প্রতারণার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর মিরপুরের শাহআলী থানায় করা মামলা থেকে ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতাকে খালাস দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় ১৪ মাস জেল খাটা ডা. ঈশিতাকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল।
Advertisement
রায় ঘোষণার সময় আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কোনো অজানা-অচেনা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চাপে বা প্ররোচনায় ডা. ঈশিতাকে ফাঁসানো হয়েছিল। তাই এ ঘটনার নেপথ্যে কারা, তাদের খুঁজে বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে তদন্ত শেষ করে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।
রায়ের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ডা. ইশরাতের আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান। তবে, এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হবে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
বুধবার (২৯ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান, শেখ কানিজ ফাতেমা ও মো. নাজমুল ইসলাম। এ সময় আদালতে ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতাও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
Advertisement
২০২১ সালের ১ আগস্ট মিরপুর থেকে ডা. ঈশিতাকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে পরদিন ২ আগস্ট ভুয়া পরিচয় দেওয়া, মাদক ব্যবসা, সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মাদক ও প্রতারণা আইনে রাজধানীর শাহআলী থানায় তিনটি মামলা করা হয়। গ্রেফতারের ১৪ মাস পর ২০২২ সালের ১ অক্টোবর কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এর মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ডা. ইশরাতকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল (নিম্ন আদালত)। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর আপিল করা হয় হাইকোর্টে। ওই আপিলের শুনানি নিয়ে এ রায় দেন আদালত। ডা. ঈশিতার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা এখনো চলমান।
মিরপুরের শাহআলী থানায় র্যাব-৪ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। র্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান বলেন, ডা. ঈশিতার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি, অপরটি প্রতারণা এবং একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৩, ২৪ ও ৩৫ ধারায় মামলা হয়েছে।
২০২১ সালের ১ আগস্ট দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘ডা. ঈশিতার শত পরিচয়-শত সনদের সবই ভুয়া! শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
Advertisement
প্রতিবেদনে বলা হয়, কখনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী, আবার কখনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, কিংবা কখনো গবেষক। আরও রয়েছে কর্নেল, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, মানবাধিকারকর্মীসহ অসংখ্য পরিচয়। এতসব পরিচয় যার ঝুলিতে, সেই প্রতারক ডা. ইশরাত রফিক ঈশিতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
ওই বছরের ১ আগস্ট বিকেলে, কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, সকালে ঈশিতাকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতারের সময় শহিদুল ইসলাম দিদার নামের এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করেন তারা।
ইসরাত রফিক ঈশিতা ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। ২০১৪ সালের প্রথম দিকে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। এরপর একটি সরকারি হাসপাতালে চুক্তিতে কাজ করেন। তবে চার মাস পর অনৈতিক কাজ করার অভিযোগে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এফএইচ/এমএএইচ/এএসএম