আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন গত কয়েক বছরে দেশের অপরাধ জগতে বা অপরাধের ধরনে-ধারণে অস্বাভাবিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে কারণে-অকারণে বা তুচ্ছ কারণে হত্যা করার পরিমাণ। এর চাইতেও ভয়াবহ ও আশংকার কথা হলো এ কাজে সংশ্লিষ্ট শিশু-কিশোর ও তরুণদের সংখ্যাও বাড়ছে। ক্রুর থেকে ক্রুরতর হচ্ছে অপরাধের প্রক্রিয়া, বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের প্রক্রিয়া।
Advertisement
আগে গুলি করে, শ্বাসরোধ করে বা বিষপ্রয়োগে হত্যা করা হতো। আজকাল এই সাদামাটাভাবে মানুষ মেরে আর শান্তি পাচ্ছে না অপরাধীরা। এমনভাবে হত্যা করছে যাতে খবরটি ভাইরাল হয়, নৃশংসতার উদাহরণ হয়ে ওঠে। তাই সংসদ সদস্য আজিমকে হত্যার পর অবলীলায় মরদেহ গুমের জন্য হাড্ডি থেকে মাংস আলাদা করেছে, আলাদা আলাদা ট্রলিতে করে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে, মরদেহের টুকরো নিয়ে যাওয়ার সময় আটকালে কেউ যাতে বুঝতে না পারে, এজন্য মসলা মিশিয়ে ‘খাবার উপযোগী’ মাংসের মতো করা হয়েছে বলে খবরে দেখলাম। যদিও তার মৃত্যু ও মরদেহের স্ট্যাটাস নিয়ে বিতর্ক চলছে।
কয়েক মাস আগে আনারকলি নামে ২০ বছরের ফুটফুটে একটি মেয়ে শ্বশুরের কাটা মাথা নিজের ব্যাগে বহন করছিল সমুদ্রের পানিতে ফেলে দেবে বলে। অথচ একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে এরকম একটা দৃশ্য ভাবলেও গা গুলিয়ে ওঠার কথা। পরে সেই মাথা আনারকলি ফেলে দিয়েছিল চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায়। সম্পত্তি ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে খুন হন ব্যবসায়ী, তার সন্তানদের হাতে। হত্যার আলামত গায়েব করতে গিয়ে স্ত্রী ও সন্তানরা ১০ টুকরো করেছিল হাসান আলীর দেহ। সেখানেই থেমে থাকেনি তারা, পরে নগরীর তিনটি স্থানে ফেলে দিয়ে আসা হয় তার দেহের বিভিন্ন অংশ। লাশ গুম করার এই ভয়াবহ ঘটনা যে কোনো অপরাধ থ্রিলারকে হার মানিয়েছে।
অন্ধকার যুগকে আমরা চিহ্নিত করি ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’র যুগ বলে। সেসময় মানুষ নানাধরনের কুসংস্কার, অনাচার, অবিচার, পাপ কাজ করতো। তুচ্ছ কারণে মানুষ মানুষকে হত্যা করতো, মেয়ে শিশুকে জীবন্ত মাটিচাপা দিতো। সেই যুগের কিছু বৈশিষ্ট্য কি আমরা সভ্যতার এই লগ্নে দাঁড়িয়ে আবার দেখতে পারছি না? আদিম যুগেও মানুষের মধ্যে নৃশংসতা ও বর্বরতা ছিল, তবে সেটা ছিল নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেটা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালানো হয়েছে নানাভাবে। আমরাও অনেকটাই সভ্য হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ পটপরিবর্তিত হচ্ছে কেন?
