বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর, তবুও জীবনযুদ্ধে অদম্য ষাটোর্ধ্ব দিনাবন্ধু। বছরের প্রায় ১১ মাস দুধ বিক্রি জীবিকানির্বাহ করছেন নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ কাছারী গ্রামের এ বাসিন্দা। ৫০-৬০ দরে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ কেজি দুধ বিক্রির টাকায় চলে তার সংসার।
Advertisement
দিনাবন্ধু প্রতিদিন উপজেলা সদরের রামগঞ্জ বাজারে দুধ বিক্রি করেন। সেখানে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হলে দিনাবন্ধু বলেন, একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভীর জন্য প্রতিদিন ১০০ টাকার খাবার লাগে। গরুর খাবার ও বাজারে যাতায়াত খরচ মিটিয়ে খুব বেশি লাভ হয় না। তবুও এ টাকা দিয়ে সংসারের খরচ ও চিকিৎসাব্যয় করতে পেরে খুশি তিনি।
আরও পড়ুনকমছে তরল দুধ পান, আগ্রহ বাড়ছে দুগ্ধজাত পণ্যেদুগ্ধ খামারে তরুণদের বিনিয়োগ, বাড়ছে উৎপাদনকোনোমতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দিন অতিবাহিত করলেও বয়সের ভারে থমকে গেছে জীবনযাপন। উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় জীবনধারণ খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে দিনাবন্ধুর। পালন করা একটি গাভীর ৫ কেজি দুধ বিক্রি করে সেই টাকায় দিন অতিবাহিত করছেন বুড়ো-বুড়ি।
দিনাবন্ধুর মতো অনেকে প্রতিদিন দুধ বিক্রি করতে আসেন নীলফামারীর রামগঞ্জ বাজারে। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে বাজার। সন্ধ্যার পর জমজমাট বিকিকিনি হয়। বিভিন্ন এলাকায় থেকে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। অনেক দুধ বিক্রেতার অভিযোগ করে বলেন, লাগামহীন গো-খাদ্যের দাম এবং সেই তুলনায় দুধের যথাযথ দাম পাচ্ছেন না তারা।
Advertisement
দুধ কিনতে আসা হাজী মিজানুর রহমান বলেন, আমি প্রায়ই দিনাবন্ধুর কাছ থেকে দুধ কিনি। কখনো ওনার কাছে অন্যায় কিছু দেখিনি। ওনার কাছ থেকে দুধ নিয়ে স্বস্তি পাই।
বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গো-খাদ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়লেও সে অনুপাতে দুধের দাম বাড়েনি। একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরুর খাবারের জন্য মাসে প্রায় ৫-৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়। সে অনুপাতে আয় হয় না।’
আরও পড়ুনসংকটের মুখে সম্ভাবনার দুগ্ধশিল্পভাবতে অবাক লাগে, শিশুদের দুধও ভেজাল হচ্ছেসুরেশ চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিবছর নিজ বাড়িতে দুই-তিনটি গরু পালন করি। গো-খাদ্যের দাম বেশি, তাই এখন লাভ হচ্ছে না। গো-খাদ্যের দাম ও লালনপালনের পরিশ্রমের মূল্য হিসাব করলে লাভ হয় না। তবুও বাড়ির কাজের পাশাপাশি গরু পালন করছি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩ থেকে ৪ কেজি নিয়ে বাজারে যাই।
দুধ ব্যবসায়ী মো. জুয়েল ইসলাম জানান, সদরে নিমতলী, বেলতলী, বেরুবণ, হরতকীতলা, কাছারী, শিশাতলীর আশপাশের গ্রাম থেকে অনেকেই এ বাজারে দুধ নিয়ে আসেন। এদের অনেকের গাভী আছে। যাদের নেই তারা গ্রামের বিভিন্ন মহাজনের বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করেন। বাজারের বেশিরভাগ ক্রেতাই এলাকার। বিশেষ করে শহরের মিষ্টির দোকানগুলোর দুধের যোগান এ বাজার থেকেই হয়।
Advertisement
নীলফামারী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সিরাজুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ছোট খামারিদের বিভিন্ন টেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি। গরুর দুধ বাড়ানোর জন্য তাদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি। কেনা খাদ্যের ওপর নির্ভর না করে ঘাস চাষাবাদ করতে হবে। দুধের দাম বাড়ানোর জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
ইব্রাহিম সুজন/এমএএইচ/জেআইএম