দেশজুড়ে

যমুনায় ভাঙন, নদীগর্ভে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি

যমুনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে পাবনার বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। গত এক সপ্তাহে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও শতবিঘা ফসলি জমি। বর্ষার আগেই ভাঙন দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।

Advertisement

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার অসময়ে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাগদাহ, হাটাইল আরালিয়া চর সাড়াসি গ্রামসহ নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের লেওলাই পাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ভাঙন চলছে। নতুন ভারেঙ্গার লেওলাইপাড়া গ্রামের নদীপাড়ের ফসলি জমি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে বিলীন হচ্ছে নদীতে।

হুমকির মুখে পড়েছে ঐতিহ্যবাহী নেওলাইপাড়া কবরস্থান, মাঝখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নেওলাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ- মাদরাসা, পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বেশ কিছু স্থাপনা। চরসাড়াসি ও চরনাগদাহ গ্রামের ভাঙনকবলিত অসহায় মানুষগুলোর অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। যারা নদীপাড়ে রয়েছেন তাদের দিন কাটছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায়। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, নদী থেকে বালু তোলার কারণেই প্রতিবছর ভাঙন হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা শুধু খোঁজখবর নেন, কিন্তু কোনো কাজ শুরু করেননি।

Advertisement

চরনাগদাহ গ্রামের কৃষক ইমদাদুল হক বলেন, ‘নদীভাঙনে আমি পাঁচবার বসতভিটাসহ প্রায় ১০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহখানেক আগে আবার বসতভিটা হারিয়েছি। আমার এ দুর্দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। কারো কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমাদের গ্রামের একটি পাড়া নদীতে চলে গেছে।’

হাটাইল চরের কৃষক জয়নাল মোল্লা বলেন, ‘প্রতিবছরই বর্ষাকালে আমাগোর চরের মানুষ নদীভাঙনে বাড়িঘর, জমি হারায়। আবার অসময়ে নদীতে ভাঙন শুরু হইছে। কয়দিন আগে আমার দুই বিঘা বোরো ধান ও এক বিঘা তিল ক্ষেত নদী গিলে খাইছে। সবমিলিয়ে আমি প্রায় ১০ বার এ নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে এই নদী।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার পর নতুন বাড়ি করেছি। এক সপ্তাহ এই ভাঙন থাকলে এটাও হয়তো নদীতে ডুবে যাবে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, নদীতে যেন জিও ব্যাগ ফেলে আমাদের রক্ষা করে।’

নেওলাইপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাস্টার বলেন, ‘নদীভাঙনে এ এলাকার অনেক মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়বে। এরইমধ্যে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকারের উচিত ভাঙনরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।’

Advertisement

নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু দাউদ বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে আমার ইউনিয়নের লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এ কয়দিনে অর্ধশতাধিক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে মাটি ফেলে উদ্বোধন করা মুজিব বাঁধ নামের প্রধান বাঁধসহ সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদরাসাসহ দু-তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি। ভাঙনরোধে দ্রুত জিও ব্যাগ না ফেললে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কথা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। খুব শিগগির এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমিন ইসলাম জুয়েল/এসআর/জেআইএম