Advertisement
কেন এই সময়ে এসে আমরা আবার সেই জাহেলিয়াতের যুগে ফিরে যাচ্ছি? আমরা কি আজকাল খুব বেশি হারে ভয়ংকর অপরাধ থ্রিলার দেখছি? নাকি জীবনের নেতিবাচক সত্তা এতটাই প্রকট হয়ে উঠেছে যে ভয়াবহ কাজ করতে হাত কাঁপছে না? লোভ, মাদক দ্রব্য, উদ্ধত আচরণ মানুষকে এতটাই ভয়ংকর করে তুলেছে যে টাকার জন্য তারা সবকিছু করতে পারে।
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর সেই পুত্রবধূ আনারকলি নির্মোহ ভঙ্গিতে বলেছিল, ‘তখন আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি। বিবেক কাজ করলে এত বড় পাপে নিজে জড়িয়ে পড়তাম না।’ নৃশংস এ ঘটনা বিচলিত করেছে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকেও। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মৃত হাসানের খণ্ডিত মাথার অংশটি দূর থেকে হয়তো আমাদের দেখছে, ডাকছে।”
এমপি আজিমের মৃত্যু, মরদেহ, খুনের পদ্ধতি, লাশ উধাও হয়ে যাওয়া, লাশের বিভিন্ন টুকরা প্লাস্টিকের ব্যাগসহ শিয়াল খেয়ে ফেলার গল্প শুনে মনে হয় কোনো ক্রাইম থ্রিলারের গল্প শুনছি। এর আগে রাউজানে কলেজছাত্র শিবলিকে হত্যার পর টুকরা টুকরা করে কেটেছে খুনিরা। শরীর থেকে মাংস কেটে আলাদা করেছে, যেন কেউ লাশটি শনাক্ত না করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটা বিভিন্ন ধরনের হত্যাকাণ্ডের নির্মম দিকটি আমাদের সবাইকে খুব বিচলিত করছে। ‘হত্যা’ স্বাভাবিকভাবেই ভয়াবহ ও হৃদয়হীন ব্যাপার। সেখানে যখন বাড়তি বীভৎসতা যোগ হয়, তখন স্বভাবতই আতংক আরও বেড়ে যায়। নিজেকে অনেক বেশি অনিরাপদ মনে হয়।
বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যার কথা আমরা কেউ ভুলে যাইনি। একজন মেধাবী ছাত্রকে আরও দশজন মেধাবী ছাত্র এমন করে দীর্ঘসময় পিটিয়ে হত্যা করলো, যা অকল্পনীয়। এ ঘটনা সবাইকে স্থবির করে দিয়েছিল। বুয়েটের মতো এতো নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা পড়ছে, সেইসব ছাত্র আর নরমানুষ হত্যাকারীদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
Advertisement
মানুষের রোষ ও অপরাধ প্রবণতা সংঘবদ্ধ রূপ পেয়েছে। আমরা দেখেছি কোরআন অবমাননার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে হত্যা করা হয়েছে শহীদুন্নবী জুয়েলকে। কেবল হত্যা করেই থামেনি জনতা। মরদেহটির গলায় দড়ি দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে উত্তপ্ত আগুনে নিক্ষেপ করেছে এবং দাঁড়িয়ে দেখেছে কীভাবে মানুষটির শরীর জ্বলেপুড়ে কয়লা হয়ে গেলো। সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেছে শত শত মানুষ। এলাকার শিশু-কিশোরসহ সবাই সে মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই যে অপরাধের ব্যাপারে একধরনের অভ্যস্ততা তৈরি হচ্ছে, আসল ভয়টা কিন্তু সেখানেই।
সুনামগঞ্জে বাবা ও চাচা নির্মমভাবে খুন করেছে শিশু তুহিনকে, শুধু প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য। শিশুটির মুখে বালু গুঁজে হত্যা করেছে তারই স্বজন। ছেলেধরা সন্দেহে ঢাকার বাড্ডায় রেণু নামের এক অভিভাবককে গণপিটুনিতে প্রাণ দিতে হয়েছে। কেউ কাউকে হত্যা করতে চাইলে তো সহজ পদ্ধতিতেই হত্যা করতে পারে, তাহলে কেন নানারকম ভয়ংকর উপায় খুঁজে বের করছে? অভিনবত্ব দেখানোর জন্য নাকি সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য? সত্যি আজ আমরা সমাজের এই নেতিবাচক ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করে আতংকগ্রস্ত, উদ্বিগ্ন ও হতাশ হচ্ছি।
শুধু হত্যা করার ক্ষেত্রে যে অমানবিকতা বেড়েছে, তা নয়। অপরাধ প্রত্যক্ষ করার ব্যাপারেও মানুষ ‘সহনশীল’ হয়ে উঠেছে। যেমন সিলেটে শিশু রাজনকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করছিল এক যুবক, অন্য একজন যুবক তা ভিডিও করেছে। পাশে দাঁড়িয়ে আরও কয়েকজন সেই দৃশ্য দেখেছে, কেউ বাধা দেয়নি। ভাবটা এমন ছিল যেন তারা খেলা দেখছে।
