আইন-আদালত

কারাগারে বিএনপির ১৩ নেতার মৃত্যু নিয়ে আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ

 

দেশের বিভিন্ন কারাগারে কয়েক মাসের ব্যবধানে বিএনপির ১৩ জন নেতাকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ বরাবর করা আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

শুনানিতে আদালত বলেছেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ ঘটনাটি দেখবো না। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিক মারা যাওয়ার ব্যাখ্যা দিতে হবে। কোনো লোক বিনাবিচারে মারা যাক, আমরা চাই না।

Advertisement

আদেশের পর রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, গাজীপুর, বাগেরহাট, নওগা, নাটোরসহ ১৩ জেলার কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দিয়েছিলাম কারাগারে বিএনপি নিহত ১৩ নেতাদের অসুস্থতার রেকর্ড ও ময়না তদন্ত (পোস্ট মর্টেম) রিপোের্ট যেন পাঠায়। কিন্তু ওই চিঠির কোনো উত্তর আমরা পায়নি।

তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তাদের অসুস্থতার বিষয়ে আমাদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিতে বলেছেন।

গত বছর এবং চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, সাতক্ষীরাসহ দেশের কারা কর্তৃপক্ষের হেফাজতে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী মারা গেছেন।

কারা হেফাজতে মারা যাওয়া বিএনপির কর্মীরা হলেন- ঢাকার ইদ্রিস আলী (৬০), মো. আবুল বাসার (৩৬), চট্টগ্রামের গোলাপুর রহমান (৬৩), রাজশাহীর মো. আবুল কালাম আজাদ, ঢাকার ইমতিয়াজ হাসান বুলবুল, গাজীপুরের আসাদুজ্জামান হীরা খান (৪৫), রাজশাহীর মনিরুল ইসলাম (৫২), নওগাঁর মজিবুর রহমান মন্ডল (৫৫), গাজীপুরের শফিউদ্দিন মাস্টার (৭৫), ঢাকার ফজলুর রহমান কাজল, খুলনার কামাল হোসেন (৪৩), সাতক্ষীরার আব্দুস সাত্তার (৫৮), রংপুরের মনোয়ারুল ইসলাম (৩৫)। তারা সবাই বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ছিলেন।

Advertisement

বিএনপি এ নেতাকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, গত তিন মাসে কারা নির্যাতনে বিএনপির ১৩ জন নেতার মৃত্যুর অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, অতিমাত্রায় উৎসাহী কর্মকর্তারা গেস্টাপোদের ন্যায় মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি কারাগারের ভেতরে কারাবিধির সব সুযোগ-সুবিধা কেড়ে নিয়ে বন্দিদের ওপর চালাচ্ছে বীভৎস নিপীড়ন। খাওয়ার কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। ছাত্রলীগের সাবেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী ক্যাডারদের কারা কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দিয়ে শেখ হাসিনা কারাগারেও বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালাতে লেলিয়ে দিয়েছেন। তারা প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন। কারা হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের শিকার বিএনপির নেতাকর্মীদের কারও না কারও মৃত্যুর সংবাদ আসছে প্রায়ই। গত তিন মাসে কারাগারে নির্যাতন করে বিএনপির ১৩ নেতার মৃত্যু হয়েছে কারা হেফাজতে। প্রত্যেকটি মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

এফএইচ/এমএএইচ/