জাতীয়

লকারে ছিল ১৫০ ভরি সোনা, গায়েব ‘মিথ্যা’ দাবি ব্যাংক ম্যানেজারের

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চট্টগ্রামের চকবাজার শাখার লকার থেকে স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনাকে ‘মিথ্যা অভিযোগ’ বলে দাবি করেছেন ব্যাংকটির ম্যানেজার শফিকুল মওলা।

Advertisement

রোববার (২ জুন) দুপুরে চকবাজারের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ দাবি করেন।

শফিকুল মওলা বলেন, গত ২৯ মে এক গ্রাহক অভিযোগ করেন তার লকার থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মিসিং। এরপর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহককে বলেছি এক্ষেত্রে আমাদের কোনো কিছু করার নেই। উনি কী রেখেছেন উনি জানেন। আমাদের মনে হচ্ছে উনি মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। আমরা লকার সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সব সার্কুলার মেনেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা মৌখিকভাবে অভিযোগ হিসেবে নিয়েছি এটি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আমরা তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছি। অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহককে জানানোর আশ্বাস দিয়েছি।

Advertisement

আরও পড়ুন

বগুড়ায় আবারো ব্যাংকের ভল্ট লুটের চেষ্টা ব্যাংকের ভল্ট খুলতে না পেরে ম্যানেজারকে তুলে নিয়ে যায় কেএনএফ

‘লকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে শুধু ডিক্লারেশন নেই যে, দাহ্য পদার্থ কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র রাখা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী বাকি কোনো পণ্যের ডিক্লারেশন নেওয়ার নিয়ম নেই। আমাদের জানারও সুযোগ নেই কী পণ্য এবং কী পরিমাণ রাখা হয়েছে। ওই গ্রাহক সবশেষ গত ৮ এপ্রিল লকারটি যাচাই করেছেন’- বলেন ওই ব্যাংক ম্যানেজার।

এদিকে, রোকেয়া বারী নামে ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, লকারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। সেটি দিয়েই স্বর্ণ চুরি করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংক ম্যানেজার শফিকুল মওলা বলেন, আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার সব দালিলিক কার্যক্রম সম্পাদন করেন। সব চেম্বারের একটা মাস্টার কি থাকে, সেটি হোলে (চাবি প্রবেশের স্থান) দিলেই আমাদের দিকে থেকে লকার আনলক হয়। এরপর গ্রাহক তার চাবি দিয়ে লকার খোলেন। আমাদের অফিসারও সেখানে থাকেন না। গ্রাহক যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে লকারটি তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে বন্ধ করে বেরিয়ে যান। ওই চাবির কোনো ডুপ্লিকেট নেই। এরপর আমাদের অফিসারকে ইনফর্ম করলে অফিসার গিয়ে বাইরের দরজা বন্ধ করেন।

Advertisement

আরও পড়ুন

ইসলামী ব্যাংকের লকার থেকে সোনা চুরির অভিযোগ

তিনি বলেন, লকারের পর্যাপ্ত সিকিউরিটি আমরা নিয়ে থাকি। যেন চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে। এখানে চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। তারপরও আমাদের দীর্ঘদিনের গ্রাহক যেহেতু অভিযোগ করেছেন, আমরা বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়ে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, আসলে কী ঘটেছে।

জানা গেছে, নগরের বেভারলি হিল এলাকার বাসিন্দা ও ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক রোকেয়া বারী ব্যাংকের একটি লকারে প্রায় ১৪৯ ভরি স্বর্ণের গহনা রেখেছিলেন। ২৯ মে লকার ইনচার্জের সঙ্গে লকার রুমে প্রবেশ করে তিনি দেখতে পান, তার লকারটি খোলা এবং সেখানে কোনো গহনা নেই।

এরপর ঘটনাটি জানাজানি হলেও এখন পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বা গ্রাহক কেউই থানায় মামলা দায়ের করেননি।

অভিযোগকারী নারী রোকেয়া আক্তার বারী জানান, তিনি গত ১৭ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংক চকবাজার শাখায় লকার ব্যবহার এবং অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে আসছিলেন। গত ২৯ মে দুপুর দেড়টায় ইসলামী ব্যাংকের চকবাজার শাখায় কিছু স্বর্ণালঙ্কার আনার জন্য যান তিনি। লকারের দায়িত্বে থাকা অফিসার তাকে নিয়ে লকার খুলতে গেলে তার বরাদ্দকৃত লকারটি খোলা দেখতে পান।

তিনি বলেন, ‘লকারে চুড়ি, জড়োয়া সেট, গলার সেট, গলার চেইন, আংটি, কানের দুলসহ ১৪৯ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল। লকার খোলার পর দেখা যায়, সেখানে মাত্র ১০ থেকে ১১ ভরি স্বর্ণ অবশিষ্ট আছে। খোয়া যাওয়া স্বর্ণালঙ্কারের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। স্বর্ণ চুরির ঘটনায় ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন বলে মনে করছি।’

আরও পড়ুন

৫৫ কেজি সোনা চুরি: কাস্টমসের গুদামে ছিল না সিসি ক্যামেরা কাস্টমসেরই কেউ ৫৫ কেজি সোনা চুরিতে জড়িত, ধারণা পুলিশের  

রোকেয়া বারীর ছেলে ডা. রিয়াদ মোহাম্মদ মারজুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে বিষয়টি জানাই এবং চকবাজার থানার ওসি লকার রুম দেখে গেছেন। বুধবার রাতেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওসি আমাদের বলেন মামলা করতে। আমরা পরিবারের আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করছি। এ বিষয়ে সোমবার আদালতে অভিযোগ দায়ের করবো।’

জানতে চাইলে চকবাজার থাবার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর জাগো নিউজকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি নিজেই ব্যাংকে গিয়েছিলাম। লকার খোলা দেখতে পাই। আমি ভুক্তভোগী গ্রাহককে মামলা করতে বলি। তবে ভুক্তভোগী এখনো কোনো মামলা করেননি। ব্যাংক থেকেও এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।’

এএজেড/এমকেআর/জিকেএস