পশ্চিমবঙ্গের ৯টি আসনে লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটগ্রহণ চলছে। এদিন সকাল ৮টা থেকে দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত।
Advertisement
শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখের মতো। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩.১৯ লাখ, নারী ভোটার ৮০.২০ লাখ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫৩৮ জন।
শেষ দফায় বিশৃঙ্খলামুক্ত ভোট করানোয় ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। শেষবারে কোনো রকম ঝুঁকি নিতে রাজি না ইসিআই। তাই শনিবার সকাল থেকেই প্রত্যেক বুথে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়।
এই দফার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৯৬৭ জন জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ৩৩ হাজার ২৯২ জন পুলিশ সদস্য মাঠে রয়েছেন।
Advertisement
তবে এদিন ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। ভাঙরের আইএসএফ ও তৃনমূল প্রার্থীর মধ্যে হয়ে গেছে খণ্ড যুদ্ধ। আইএসএফের এজেন্টকে বুথে বসতে না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃনমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। শুধু তাই নয়, এদিন ভাঙড়ের সারুলিয়ায় গোলাগুলির পাশাপাশি ভোট বুথের পাশে তাজা বোমা পড়ে থাকার খবর পাওয়া যায়।
চলতি লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে নজরকাড়া আসনটি হলো ডায়মন্ড হারবার। এই আসনে লড়াই করছেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ও মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জী। এখানে অভিষেকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিআইএমের প্রতীকুর রহমান ও বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বসিরহাট কেন্দ্রের বর্তমান সংসদ সদস্য নুসরাত জাহানকে এবার প্রার্থিতা দেয়নি তৃণমূল। তার বদলে প্রার্থিতা পেয়েছেন হাজী নুরুল ইসলাম। এই আসনে বিজেপির প্রার্থী রেখা পাত্র ও সিপিআইএম প্রার্থী হলেন নিরাপদ সরদার।
সম্প্রতি বসিরহাট কেন্দ্রের সন্দেশখালিতে নারীদের উপর অত্যাচার ও ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। সেই ঘটনার প্রতিবাদী মুখ রেখাকে বিজেপির প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাই স্বাভাবিকভাবে নজর থাকবে এই কেন্দ্রের দিকেও।
Advertisement
কলকাতা উত্তর তৃণমূলের প্রার্থী তিনবারের বিজয়ী সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির প্রার্থী তাপস রায় ও কংগ্রেসের প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য। কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের বর্তমান সংসদ সদস্য মালা রায়কেই আবারও প্রার্থী করেছে তৃণমূল। এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হলেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। আর সিপিআইএমের প্রার্থী সায়রা শা হালিম।
দমদম কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সৌগত রায়, বিজেপির প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত ও বামদের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। বারাসাত কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হলেন তিনবারের বিজয়ী সংসদ সদস্য কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বিজেপি প্রার্থী স্বপন মজুমদার, বামদের প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ও আইএসএফের প্রার্থী তাপস ব্যানার্জী।
জয়নগর কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল, আরএসপি প্রার্থী সমরেন্দ্র নাথ মণ্ডল ও বিজেপির প্রার্থী হলেন অশোক কাণ্ডারী। মথুরাপুর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী বাপি হালদার, সিপিআইএম প্রার্থী শরৎচন্দ্র হালদার ও বিজেপির প্রার্থী অশোক পুকাইত।
যাদবপুরের বর্তমান সংসদ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তার বদলে প্রার্থী করা হয়েছে আরেক অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে। সায়নীর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির অনির্বাণ গাঙ্গুলী ও সিপিআইএমের সৃজন ভট্টাচার্য।
২০১৯ সালের নির্বাচনে এই ৯টি আসনেই জয় পেয়েছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে চলমান নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গে অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে আসনগুলোতে জয় ধরে রাখা তৃণমূলের কাছে শক্ত চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অনেকে।
ডিডি/এসএএইচ