ঢাকার রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে যে চিত্রটি প্রথমে চোখে পড়ে, তা হলো ধুলার পরত। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই ধুলার নগরে চলাফেরা করে, শ্বাস নেয়, জীবনযাপন করে। ধুলার এই চাদরে ঢাকা শহরের চিত্রটা আমাদের চোখের সামনে নগরায়নের এক করুণ বাস্তবতা তুলে ধরে।
Advertisement
শহরের চারপাশে চলছে অবিরাম নির্মাণকাজ। বিশাল অট্টালিকা, শপিং মল, সড়ক উন্নয়ন সবকিছুই আমাদের আধুনিক জীবনের চাহিদা মেটানোর জন্য। কিন্তু এই নির্মাণকাজের কারণে যে বিপুল পরিমাণ ধুলার সৃষ্টি হয়, তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শুধু নির্মাণকাজ নয়, যানবাহনের ধোঁয়া ও শিল্পকারখানার বর্জ্য এই নগর দূষণের প্রধান উৎস।
শহরাঞ্চল জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, অ্যালার্জি এবং অন্যান্য শ্বাসজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধরা এই ধুলোময় পরিবেশের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধুলার নগরে বাড়ছে তাদের স্বাস্থ্যহানি। শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসের নানা রোগে মানুষ হচ্ছে কুপোকাত।
আরও পড়ুন
Advertisement
শুধু মানুষ নয়, শহরের জীববৈচিত্র্যও এই ধুলার কারণে অস্তিত্বহীনের সম্মুখীন। গাছপালার ওপর জমে থাকা ধুলা ফটোসিনথেসিস প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে, যা উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে ধুলা মিশে গিয়ে পানি দূষণ সৃষ্টি করে, যা আমাদের জলজ সম্পদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ধুলার নগর থেকে মুক্তি পেতে আমাদের কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। নির্মাণকাজের সময় ধুলো নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেমন নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা ও নিয়মিত পানি ছিটানো, যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশবান্ধব যানবাহনের প্রচলন করা। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজায়ন বৃদ্ধি এবং জনসচেতনতা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
তবে পরিবেশের উন্নতি সাধন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নগরায়নের অগ্রযাত্রা থামানো সম্ভব নয়, কিন্তু আমরা যদি পরিবেশ সচেতন হই এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি, তাহলে এই ধুলার নগরকে একটি স্বাস্থ্যকর, পরিচ্ছন্ন নগরে পরিণত করা সম্ভব। আমাদের সচেতনতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদের রাজধানীকে দূষণ ও ধুলামুক্ত করতে।
আরও পড়ুন
Advertisement
আধুনিক সভ্যতায় আলুর অবদানপ্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে সুন্দরবন
কেএসকে/এমএস