অর্থনীতি

শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত

কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বুধবার (২৯ মে) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে গঠিত জাতীয় কমিটির তৃতীয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।

Advertisement

এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। সভা শেষে ব্রিফিংয়ে সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরেন সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেন, এখন থেকে নতুন কারখানাগুলো ও বাণিজ্যিক ভবনের নকশা ও পরিকল্পনার যে অনুমোদন দেওয়া হবে, বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বাইরে যেগুলো আছে, সেগুলোর অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) অধীনের কমিটি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পেশাদার সংগঠন যেগুলো আছে, যেমন ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেকচার, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার-এসব সংগঠন তাদের অথরাইজড করার মতো কারা আছেন, তাদের একটা তালিকা দেবে। যেমন স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বিং, এমইপি, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল-তাদের তালিকা দিয়ে দেবে।

কমিটির সভাপতি বলেন, তালিকায় যাদের নাম আছে, ভবনের নকশায় তাদের সই আছে কি না সেটা দেখবে কমিটি। অনেক সময় সই নকল হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথম তাড়া থাকবে, তালিকাভুক্তদের সইয়ে প্ল্যানিং বা নকশা জমা দেওয়া হয়েছে কি না সেটা দেখা। পেশাগত সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সই সঠিক কি না সেটার সত্যতা যাচাই করা হবে।

Advertisement

আমাদের একটা আইন হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)। এ আইনে একটি অথরিটি (কর্তৃপক্ষ) করার কথা রয়েছে-বাংলাদেশ বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি। যত দ্রুত সম্ভব এটা যাতে পূর্ত মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করে, আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা আরও বলেন, এরই মধ্যে তিন পর্যায়ে আমরা সারাদেশের কলকারখানা পরিদর্শন করেছি। প্রথম পাঁচ হাজারে ফল অনেক ভালো পেয়েছি। পরিদর্শনের পর কারেক্টিভ অ্যাকশন প্ল্যান করে তাদের জানানো হয়েছে যে এই এই ত্রুটি আছে এগুলো ঠিক করতে হবে। সেই অনুসারে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখেছি আমরা যেভাবে অনুরোধ করেছি অন্তত ৫০ শতাংশ সেটা বাস্তবায়ন করেছে। বাকিদের আরও সময় দেওয়া হয়েছে, তারা সবাই কাজ করছেন। সবার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।

সালমান এফ রহমান বলেন, প্রথম পর্যায়ে আমরা যেভাবে দ্রুত পরিদর্শন করেছি, দ্বিতীয় পর্যায়েও সেটা চালু থাকবে। তৃতীয় পর্যায়ে সারাদেশে পাঁচ হাজার ভবন পরিদর্শনের কথা ছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সারাদেশে পরিদর্শন না করে ১৬টি জেলা যেখানে শ্রমঘন এলাকা বেশি, সেগুলো আমরা পরিদর্শন করবো।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে আমাদের প্ল্যানিং, ফায়ার সার্ভিসও থাকবে। গত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঢাকা শহরের দুটো বাণিজ্যিক মার্কেট আমরা চিহ্নিত করেছিলাম, একটা গুলশানের শপিং কমপ্লেক্স, আরেকটা হচ্ছে মৌচাক।

Advertisement

আমাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে গুলশানেরটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর মৌচাকের বেলায় হাইকোর্ট থেকে একটি স্টে অর্ডার এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, ওটাকে না ভেঙে রেট্রোফিট করার জন্য। আজ আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রাজউক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দেখবে যে এটা (মৌচাকের মার্কেট) রেট্রোফিট করা যায় কি না। যদি করা সম্ভব হয়, তাহলে করা হবে। সম্ভব না হলে আবার আদালতে গিয়ে স্টে অর্ডার ভেকেট করার জন্য বলবো।

ঢাকা শহরের অনেক ভবনের পার্কিংয়ের জায়গায় দোকানপাট ও অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আমরা বলেছি যে পার্কিংয়ের জায়গা যাতে পার্কিংয়ের কাজে ব্যবহার হয়।

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর একটি ওয়ান স্টপ সার্ভিস করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল, যেসব সিদ্ধান্ত এক জায়গায় থেকে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সালমান এফ রহমান বলেন, হ্যাঁ, সেটাই তো বললাম। বিডা যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস করছে, এরপর সবকিছু এ মাধ্যমেই হয়ে যাবে।

সালমান এফ রহমানের সভাপতিত্বে সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরএমএম/এমআইএইচএস/জিকেএস