্যৃশ এখনও সবার চোখে ভাসে। সে সঙ্গে রেকর্ড বুকের ক্ষুদ্র পাতায় বড় করেই নাম লিখে নিলেন দেশ সেরা এই পেসার। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সংস্করণেই অভিষেক ম্যাচে সেরা হওয়া একমাত্র খেলোয়াড় হলেন মুস্তাফিজ।প্রতিভার স্বীকৃতি পেতে তখনও বুঝি বাকি ছিল! যেটা আসলো বছরের শেষ সময়ে। আইসিসির বর্ষসেরা একাদশে তালিকায় প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ঠাঁই পেয়ে গেলেন তিনি। যদিও আইসিসির বর্ষসেরা পুরস্কারের তালিকায় উদীয়মান ক্রিকেটারের পুরস্কার পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জশ হ্যাজালউড। তবে আইসিসি না দিলেও ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএন-ক্রিকইনফোর বর্ষসেরা অভিষিক্ত ক্রিকেটারের পুরস্কার জিতলেন মুস্তাফিজুর রহমান। দেশের মাটিতে সাফল্যের পর বিদেশের মাটিতেও ধারাবাহিক মুস্তাফিজ। ইনজুরির কারণে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে অংশ নিতে না পারলেও  শেষ তিন ম্যাচে নয় উইকেট নিয়ে নিজের জাত ঠিকই চেনালেন টাইগার এই বোলার।এরই ধারাবাহিকতায় নাম লেখান পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) এবং ভারতের জনপ্রিয় আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নবম আসরে। এরপর মুস্তাফিজের অর্জনের মুকুটে আরেকটি পালক হয়ে যুক্ত হয় আর তা ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট। মুস্তাফিজ এবার নাম লেখালেন ক্রিকেটার স্বপ্নের গন্তব্য ইংলিশ কাউন্টিতে। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইংলিশ ক্লাব সাসেক্সের জার্সি গায়ে খেলবেন টাইগার এই পেস সেনসেশন। বর্তমানে জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগ আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দারাবাদের হয়ে মাঠ মাতাচ্ছেন টাইগার এই বোলার। এরই মধ্যে হয়ে উঠেছেন দলে অন্যতম সেরা তারকা। চার ম্যাচে ৬.৬২ গড়ে তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। এমআর/এবিএস

Advertisement