বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা, গবেষণা ও প্রচারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলা একাডেমি। ফলে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কবি-লেখকদের তীর্থস্থান এই প্রতিষ্ঠান। বাংলা সাহিত্যের বিকাশে এর ভূমিকা অপরিসীম। এসব কারণে বাংলা একাডেমির ‘মহাপরিচালক’ একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক পদ।
Advertisement
জানা যায়, তিন বছর পর বাংলা একাডেমিতে মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে প্রথিতযশা কবি-লেখকদের মনে। আগামী ১৩ জুলাই মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান মহাপরিচালকের। এই মেয়াদ শেষ হলে নতুন মহাপরিচালক হিসেবে কে আসবেন? এ নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। আলোচনায় মুখর সাহিত্যাঙ্গন। এরই মধ্যেই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে উঠে এসেছে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট কবি-লেখকের নাম।
মহাপরিচালক নিয়োগের বিষয়ে বাংলা একাডেমি আইনের ২৬ ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক এরূপ কোনো ফেলো অথবা প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বা গবেষকদের মধ্য থেকে সরকার মহাপরিচালক নিয়োগ করবে এবং তার চাকরির শর্তাবলী সরকার স্থিরীকৃত করবে।
২৬ এর ৫ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, মহাপরিচালকের পদ শূন্য হলে বা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে মহাপরিচালক তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, নবনিযুক্ত মহাপরিচালক কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত কিংবা মহাপরিচালক পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত, সচিব অস্থায়ীভাবে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে, ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করবেন।
Advertisement
নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের ১৩ জুলাই মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার। তিনি ২০২১ সালের ১৩ জুলাই দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাই অনেকে মনে করছেন, দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি। তারপরও যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে, তারা হলেন—সাবেক সচিব কবি আসাদ মান্নান, কবি নাসির আহমেদ, লেখক মফিদুল হক, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান, লেখক বেগম আকতার কামাল, কবি ড. বিমল গুহ এবং কবি বায়তুল্লাহ কাদেরী।
আরও পড়ুন
কেমন হলো এবারের ঈদসংখ্যা বাংলা মুভমেন্ট থিয়েটারের জনক ড. মুকিদ চৌধুরীশিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিজ্ঞজনেরা মনে করেন, কবি আসাদ মান্নান ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি সচিব পদমর্যাদায় বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবেন না। যারা তাকে যোগ্য মনে করছেন, তারা হয়তো ভালোবাসার কারণে তার নাম বলছেন।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা পুনরায় মহাপরিচালক না হলে কবি নাসির আহমেদ হতে পারেন বলে জোরালো মত ব্যক্ত করেছেন অনেক কবি-লেখক। তাদের মতে, কবি নাসির আহমেদ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কবিদের একজন। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে পরিচালক (বার্তা) পদে ৪ বছর চুক্তিভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় ফিল্ম সেন্সর বোর্ড এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদানের চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি বাছাই কমিটির সদস্য ছিলেন।
Advertisement
মফিদুল হক প্রকাশনা সংস্থা ‘সাহিত্য প্রকাশ’র পরিচালক এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. রফিকউল্লাহ খান ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়’র উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রধান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ ছাড়া ড. বিমল গুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশনা পরিচালক ও কলেজ পরিদর্শক ছিলেন দীর্ঘদিন। নব্বই দশকের কবি বায়তুল্লাহ্ কাদেরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করছেন। ফলে আলোচনায় থাকা প্রত্যেকেই মহাপরিচালক পদের জন্য যোগ্য। আবার আলোচনার বাইরে থেকেও কেউ হয়ে যেতে পারেন। তবে কেউ কেউ আবার আলোচনায় থাকলেও দায়িত্ব পেলেও পালনে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। বর্তমান পদমর্যাদার বিষয়টি চিন্তা করে তারা স্বপদে থেকে অবসরে যাওয়ার চিন্তা করছেন।
যেহেতু এ পদের নিয়োগের বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ই ভালো বলতে পারবে। কারণ মহাপরিচালক কে হবেন, সেটি মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করে। বাংলা একাডেমি থেকে কারো নাম প্রস্তাব করা হয় না। মন্ত্রণালয় তিনজনের নাম প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাবে। তিনি তাদের মধ্য থেকে যোগ্য ব্যক্তিকে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেবেন। আবার প্রস্তাবিত নামের বাইরেও তিনি অন্য কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন।
এসইউ/জিকেএস