এই না হলে রিয়াল মাদ্রিদ! যে দলটি প্রথমার্ধে বলতে গেলে পাত্তাই পায়নি বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কাছে, প্রথম এক ঘণ্টায় তৈরি করতে পারেনি বলার মতো কোনো সুযোগ। সেই দলটিই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৯ মিনিটের মধ্যে করলো দুই গোল।
Advertisement
বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের স্বপ্ন ভেঙে আরও একবার ইউরোপের সেরা হলো রিয়াল মাদ্রিদ। জার্মান জায়ান্টদের ২-০ গোলে হারিয়ে রেকর্ড ১৫তম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতলো কার্লো আনচেলত্তির দল।
এক মৌসুম আগেই (২০২১-২২) রিয়াল জিতেছিল এই শিরোপা। মাঝে এই শ্রেষ্ঠত্ব কেড়ে নিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি (২০২২-২৩)।
১৯৮১ সালের পর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ। ১৯৮৩ সালে পর থেকে কোনো ইউরোপিয়ান ফাইনালে হারেনি এই স্প্যানিশ পরাশক্তি। ২০২৪ সালে এসেও সেই রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখলো লস ব্লাঙ্কোসরা।
Advertisement
অথচ শনিবার রাতে লন্ডনের বিখ্যাত ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে রোমাঞ্চকর ফাইনালে প্রথমার্ধটা ছিল বরুশিয়ার। দ্বিতীয়ার্ধে আস্তে আস্তে নিজেদের গুছিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রিয়াল মাদ্রিদ।
২০ মিনিটে ম্যাট হামেলসের থ্রু বল ধরে রিয়াল গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন করিম আদেমি। থিবু কোর্তোয়া এগিয়ে এলে তাকে কাটাতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করে ফেলেন তিনি। এর মধ্যে কার্ভাহাল এগিয়ে এসে ঝুঁকিমুক্ত করেন রিয়ালকে।
২৩ মিনিটে বরুশিয়ার টানা দুই আক্রমণের শেষটিতে কপালগুণে বেঁচে যায় রিয়াল। সানচোর পাস থেকে ফুলক্রুগ রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়াকে পাশ কাটিয়ে বাঁ পায়ের আলতো ছোঁয়ায় বক্সের দিকে ঠেলে দেন। কিন্তু গড়িয়ে গিয়ে বল ডানদিকের ভেতরের পোস্টে লেগে ফেরত আসে। যদিও সেটা গোল হলে অফসাইডের ফাঁদে পড়তো কি না, সেটাও প্রশ্ন।
৩৫ মিনিটে বরুশিয়া গোলরক্ষকের কাছ থেকে বল নিতে গিয়ে তার পায়ে আঘাত করে বসেন ভিনিসিয়ুস। হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। এরপর হলুদ কার্ড দেখেন ডর্টমুন্ডের স্লটারব্যাকও।
Advertisement
৪১ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া মার্সেল সাবিটজারের জোরালো শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান কোর্তোয়া। রিয়ালের ভিনিসিয়ুস, বেলিংহ্যামরা বলার মতো ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। ফলে প্রথমার্ধে গোলশূন্য ড্র নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রিয়াল। ৪৯ মিনিটে টনি ক্রুসের শট বরুশিয়া গোলরক্ষক কোবেল আটকে দেন, এরপর দানি কার্ভাহালের হেড বারের ওপর দিয়ে চলে যায়।
৫৭ মিনিটে পোস্টের খুব কাছে থেকে কার্ভাহালের হাফভলি আটকে যায় বরুশিয়ার রক্ষণে। বল চলে যায় গোলরক্ষকের কাছে।
৬৩ মিনিটে আরেকবার রিয়ালকে বাঁচান কোর্তোয়া। আদেমির ক্রস থেকে পাওয়া বল ফুলক্রুগ ঝাঁপিয়ে পড়ে হেড করলে কোনোমতে পাঞ্চ করে ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক।
৬৯ মিনিটে ব্যাক পোস্টে ভিনিসিয়ুসের ক্রস একটুর জন্য স্পর্শ করতে পারেননি বেলিংহ্যাম। পেলে হয়তো গোল হয়ে যেতো।
তবে এরপর রিয়ালকে অপেক্ষা করতে হয়নি বেশি সময়। ৭৪ মিনিটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান কার্ভাহাল। টনি ক্রুসের মাপা ক্রস ছয় গজ বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন দানি কার্ভাহাল (১-০)।
৭৮ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের কাটব্যাক বাইলাইনে পেয়ে বেলিংহ্যাম টাচ করলেও কাজে লাগাতে পারেননি। দুই মিনিট পর বিপজ্জনক জায়গা থেকে ক্রুসের ফ্রি কিক ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান বরুশিয়া গোলরক্ষক কোবেল।
৮৩ মিনিটে নিজেদের ভুলে আরেক গোল হজম করে ডর্টমুন্ড। ডিফেন্ডার ইয়ান ম্যাটসন লেফট ব্যাক পজিশন থেকে ভুল পাসে বল দিয়ে বসেন বেলিংহ্যামকে। ইংলিশ এই তারকা এক ঝলকে সেই বল পাঠিয়ে দেন বাঁদিকে থাকা ভিনিসিয়ুসকে। দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দিতে ভুল করেননি ভিনি (২-০)।
এর চার মিনিট পর বক্সের মধ্যে দারুণ হেডে কোর্তোয়াকে পরাস্ত করে উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন বরুশিয়ার ফুলক্রুগ। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলের জয় নিয়েই শিরোপা উৎসবে মাতেন ভিনিসিয়ুস-বেলিংহ্যামরা।
এমএমআর/