প্রবাস

তোমার দেওয়া ‘বাবুই’ নামটা অনেক ভালোবাসি

অমিয় দাশ, ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র

Advertisement

চিঠিটি লেখা হয়েছে তোমাকে আমার দেওয়া ছদ্ম নাম ‘দোয়েল পাখী’ কে উদ্দেশ্য করে। তুমি যে নামে গোপনে আমাকে ডাকো, সে নামটা লিখেছি একদম শেষে। লিখেছি, ‘ইতি, শুধু তোমার, বাবুই’, তোমার দেওয়া সেই গোপন নামটা। জানো, তোমার দেওয়া ওই ‘বাবুই’ নামটা আমি অনেক অনেক ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমি চাই না এ জীবনে আর কেউ আমাকে ওই নামে ডাকুক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘নামেই কিবা আসে যায়,যে নামে ইচ্ছা সে নামে ডাকিও আমায়’। কবি যাই বলুক না কেন, তোমার দেওয়া ‘বাবুই’ নামে তুমিই শুধু আমাকে ডাকবে। তোমারই শুধু অধিকার আছে আমাকে ওই নামে ডাকার। পৃথিবীর সব মানুষ আমাকে যে নামে খুশি ডাকুক, আমি শুধু ওই নামটা তোমার কাছ থেকেই, তোমার কণ্ঠেই শুনতে চাই। এটা কি খুব বেশি চাওয়া বলো? আমিতো প্রকৃতির কাছে, কারো কাছে টাকা পয়সা, কোনো মূল্যবান জিনিস কিছুই চাইছি না। শুধু ওই নামটা এইতো। জানো, চিঠিটা খামে ঢুকিয়ে, খামটা বন্ধ করার পর মনে হলো একটা ভুল হয়ে গেছে। সেদিন একটা গল্প পড়ছিলাম জগৎ বিখ্যাত যোদ্ধা ও ফ্রান্সের রাজা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সম্বন্ধে। অনেক কিছুই করেছেন নেপোলিয়ন তার জীবনে। কিন্তু তার একটা বিশেষ বিষয় আমার খুব মনে ধরেছে। তার স্ত্রী জোসেফিনকে সে চিঠি লিখতো যুদ্ধে থাকা অবস্থায়ও। সে ছিল খুব সাহসী যোদ্ধা।

ফ্রান্সকে সে যে কোনো আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে চেয়েছিল। অনেক বিজয় ছিল তার ঝুলিতে। একবার নেপোলিয়ন একটা যুদ্ধে হেরে যায়। সবাই কি আর সব সময় জেতে বলো? জয়-পরাজয় নিয়েই তো আমাদের জীবন। তারপর তাকে বেশ কিছু রক্ষীসহ একটি বিরান দ্বীপে নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হয়।

Advertisement

স্ত্রীকে সে সাথে নিতে চেয়েছিল, কিন্তু অনুমতি মেলেনি। সব বিজয়ের যত আনন্দ ছিল তার জীবনে, স্ত্রী-বিরহের দুঃখ তাকে তার চেয়েও বেশি দুঃখ ভারাক্রান্ত করেছিল। সে তার নিজের জীবনের চেয়েও তার স্ত্রীকে বেশি ভালোবাসতো।

আগের পর্ব পড়ুন:

তুমি আমার কে হও গো?

তারও আগে একবার ইতালিয়ানদের সাথে যুদ্ধ বাধলো নেপোলিয়ন বাহিনীর। সে এক ভীষণ ভয়াবহ যুদ্ধ। যুদ্ধ ময়দানে তার সাথে হাজারো সেনা থাকলেও, সেই বিরান প্রান্তরে তার খুব একা আর নিঃসঙ্গ মনে হয়েছিল। তার মনে হয়েছিল, এমন যদি হতো যে, তার স্ত্রী জোসেফিন যুদ্ধক্ষেত্রে তার সাথে আছে। তাহলে অতি সহজেই সে মনে হয় যুদ্ধে জয় আনতে পারবে।

কি অদ্ভূত ভাবনা, তাইনা? যুদ্ধক্ষেত্রে আবার কেউ তার স্ত্রীকে নিয়ে যায় নাকি? এতো আর মধুচন্দ্রিমা না! এ হলো জীবন মৃত্যুর খেলা। সেখানে ভয় করলে বা বেখেয়াল হলেই মৃত্যু অনিবার্য। এমন খেলা যে, হয় মারবে, নয় মরবে। তবুও নেপোলিয়ন যুদ্ধের মাঝে বিশ্রাম বা ঘুমের যে একটু সময় পেতো, তখনই সে তার স্ত্রীকে চিঠি লিখত। অনেক ভালবাসায় মোড়া সে চিঠিগুলো। এইতো সেদিন খবরে দেখলাম, নেপোলিয়নের লেখা একটি চিঠি কোনো এক সংগ্রাহক ৫ লাখ ইউরোতে বিক্রি করেছে অন্য কোনো এক সংগ্রাহকের কাছে। টাকায় হিসেব করলে আজকের দরে সেটা প্রায় ছয় কোটি টাকারও একটু বেশি, আর রুপিতে প্রায় সাড়ে চার কোটি রুপি। বিরাট এক নিলাম হাউস চিঠিটা নিলামে তুলেছিলো।

Advertisement

সে যাগ্যে, ভালোবাসা বিক্রি হোক, আর চিঠি বিক্রি হোক, তাতে কার কিই বা এসে যায়? যে বিশেষ ব্যাপারটা আমার মনে ধরেছে তা হলো, নেপোলিয়ন তার স্ত্রীকে চিঠি লেখা শেষ হলে তার ঘাড়ের ঘর্মাক্ত এলাকায় চিঠিটা বার কয়েক ঘষে ঘাম লাগাত। তারপর চিঠিটা খামে পুরে, ভালোমতো খাম বন্ধ করে, পাঠাতো তার স্ত্রীর উদ্দেশ্যে। জোসেফিনও জানতো ব্যাপারটা।

চিঠি পেলেই সে চিঠিটাকে কি করতো তা তো বুঝতেই পারছ। জোসেফিন চোখ বন্ধ করে, চিঠিটাকে তার নাকের কাছে এনে প্রাণভরে তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর গায়ের ঘ্রাণ নিতো। তারপর চিঠিটা পড়তো। নেপোলিয়ন কেন এ রকম করতো তা কারো জানা নেই।

কেউ কেউ এটাকে অত্যাধিক ভালোবাসা, আবার কেউ কেউ এটাকে নিরাপত্তা হিসাবে মনে করে। রাজার চিঠি বলে কথা! হাতের লেখা নকল করে যদি কেউ উল্টোপাল্টা লিখে জোসেফিনকে পাঠায়, কিংবা কোনো শত্রুপক্ষ যদি সুবিধা নেওয়ার জন্য কৌশল করে ক্ষতি করার জন্য কোনো চিঠি পাঠায়।

এমআরএম/এএসএম