ক্যাম্পাস

ইবিতে গবেষণাযাত্রার শুরুতেই দুর্ভোগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এমফিল ও পিএইচডি গবেষণার ভর্তি পরীক্ষায় সনাতনী আবেদন পদ্ধতির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আগ্রহীদের। অনলাইনে আবেদনের সুযোগ না রাখায় গবেষণা যাত্রার শুরুই হচ্ছে ভোগান্তির মধ্য দিয়ে।

Advertisement

গত ১৪ মে এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০ মে থেকে আবেদন শুরু হয়েছে। চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এক্ষেত্রে আগ্রহী প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ইবি শাখায় বিবিধ রশিদে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ব্যাংক থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। পরে যথাযথভাবে ফরম পূরণ করে ৩০ জুনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি ভিন্ন হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন গবেষণায় ভর্তিচ্ছুরা। তাদের ভর্তি পরীক্ষার আবেদন জমা দিতেই একাধিকবার ক্যাম্পাসে আসতে হচ্ছে। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৬ জুন থেকে গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হচ্ছে। খুলবে ২৯ জুন।

ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমফিল ও পিএইচডির জন্য পৃথকভাবে ১০০টি করে মোট ২০০টি আবেদন ফরম দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে আবেদনের প্রথম দুই দিনে ফরম বিক্রি হয়েছে চারটি। প্রথম দিন দুইটি ও দ্বিতীয় দিনে দুইটি। প্রথম দিন ২০ মে ফরম নেওয়া প্রার্থীদের একই দিনেই সংশ্লিষ্ট বিভাগে ফরম জমা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও ২১ মে থেকে টানা চারদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পরবর্তী দিনগুলোতে ফরম নেওয়া প্রার্থীদের অপেক্ষা করতে হয় শনিবার পর্যন্ত। ফলে আবেদনপ্রার্থীকে পুনরায় ক্যাম্পাসে এসে বিভাগে ফরম জমা দিতে হয়।

আরও পড়ুনইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণাগারের রাসায়নিক বর্জ্যে হুমকিতে পরিবেশ জারুল-সোনালু-কৃষ্ণচূড়ায় রঙিন ইবি ক্যাম্পাস পেনশন স্কিম প্রত্যাহার দাবিতে ইবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি ইবি ক্যাম্পাসজুড়ে ময়লার স্তূপ নিষেধাজ্ঞা না মেনে ভবনে প্রবেশ, ইবির দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ    

এদিকে বৌদ্ধ পূর্ণিমা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে তিনদিন ব্যাংক বন্ধ থাকে। ফলে আবেদন করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন গবেষণা ইচ্ছুকরা। বেশি বিড়ম্বনায় পড়েছেন চাকরিরত প্রার্থীরা। ভোগান্তির কারণে অনেকে আবেদন করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

Advertisement

লাবিব হাসান নামের আবেদনকারী বলেন, আমি একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা করি। ছুটি ম্যানেজ করা আমাদের জন্য কঠিন। যেহেতু শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকে এজন্য ওইদিন আবেদন করতে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখলাম আবেদনপত্র নিতে হবে ব্যাংক থেকে। ব্যাংক বন্ধ থাকায় সেদিন আবেদন না করেই চলে আসি। পরে আবার রবিবার সেই আবেদন সংগ্রহ করতে হয়েছে। অনলাইন ব্যবস্থা থাকলে এটা অনেক সহজেই করা যেত। ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। যেহেতু আবেদন করলেই সুযোগ মিলবে না, তাই অনেকেই এই জটিলতার জন্য ইচ্ছে থাকলেও আবেদন করছেন না শেষ পর্যন্ত।

গবেষণায় ইচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফেরদাউসুর রহমান বলেন, বেশ কয়েকদিন থেকেই ভাবছি আবেদন করবো। কিন্তু কর্মস্থল থেকে ছুটি না পাওয়ায় এখনো ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি। এদিকে আবার ক্যাম্পাসে গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হবে। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে গিয়ে আবেদন করা অনেকটা কষ্টের। সব ক্ষেত্রে অনলাইন আবেদন পদ্ধতি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় এখনো গবেষণার আবেদনের ক্ষেত্রে এটি করতে পারেনি। এতে গবেষণায় ইচ্ছুকরা শুরুতেই ভোগান্তিতে পড়ছে।

সনাতন পদ্ধতি ও আবেদনের জন্য স্বল্প সময় দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষক সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

আরও পড়ুন ইবি উপাচার্যের দুর্নীতি তদন্তে ক্যাম্পাসে ইউজিসির তদন্ত দল সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন বৈষম্যমূলক ছাত্রলীগ নেতার পাতে বাসি রোস্ট, দোকান বন্ধ ইবির প্রথম বাস সংরক্ষণের দাবি শিক্ষার্থীদের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়/বিরল রোগে মারা গেলেন ব্যাচের ফার্স্ট গার্ল সামিয়া

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মিয়া রাসিদুজ্জামান বলেন, ‘আবেদনের শর্ত ও প্রক্রিয়া জটিল করায় আমরা গবেষক খুবই কম পাচ্ছি। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হলে খুব সহজ করা সম্ভব। এত অল্প সময়ে অনেকে বুঝে উঠতেই আবেদনের সময় শেষ হয়ে যায়। প্রশাসন চাইলে আবেদনের সময় বাড়াতে পারে।’

Advertisement

আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘এসব আবেদন এখন অনলাইনে সহজেই করা যায়। প্রশাসন আইসিটি সেলকে বললে আবেদন প্রক্রিয়াটা সহজেই অনলাইনে করে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলেনি। প্রশাসন যেভাবে চেয়েছে সে প্রক্রিয়াতেই হচ্ছে।’

আরও পড়ুন একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ পেলেন তিন বন্ধু ৮ বছর পর ইবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে সন্তুষ্ট শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

সনাতনী পদ্ধতিতে আবেদন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো. বদিউজ্জামান বলেন, সিন্ডিকেট থেকে পাস হওয়া আবেদনের যে নিয়ম রয়েছে সেভাবেই বিজ্ঞপ্তি করা হয়েছে। আবেদন পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হলে প্রশাসনকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘এটি একাডেমিক শাখার দায়িত্ব। বর্তমান প্রযুক্তির এই সময়ে সনাতন পদ্ধতি ও এমন ভোগান্তি প্রত্যাশিত নয়। আমি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেব কেন অনলাইন পদ্ধতি রাখা হলো না। এ বছর যেহেতু হয়ে গেছে, আগামীতে অবশ্যই বিষয়গুলো আমরা ভেবে দেখব।’

এমআইএন/এমএমএআর/জেআইএম