হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ উড়োজাহাজগুলে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় বিমানবন্দরে পড়ে ছিল। পরিত্যক্ত এয়ারলাইন্সের মধ্যে আটটি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের, দুটি রিজেন্ট এয়ারওয়েজের, একটি জিএমজি এয়ারলাইন্সের, একটি অ্যাঞ্জেল এয়ারওয়েজের।
Advertisement
সম্প্রতি বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষের অ্যারোড্রামস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেশন শাখার সদস্য (পরিচালনা ও পরিকল্পনা) দপ্তরের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে জানানো হয়েছে।
এর আগে গত ৬ এপ্রিল শাহজালাল বিমানবন্দর: ‘তৃতীয় টার্মিনাল চালুর আগেই নিলামে উঠবে পরিত্যক্ত ১২ উড়োজাহাজ’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল।
বেবিচকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরিত্যক্ত এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে নিতে বেবিচক থেকে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হলেও সংস্থাগুলো থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। তাই এগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলো।
Advertisement
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গোর সামনের অ্যাপ্রোন দীর্ঘদিন ধরে ১২টি উড়োজাহাজ ও আনুষঙ্গিক মালামাল অব্যবহৃত, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। উড়োজাহাজগুলো অপসারণ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে একাধিকবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজগুলো অপসারণ করার বিষয়ে অদ্যাবধি কোনোরূপ কার্যক্রম গ্রহণ করেনি।
ফলে রপ্তানি কার্গো এলাকায় নিয়মিত বা অনিয়মিত ফ্লাইটের পার্কিং, উড়োজাহাজে মালামাল বোঝাই ও যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি পার্কিংয়ের জায়গা সংকুলান না হওয়ার কারণে নতুন বা অনিয়মিত কার্গো ফ্লাইটের অনুমোদন প্রদান, বিমানবন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমসহ সার্বিক এভিয়েশন কর্মকাণ্ড এবং দেশের রপ্তানি উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
আর এক্ষেত্রে শুধু এভিয়েশন কার্যক্রমই নয় বরং বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ তথা বাংলাদেশ সরকার কার্গো ফ্লাইট এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার রাজস্ব থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বঞ্চিত হচ্ছে।
এতে আরও বলা হয়, সিভিল এভিয়েশন রুলস-১৯৮৪ এর ৩৩০ বিধির ২ নম্বর বিধি অনুযায়ী এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হয় এবং উল্লিখিত এয়ারলাইন্সগুলো বা অপারেটর বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে নবায়ন করতে ব্যর্থ হয়।
Advertisement
বর্তমানে উল্লিখিত উড়োজাহাজসহ আনুষঙ্গিক গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্টস পার্কিং এরিয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, যা আনুমানিক ১ লাখ ৯২ হাজার ১০০ স্কয়ার ফুট জায়গা দখল করে রয়েছে। এই জায়গা পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো অপসারণ করা হলে আনুমানিক ১২টি বে-পার্কিং প্রস্তত করা যাবে। পার্কিং বে-গুলো ব্যবহার করতে না পারার দরুণ দৈনিক বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক আয় ও রাজস্ব থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বঞ্চিত হয়ে আসছে।
বাজেয়াপ্ত হওয়া এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৪টি এমডি-৮৩, ১টি এ-৩১০-৩২৫, ১টি এটিআর ৭২-২০২, ১টি এটিআর ৭২-১২, একটি ড্যাশ-৮, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ২টি ড্যাশ-৮, অ্যাঞ্জেল এয়ারওয়েজ লিমিটেডের একটি এএন-২, জিএমজি এয়ারওয়েজের ১টি এমডি-৮২ মডেলের এয়ারক্রাফট।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো বাজেয়াপ্ত করার পর এখন সেগুলো নিলামের বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। নিলামে বিক্রির গ্রাহক না পেলে এগুলো কেজি দরে বিক্রি করা হতে পারে।
সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রির জন্য যে যে ধাপ রয়েছে, সেগুলো শেষ। আর এসব উড়োজাহাজ যে এখন উড়তে পারবে না, এ বিষয়ে টেকনিক্যাল মিটিং করেছি। আমাদের জব্দ তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি বেবিচক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ, এসব উড়োজাহাজ থেকে যে আমাদের রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি তা জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের শেষ দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তখন কার্গো এরিয়ায় আমদানি-রপ্তানি বাড়বে। এজন্য প্রচুর জায়গা দরকার। তাই তৃতীয় টার্মিনাল চালুর আগেই যেন এ উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রি করতে পারি, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে।’
এমএমএ/এমআরএম/এমএস