কৃষি ও প্রকৃতি

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২২ একর জমিতে সবজি চাষ

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম যমুনা নদীর কোলঘেঁষে সিরাজগঞ্জ সয়দাবাদে ২০২২ সাল থেকে চালু হয় নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ৭ দশমিক ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। বছরের বেশিরভাগ সময় পানি জমে থাকায় অব্যবহৃত ২২ একর জমিতে উৎপাদন হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, কচুসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে এসব সবজি চাষ করা হচ্ছে। প্রকল্পের পাশেই নির্মিত হচ্ছে ৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। সূর্যের আলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি এখানে হাঁস, মাছ ও সবজি চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির প্রধান প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান এসব প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে এসে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২২ একর জায়গায় ২২ হাজার ৬৫০টি সোলার প্যানেল আছে। সোলার প্যানেলের নিচের বিস্তৃত জায়গা নষ্ট না করে সবজি চাষ করা হচ্ছে। যা দেশের কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে সোলারের নিচে আরও কী কী সবজি চাষ করা যায়, সেটি নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।’

এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সুত্রধর জাগো নিউজকে বলেন, ‘উন্নত বিশ্বে কৃষি জমিকে বাঁচিয়ে এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কৃষি উৎপাদন বাড়বে।’

বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সয়দাবাদ এলাকায় মোট ২১৪ একর জায়গাজুড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সমান মালিকানায় আছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।

Advertisement

৮৭ দশমিক ৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ডলারের বিনিময় হার ১০৫ টাকা হিসাবে প্রায় ৯২১ কোটি টাকা) ব্যয়ে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি অনুযায়ী, ২০ বছরের জন্য কেন্দ্রটি থেকে ইউনিট প্রতি ১০ দশমিক ২ সেন্ট বা প্রায় ১১ দশমিক ২২ টাকা (ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা হিসাবে) হারে বিদ্যুৎ কিনবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

আরও পড়ুন

গাছের পাতা হলুদ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার রেন্দ্র অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায় নেপাল

তারা জানান, সোলার প্যানেলের নিচে টমেটো, কুমড়া, কচু, পুঁইশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হচ্ছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে পরীক্ষামূলকভাবে এটি বাস্তবায়ন করেছিলেন এনডব্লিউপিজিসিএলের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিআরইসিএল) এমডি। আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন ৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি কীভাবে আরও বহুমুখী ব্যবহার করা যায়, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

বিসিআরইসিএলের সহকারী প্রকৌশলী শাকিরুল রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সোলার প্যানেলগুলো উঁচু করে দুই সারির মাঝখানে খানিকটা ফাঁকা রেখে এমনভাবে বসানো হয়েছে, যাতে ভেতর দিয়ে নৌকা চলাচল করতে পারে এবং নিচে যেন সূর্যের আলো পৌঁছায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাছ ও হাঁস এবং শীতকালে সবজি জাতীয় ফসল সহজেই চাষ করা যাবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মাছ চাষ ও কৃষিকাজে বহুমুখী সুবিধা মিলবে। একসময় ধারণা করা হতো, সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলে জমি অকেজো হয়ে যায়। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন জমির পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক কম লাগে। একই সঙ্গে জমির বহুমুখী ব্যবহারও করা যায়।’

Advertisement

প্রকল্পের সহকারী ব্যবস্থাপক রেজওয়ান তালুকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভূমি থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচু পিলারের ওপর সোলার প্যানেলগুলো বসানো হয়েছে। এমন ২৭ হাজার সুউচ্চ পিলারের ওপর বসানো হবে ৫৪৫ ওয়াটপিক ক্ষমতার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৬টি প্যানেল। যার মোট ক্ষমতা ৮৫ দশমিক ৩৩ মেগাওয়াট। এখান থেকে ৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।’

সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিরাজগঞ্জে এটি শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি স্থানীয় আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য কেন্দ্রের চেয়ে এটি যমুনার পাড়ে হওয়ায় অনেকটাই ব্যতিক্রম হবে।’

এসইউ/এমএস