আইন-আদালত

বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে শত কোটি টাকার মালিক

বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়, তা দেশবাসীকে হতবাক করে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ।

Advertisement

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে নিজের শেষ কর্মদিবসে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এমন কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের উপস্থিতিতে দেওয়া বক্তব্যে বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘দুর্নীতি আমাদের সব অর্জন ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে অফিস-আদালত মুক্ত রাখতে হবে। একজন বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে কোটি কোটি এমনকি শত কোটি টাকার মালিক হন, তা দেশবাসীকে হতবাক করে। তাই এগুলো রোধ করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে। তাহলে দেশ উপকৃত হবে।’

আরও পড়ুন:আজিজ-বেনজীর ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয়: কাদের দুইদিনে বেনজীর পরিবারের যত সম্পত্তি ফ্রিজ-ক্রোক

বিচারপতি হাফিজ আরও বলেন, ‘নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে মুহূর্তেই বড়লোক হওয়ার মানসিকতা আমাদের বড় বিপর্যয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।’

Advertisement

দেশে অপরাধের ধরন পাল্টে যাওয়া এবং কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সময়ের বিবর্তনে অপরাধের ধরন প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে। আমাদের সন্তানদের ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অভিভাবকদের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পারিবারিক সম্প্রীতি, সংস্কৃতি, দীর্ঘ দিনের লালিত মূল্যবোধ নষ্ট হচ্ছে। কিশোর গ্যাংয়ের উত্থান ঘটেছে। মাদক, সামাজিক অনাচারসহ অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, হুমকি ও আশঙ্কার বিস্তার ঘটেছে।’

এগুলোই আমাদের টেকসই উন্নয়ন, শান্তি, প্রসারিত ভালোবাসা, ধৈর্য ও সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আরও পড়ুন:আজিজ-বেনজীরের মতো আরও কাহিনি আছে: রিজভীআজিজ-বেনজীর কার সৃষ্টি, প্রশ্ন ফখরুলের

এসময় বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, দুর্বলকে রক্ষা, দুর্নীতি রোধ, ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রাপ্তি এবং দেশ ও জনগণের শান্তি-নিরাপত্তায় দেশের বিচার বিভাগ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।

মিথ্যা মামলার ভয়াবহতা উল্লেখ করে বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিচার বিভাগকে এর ভার বহন করতে হচ্ছে। এতে আদালতের প্রচুর সময় নষ্ট হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

Advertisement

গত ২৫ এপ্রিল বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। বিচারিক জীবন শেষ করে আজ তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

বিচারপতি মুহাম্মদ আব্দুল হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অনার্স ও এলএলএম ডিগ্রি নেওয়ার পর ১৯৮২ সালে ঢাকা জজ কোর্টে এবং ১৯৮৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন আব্দুল হাফিজ। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্টে নিয়োগ পান। এরপর ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন।

এফএইচ/এসএইচএস/জেআইএম