মনোবিজ্ঞান মানুষের মনের এই বীভৎস দিকটিকে কীভাবে দেখছে? জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘খুব ছোটবেলা থেকেই কোনো শিশুকে যদি বোঝানো হয় জগতে শক্তি প্রয়োগই একমাত্র সম্পদ, তখন তার জ্ঞান বিকাশের জগতে একধরনের পরিবর্তন ঘটতে থাকে।” মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মতে, এই অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণের পেছনে থাকে মানুষের অবদমিত কামনা-বাসনা, যাকে তিনি তুলনা করেছেন অবচেতন মনের দরজা খুলে দেওয়ার সঙ্গে। অবচেতনে মানুষ যা কামনা করে, চেতন মনে সে তার শিক্ষা, সভ্যতা, সামাজিকতা আর নৈতিকতা দিয়ে সেগুলো ঢেকে রাখে। এই অবদমিত চাহিদাগুলো সরাসরি পূরণ হয় না বলে, হিংস্রতা আর নৃশংসতার মধ্য দিয়ে ঘুরপথে পূরণ করার চেষ্টা চলে এবং তখনই নিষ্ঠুরতার প্রকাশ ঘটে।
মানুষের মধ্যে এই হিংস্রতার ব্যাখ্যায় অন্য মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, একজন মানুষ নিজের হতাশা থেকেই মূলত আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। নিজের হতাশা কাটাতে সে বেছে নেয় দুর্বল একজনকে। এই দুর্বলের ওপর হিংস্রতা দেখিয়ে সে একধরনের মানসিক পরিপূর্ণতা লাভ করে এবং হিংস্রতার স্বপক্ষে নিজস্ব যুক্তি তৈরি করে। এই তত্ত্বকে বলা হয় ‘ফ্রাস্টেশন-অ্যাগ্রেশন হাইপোথিসিস’।”
মানুষের স্বভাবের ভেতরেই একধরনের ক্রোধ ও আক্রমণাত্মক বৈশিষ্ট্য থাকে। সামাজিক রীতিনীতি, পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক আচরণবোধ দিয়ে মানুষ তা বশে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষের ভেতরে লালিত এই প্রবৃত্তিগুলো পারিপার্শ্বিকতার কারণে অনেক সময় ভয়ানকভাবে প্রকাশিত হয়। সমাজে সেই কারণগুলো যত বাড়বে, মানুষের ভেতরে থাকা অবদমিত ক্রোধ ততই বেশি প্রকাশিত হবে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, হঠাৎ রেগে যাওয়া, রেগে গিয়ে চরম নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়ে আরেকটি জীবন শেষ করে ফেলার মানসিকতার পেছনে কতগুলো বিষয় সরাসরি দায়ী। যেমন, নিজেকে কোনো দিক দিয়ে শক্তিশালী ভাবা এবং কোনো আচরণের জন্য জবাবদিহি করতে হবে না ও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না বলে বিশ্বাস করা। পরিবারে বা চারপাশে এ ধরনের অন্যায় আর অমানবিক আচরণ দেখে নিজের মধ্যে সেগুলো লালন করা এবং সময়মতো নিষ্ঠুর আচরণ করা। জ্ঞানের বিকাশ (কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট) আর নৈতিকতার বিকাশ ঠিকমতো না হওয়া।
মানসিক সমস্যা থাকলে অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ করার প্রবণতা, এমনকি হত্যা করার ইচ্ছা প্রবল হতে পারে। এছাড়া আছে আবেগ নিয়ন্ত্রণের চর্চা না থাকা ও মাদকের প্রভাব। বলা যায় বাংলাদেশে বিচারহীনতা ও জবাবদিহিতার চর্চা না থাকার কারণে নির্মম অপরাধের হার বাড়ছে। এছাড়া সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও অল্প সময়ে ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা যত বাড়ছে, মানুষ ততই অপরাধী হয়ে উঠছে।
এর আগে আমরা দেখেছি শিশু শ্রমিক রাসেলকে পায়ুপথে কম্প্রেসার মেশিনের পাইপ ঢুকিয়ে বাতাস দিয়ে হত্যা করেছে তার মালিক। অতিরিক্ত বাতাসে শরীরের নাড়িভুঁড়ি, পাকস্থলিসহ বিভিন্ন অন্ত্র ছিড়ে যায়। ঠিক একইভাবে রাজবাড়ীতে একটি ঘোড়ার চার পা বেঁধে পায়ুপথে ও মূত্রনালিতে বাঁশের লাঠি ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শত্রুতা ছিল ঘোড়ার মালিকের সঙ্গে, কিন্তু মারা যেতে হলো ঘোড়াটিকে। আরও ভয়াবহভাবে হত্যা করা হয়েছিল বগুড়ার কাহালু এবিসি টাইলস কারখানায় রাসেল ও রুবেলকে, খুলনায় শিশু রাকিব এবং নারায়ণগঞ্জে শিশু সাগর বর্মণকে।
