ক’দিন আগেই আফগানিস্তানে কী ঈদের আমেজ ফিরে এসেছিল? প্রশ্নটা দেখে অনেকেই হয়তো হতভম্ব হতে পারেন! পাল্টা প্রশ্নে জিজ্ঞেসও করতে পারেন, ‘ঈদের আগে কিসের ঈদ এসেছে আবার?’ তবে আপনি যদি আফগান ক্রিকেটের টুকটাক খোঁজ খবরও রেখে থাকেন। তাহলে উত্তরটা এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা।
Advertisement
এইতো কয়েকদিন আগের কথা— দীর্ঘ চার বছর পর আফগানিস্তানে ফিরেছিলেন রশিদ খান। আফগান অধিনায়কের দেশে ফেরা কতটা যে আনন্দ বয়ে এনেছে, সেটা তার প্রতি সাধারণ মানুষদের উচ্ছ্বাসই বলে দেওয়ার কথা। গত চার বছরজুড়ে দেশের হয়ে খেলা কিংবা বিভিন্ন দেশের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেললেও দেশে ফেরেননি রশিদ। দূরত্ব বাড়তে বাড়তে ঘরের ছেলেকেও এক প্রকার পর মনে করা শুরু করে দেন আফগানরা। নিজ দেশেও যেন তিনি হয়ে পড়েছিলেন পরদেশি!
দূরত্ব বাড়লে নাকি সম্পর্কও হারিয়ে যায়! কিন্তু রশিদ সে সম্পর্ক হারানোর আগেই ফিরেছিলেন আফগানিস্তানে। রশিদ অবশ্য তাকে ঘিরে যে আলোচনা সৃষ্টি, তার উত্তরটাও দিলেন স্পষ্ট ভাষায়, ‘এটা সত্য যে, আমি প্রায় ৪ বছর পর আফগানিস্তানে ফিরে এসেছি। আমার প্রতি আমাদের সাধারণ মানুষের ভালোবাসা দেখে খুবই আনন্দিত। বিমানবন্দর, কাবুল, নাংগারে এবং সর্বত্র আমার ভক্ত-সমর্থকদের দেখে খুব ভালো লাগলো। প্রকৃতপক্ষে, এটি একটি বিশেষ অনুভূতি ছিল। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে সবাইকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সতেজ থাকতে হবে। আমি আমার জন্মভূমিতে এসে এই শক্তি পেয়েছি।’
রশিদ শুধু দেশে ফিরলেন বললে ভুল হবে। তিনি ছুটে গেলেন ফেলে আসা তার শৈশবে। খুঁজে নিলেন ছোটবেলার বন্ধুদের। কাছের মানুষদের সঙ্গে যেমন মিলে-মিশে কাটিয়েছেন, তেমনি সমর্থকদেরও যথেষ্ট আপন করে নিয়েছিলেন।
Advertisement
আফগানিস্তানে ফেরা রশিদের ব্যস্ততা কেমন ছিল, সেটা সেখানকার ক্রিকেট বোর্ডের এক কর্মকর্তার কথাটাতেই বুঝতে পারবেন। রশিদের ফেরার সময়টুকু তিনি এভাবেই শোনালেন, ‘রশিদ খুব ব্যস্ত ছিল। কারণ, লোকেরা তার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য মরিয়া ছিল এবং সে যেখানেই যেত, তাকে ঘিরে ছিল ভক্তরা। রশিদ তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকত। তার নির্ধারিত কোনো প্রোগ্রাম ছিল না। তবে তার আগমন সবার হৃদয়ে উৎসব তৈরি করেছে।’
গ্রামে ফেরা রশিদকে পেয়ে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছিল নাংগারেও। তাকে পেয়ে গ্রামের মানুষ নাকি বলছিল, ‘ছোটবেলার রশিদ আবার ফিরেছে নাংগারে।’ এতবড় তারকা হয়েও তার মধ্যে ছিল না কোনো অহংকার।
তবে রশিদের এবারের বিশ্বকাপটা অন্যরকম হতে পারে। এ কথার বলার পেছনে আছে শক্ত যুক্তিও। দেশে ফিরে রশিদ ছুটে যান তারই জন্মস্থান নাংগারে। সেখানে মায়ের কবর জিয়ারত করতেও ভুলেননি তিনি। মায়ের কবরে গিয়ে রশিদ যেন একটু বড় স্বপ্নই দেখতে শুরু করেছেন। দলকে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিতে তোলার আশার কথা বললেও শেষে বলে গেছে, ‘যখন আমরা সেমিতে খেলব, তখন আমরা ফাইনালেও খেলব।’
আফগানিস্তানে না থাকলেও দেশটির বিভিন্ন টুর্নামেন্টে নিয়মিত চোখ ছিল রশিদের। যুবকদের নিয়ে হওয়া আফগানিস্তানের কোশ টেপা জাতীয় টি-টোয়েন্টি লিগের খেলাগুলোও নিয়মিত দেখেছিলেন। দেশে না থাকলেও অধিনায়ক হিসেবে দেশের খেলাগুলোতে যে তীক্ষ্ণ নজর ছিল তার, সেটা অকপটেই জানিয়ে দেন তিনি। আফগানিস্তানের প্রতি তার যে নিবেদন, সেটা বোধহয় এটুকুতেই যথেষ্ট।
Advertisement
আইএইচএস/