প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠায় তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ৪৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ সংশোধন করে আদেশ দিয়েছেন চেম্বার আদালত। ফলে এই ৪৬ হাজার শিক্ষকের মৌখিক পরীক্ষা নিতে আর কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
Advertisement
তবে প্রশ্নফাঁসের ঘটনার তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল না করা পর্যন্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা যাবে না বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) যুক্ত করতে বলা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দীন আহমেদ আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের আদালত এ আদেশ দেন।
Advertisement
আরও পড়ুন
প্রাথমিকে তৃতীয় ধাপে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণে বাধা নেইপ্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষা স্থগিতআদালতে আজ মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মুহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ (এসকে) মুর্শেদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম। শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দীন আহমেদ। অন্যদিকে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট লিটন আহমেদ।
শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দীন আহমেদ জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণে আর কোনো বাধা নেই। তবে প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় হাইকোর্টের দেওয়া তদন্ত আদেশ চলবে। একই সঙ্গে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করার আগ পর্যন্ত ফলাফল প্রকাশ করতে পারবে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মৌখিক পরীক্ষা (ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ) স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পরীক্ষা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে প্রশ্নফাঁসের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
Advertisement
এছাড়া প্রশ্নফাঁসমুক্ত পরীক্ষা গ্রহণে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং নতুন করে পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় দায়ের করা রিটের বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার (২৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট পিয়া জান্নাতুল, অ্যাডভোকেট লিটন আহমেদ ও ব্যারিস্টার খুররম খান মুরাদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি দাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া।
আরও পড়ুন
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ, পাস ২৩ হাজার প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ: ৩য় গ্রুপের সংশোধিত ফল প্রকাশওইদিন ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৩ সালের ১৪ জুন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য সার্কুলার হয়। এ পরীক্ষায় সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ অনেককে গ্রেফতারও করে। তারা প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার বিষয়ে দায় স্বীকারও করেছেন।
তিনি বলেন, এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো অনুসন্ধান তো দূরের কথা, কিছুই করেনি। বরং তারা এতবড় ঘটনা ইগনোর করে সামনে এগিয়ে ভাইভা নিচ্ছেন। এখন আমাদের বক্তব্য হলো- প্রশ্নফাঁসের ঘটনা দিবালোকের মতো পরিষ্কার, সে ঘটনায় কেউ তদন্তও করলো না। আমাদের ধারণা এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের কেউ জড়িত থাকতে পারেন। এজন্য আদালতে আমরা রিট দায়ের করি।
গত ২৯ মার্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপে ঢাকা-চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে পরীক্ষা হয়। দুই বিভাগের ৪১৪টি কেন্দ্রে একযোগে লিখিত পরীক্ষা হয়। এতে প্রার্থী ছিলেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
পরে এ পরীক্ষা বাতিল চেয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া জুয়েল রতন দাসসহ ১৫ জন রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত।
এই পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নের উত্তরপত্র ও ডিভাইসসহ মাদারীপুরে সাতজন ও রাজবাড়ীতে একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। দুই জেলায় আলাদাভাবে মামলা দায়ের করেন সংশ্লিষ্টরা। রাজবাড়ীতে আটক হওয়া পরীক্ষার্থী আদালতে নিজের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।
প্রশ্নফাঁসের পরও গত ২১ এপ্রিল রাতে ফল প্রকাশ হয়। এতে ৪৬ হাজার ১৯৯ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এরপরই বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করেন ১৫ পরীক্ষার্থী।
এফএইচ/এমকেআর/জেআইএম