নৃশংসতা চর্চা করার ব্যাপারে আমাদের মধ্যে একধরনের অভ্যস্ততা হচ্ছে। দেশে যেমন পৈশাচিক কায়দায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে ঠিক তেমনি সেইসব পৈশাচিক হত্যার দৃশ্য, ধর্ষণ ও মারধরের দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে, যাতে অন্য মানুষ দেখে বিকৃত আনন্দ পায়। এতে সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজের। চারপাশের ভয়াবহ ঘটনাবলি দেখে বেশ বুঝতে পারছি সমাজ এমন অস্থির পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক চিন্তার জায়গাটা দখল করছে অস্বাভাবিকতা। সহিংসতা, হিংস্রতা দিনে দিনে যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছে।
অপরাধ করে দিনের পর দিন যখন অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তখন অন্য মানুষের ভেতর একধরনের হতাশা তৈরি হয়। তারা ভাবতে শেখে এভাবে হত্যা বা ধর্ষণ বা অন্য কোনো অপরাধ করে, তারাও পার পেয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সমাজের বেশিরভাগ মানুষ আইন নয়, বিবেক দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। আইন অমান্য করেন কিছুসংখ্যক প্রভাবশালী মানুষ। এরই প্রভাব পড়ে অন্যদের ওপর। এতে তারা ন্যায় আর অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে ভুলে যায়।
কিশোর-তরুণ ও যুব সমাজ সবসময় এমন কিছু অনুসরণ করার চেষ্টা করে, যা একটু অন্যধরনের। অপরাধের ক্ষেত্রেও সে কথা প্রযোজ্য। ভারতীয় চ্যানেলের “ক্রাইম ওয়াচ” খুব জনপ্রিয় সিরিজ হলেও এই সিরিজ নিয়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছে। কারণ এগুলো দেখে অনেকেই অপরাধের নিত্য-নতুন উপায় নির্বাচন করেছে এবং অপরাধ ঘটিয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু ভিডিও বা ইন্টারনেটভিত্তিক গেম, যেখানে সহিংসতা আর নিষ্ঠুরতা দেখানো হয়, সেগুলোর চর্চা করলে ব্যবহারকারীদের মধ্যে আগ্রাসী আচরণ তৈরি হয়। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন, সহিংসতায় পূর্ণ টিভি অনুষ্ঠান বা চলচ্চিত্র দেখতে থাকলে শিশুদের মধ্যে সহিংস আচরণ করার প্রবণতা বেড়ে যায়।
মানুষ আজ শুধু মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করছে না, করছে পশু পাখিকেও। একজন মানুষ কোনো কারণ ছাড়াই একটি নীল মাছরাঙা পাখিকে মেরে ও তার ডিমগুলোকে ভেঙে সেই ছবি ফেসবুকে দিয়েছে। পাখিটির কী দোষ ছিল আমি জানি না। খবরে দেখলাম সেই হত্যাকারী লোকটা মাছরাঙা পাখিটির বাসায় হামলা চালিয়ে মা পাখিটির মাথা ছিঁড়ে আলাদা করেছে এবং ডিমগুলোর পাশে রেখে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কেন কোনো কারণ ছাড়াই পশুপাখি হত্যা করে? যে তরুণরা টিলার ওপরে আশ্রয় নেওয়া শিয়াল, বাগডাসকে মেরেছে, যারা বন্যার সময় ঘরে আশ্রয় নেওয়া হরিণটি খেয়ে ফেলেছে, যারা গন্ধগোকুল মাকে মেরে ফেলেছে, যারা কুকুরের হাত-পা ভেঙে দিয়েছে, বিড়ালকে দড়িতে ঝুলিয়ে ফাঁসি দিয়েছে, আহত শামুকখোল পাখিদের রান্না করে খেয়ে ফেলেছে, বিষ খাইয়ে মাছ, বানর ও পাখি মেরে ফেলেছে, এরা আসলে সবাই খুনি। এদের মতো মানুষই খুন করেছে আবরার, তসলিমা রেনু, বিশ্বজিৎ দাস, দীপন, অভিজিৎ রায় ও নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায়কে। সবকিছু মিলিয়ে বলতে হচ্ছে আমরা অন্ধকারের দিকে যাচ্ছি, এই অন্ধকার থেকে মুক্তির পথ কোথায়?
২৮ মে, ২০২৪লেখক : যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক।
এইচআর/ফারুক/এমএস