প্রবাস

ঠোঁটের নিচে তিল থাকলে নাকি মানুষ বেশি ভালোবাসে

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

Advertisement

হাতের লেখা নকল করতে পারলেও, গায়ের ঘ্রাণ তো আর নকল করতে পারবে না, বলো? আর সেটা তো নেপোলিয়ন ব্র্যান্ডের ঘ্রাণ! জোসেফিনও চিঠির গন্ধ শুঁকেই যাচাই করতে পারত যে এটা তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর পাঠানো চিঠি কি না।

তোমাকে লেখা চিঠির খাম বন্ধ করার পর মনে হয়েছিল যে আমিও নেপোলিয়নের মতো করে আমার ঘাড়ের ঘাম মাখিয়ে তোমাকে চিঠি লিখলে কেমন হতো? ততক্ষণে চিঠির খামটা বন্ধ করেছি। চিঠির খামের আঠা তার কাজ ঠিকমতোই করে ফেলেছে। খামটা খুলতে গেলেই হয়তো ছিঁড়ে যাবে খামের পেছনের ফ্লাপটা। অনেক সময় আঠা শুকালে, জোড়া দেওয়া জায়গাটা শক্ত কড়কড়ে হয়ে আলাদা হয়ে যায়।

লক্ষ্য করে দেখলাম তা হয়নি। ইচ্ছে আছে আগামী চিঠিতে তোমাকে আমার ভালোবাসার ঘ্রাণ পাঠাবো। আরেকটা জিনিসও করতে পারি। একদিন তোমাকে একটা ম্যাজিক চিঠি পাঠাবো। চিঠিটি হবে এ রকম যে, সাধারণভাবে তুমি লেখাগুলো কিছুই দেখতে বা পড়তে পারবে না। চিঠিটা যখন পানিতে ভেজাবে, শুধুমাত্র তখনি সব লেখা ফুটে উঠবে, সব রঙের কাজ তুমি দেখতে পাবে। তোমার সাথে এসব প্রসঙ্গে এত কম কথা হয়েছে যে বলাই হয়নি। অবশ্য কাউকেই কখনোই বলা হয়নি। বলার কথাও না, বারণ আছে। তবে তোমাকে বলতে পারি। তুমি তো আমাদের এসব গোপন কথা আর কাউকে বলবে না, তাই না? তোমার মনে আছে কি না জানি না, আমাদের কয়েক বাড়ি পরে, ঈশরাত নামে একটা আপু ছিল।

Advertisement

বলেছিলাম কখনো? যাহোক, ঈশরাত আপু বেশ সুন্দর ফর্সা, লম্বা আর গোলগাল দেখতে। তোমার মতো তারও ঠোঁটের পাশে বড় একটা তিল ছিল। ঈশরাত আপুর তিল বিশ হাত দূর থেকেও দেখে বোঝা যেত, ঠিক তোমার মতো। ঠোঁটের পাশে তিল থাকলে নাকি মানুষ অনেক ভালোবাসা পায় শুনেছি। ঈশরাত আপু আমাকে খুব পছন্দ করতো, স্নেহ করতো। আমিও তাকে আমার বড় আপার মতোই বা তার চেয়ে একটু বেশিই ভালোবাসতাম।

আগের পর্ব পড়ুন

তোমার দেওয়া ‘বাবুই’ নামটা অনেক ভালোবাসি

মাঝে মধ্যেই তাদের বাড়ির ওদিকে গেলেই ডেকে নিয়ে আমার সাথে অনেক কথা বলতো, গল্প শোনাতো। আমি বেশ বুঝতাম সেসব বিভিন্ন গল্প। ঈশরাত আপুর গল্পের বই পড়ার খুব নেশা ছিল। এর জন্য অনেক গালমন্দও খেতে দেখেছি। বড়দের গল্পকে খুব সুন্দর করে ছোটদের মতো করে আমাকে শোনাতো, নাকি বানিয়ে বানিয়ে বলতো কে জানে? মাঝে মধ্যেই আমাকে বাতাসা দানাদার জাতীয় মিষ্টি খেতে দিত।

বড় লক্ষ্মী মেয়ে ছিল ঈশরাত আপু। মাধ্যমিকে খুব ভালো রেজাল্ট করে পাস করার পর উচ্চমাধমিকে পড়তো। দ্বিতীয় বর্ষ। ঈশরাত আপুর আব্বার খুব ইচ্ছে এই লক্ষ্মী মেয়েটাকে অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করাবে। অনেক বড় করবে, মেয়েটি বড় চাকরি করবে। ঈশরাত আপু পরিপাটি পোশাক পরে, লাঞ্চবক্স নিয়ে বড় কোনো কোম্পানির অফিসারদের বাসে চড়ে অফিসে যাবে।

Advertisement

অফিসার ঈশরাত জাহান যখন মাথা উঁচু করে অফিসার-বাসে উঠবে, দেখতে কতই না ভালো লাগবে। বুকটা তার গর্বে ভরে উঠবে। একদিন বারান্দার একটা বেঞ্চীতে বসে ঈশরাত আপুর আব্বা বাটি ভর্তি মুড়ি পাটালি গুড় দিয়ে খেতে খেতে ঈশরাত আপুকে বলছিল। আমিও মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম ঈশরাত আপুর সাথে সাথে।

এও দেখেছিলাম, ঈশরাত আপুর আম্মা গজ-গজ করে রান্নাঘর থেকে কি যেন নেওয়ার জন্য এ ঘরের দিকে আসার পথে বলেছিল বেশ কিছু কড়া কড়া কথা। সব মনে নেই, তবে বেশ কিছু কথা এ রকম, ‘আফনের এইসব আজব হতা বাত্তা আমাগো সাইজত না। মাইয়াডা বিয়ার উপযুক্ত হইছে। ভালো এ্যাড্ডা পুলা দেইখ্যা বিয়া দিয়া দ্যান ছাই।’

ঈশরাত আপুর মামা বাড়ি অন্য কোনো জেলায়, তাই তার আম্মা এখনও ওইখানকার মতো করেই কথা বলে। দুএকটা কথা বাদে আর সব কথা বুঝতে তেমন অসুবিধা হয় না আমার।

খুব নরম সুরে অনেক আদরের গলায় ঈশরাত আপুর আব্বা বললেন, ‘হবে, হবে। বিয়ে-শাদিতো হবেই। এত তাড়াহুড়া করার কি আছে? পড়াশোনা শেষ করুক, তারপর দেখা যাবে।’ বলে মচ্মচ্ করে আনমনে কোন এক অচিন স্বপ্ন দেখতে দেখতে মুড়ি চিবোতে লাগলেন। মনে হয় এই মচ্মচ্ শব্দেই আম্মা আরো রেগে গেলেন। গলা আরো চড়িয়ে বললেন, ‘নেহা ফরা হিগ্গ্যা আমাগো মাইয়া এক্কেরে জচ ব্যারেস্টার হইবো।’ বলেই মাথা ঝাকি দিলেন।

এমআরএম/এএসএম