চালকদের মারধরের ও হাতকড়া পরানোর অভিযোগে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ৩ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ডেকেছে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা।
Advertisement
মঙ্গলবার (২৮ মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘটে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে অটোরিকশায় ও ইজিবাইকে রোগীদের নিয়ে যাওয়া আসা করছেন স্বজনরা।
অ্যাম্বুলেন্স চালকদের তিনদফা দাবি হলো, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালকদের রোগী পরিবহনের সুবিধা দেওয়া, হাসপাতালের ভেতরে বৈধ অ্যাম্বুলেন্স পার্কিংয়ের সুবিধা দেওয়া ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মারধরের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া।
হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জানান, শজিমেক হাসপাতালে প্রায় ৪০টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রোগী ও মরদেহ পরিবহন করে থাকে। হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং থাকায় শজিমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. জুলফিকার আলম চালকদের মারধর ও গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে দেন। তাদের দাবি, হাসপাতালের ভেতরে অ্যাম্বুলেন্স পার্কিং রাখায় গত তিন মাসে অন্তত ২০ জন চালককে মারধর করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে রোগী নামিয়ে দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক ও তার সহকারীকে মারধর করে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে আটক রাখা হয়। পরে ট্রাফিক আইনে এক হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা দিয়ে তাদের মুক্তি মেলে।
Advertisement
জানা গেছে, ১২০০ শয্যার বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে প্রতিদিন ধারণ ক্ষমতার চাইতে দ্বিগুণ রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকেন। এছাড়াও আউটডোরে আশাপাশের জেলাসহ দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে হঠাৎ ধর্মঘট ডাকায় বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। কেউ উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা রোগীদের নিয়ে আবার কেউ বিপাকে পড়েছেন স্বজনদের মরদেহ নিয়ে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বগুড়ার শেরপুরের বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম হাসপাতালে মারা গেছেন৷ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেও অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে ছেলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিতে পারেননি বাবা জসিম উদ্দিন৷
তিনি বলেন, জীবনের শেষ সম্বলটুকু চলে গেছে। তিন ঘণ্টা ধরে তার মরদেহ পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্স পাচ্ছিনা৷ ছেলেকে ভালোভাবে দাফন করতে পারলে একটু মুক্তি পাই।
বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতি শজিমেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, আমরা রোগী পরিবহনের জরুরি সেবায় কাজ করে থাকি। আমাদের কেন মারধর ও হেনস্তা করা হবে? একজন হাসপাতালের পরিচালক আমাদের কেন মারধর করে হতকড়া পড়িয়ে পুলিশের হাতে দেবেন? আমরাতো আসামি নই।
Advertisement
মারধরের শিকার অ্যাম্বুলেন চালক আরিফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সোমবার রাতে একজন রোগীকে অক্সিজেনসহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নামিয়ে দিচ্ছিলাম। এজন্য কিছুটা দেরি হয়। হাসপাতালের পরিচালক কোনো কিছু না শুনেই আমাকে ও সহকারীকে মারধর করেন। পরে উনার নির্দেশে পুলিশ আমাদের হাতকড়া পরিয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে আটক করে। ট্রাফিক আইনে এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছি।
অ্যাম্বুলেন্স চালকদের মারধর ও ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে শজিমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জটলা পাকানোর সুযোগ নেই। এছাড়াও তারা রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন৷ সোমবার কাউকে মারধর ও আটকের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ফিটনেস না থাকায় পুলিশ ট্রাফিক আইনে জরিমানা করেছে।
তিনি দাবি করেন, হাসপাতালের বাইরের অ্যাম্বুলেন্সগুলো না চললেও সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে।
এনআইবি/এমএস