জাতীয়

স্বাচ্ছন্দ্যে সাঁতার শিখিয়েছেন ৯১.৪ ভাগ নারী প্রশিক্ষক

পিরিয়ড চলাকালীন কী ধরনের ব্যবস্থাপনা থাকলে নারী প্রশিক্ষকরা সাঁতার প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতে পারবেন, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, সাঁতার প্রশিক্ষণের কাজে নিযুক্ত ৯১ দশমিক ৪ ভাগ প্রশিক্ষক সফলভাবে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে পেরেছেন ও স্বাচ্ছন্দ্যে সাঁতার শিখিয়েছেন।

Advertisement

বাংলাদেশে এ গবেষণা চালায় সিআইপিআরবি। গবেষণার অংশ হিসেবে কমিউনিটি সাঁতার প্রশিক্ষকদের মাসিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রথমবারের মতো ট্রায়াল দেওয়া হয় এই মেন্সট্রুয়াল কাপের।

সোমবার (২৭ মে) সিরডাপ মিলনায়তনে গবেষণার তথ্য-উপাত্ত জানাতে একটি সভার আয়োজন করে সিআইপিআরবি। সেখানেই তারা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে মারা যায় ৪০ জন শিশু। এই মৃত্যু রোধে ২০১৬ সাল থেকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ও বরগুনা জেলার তালতলী ও বেতাগী উপজেলায় ‘প্রজেক্ট ভাসা’ বাস্তবায়ন করছে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ও রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন (আরএনএলআই)। এই প্রকল্পের আওতায় ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

Advertisement

২০২২ সালে প্রশিক্ষণের কাজে নিযুক্ত কমিউনিটি সাঁতার প্রশিক্ষকদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই ছিলেন নারী। তাদের কাজে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল মাসিক চলাকালে পানিতে নামা। এ সময়ে তারা কমপক্ষে দু’দিন সাঁতার শেখানো থেকে বিরত থেকেছেন যাতে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা থেকে প্রতি মাসে বাদ পড়েছিল ৯২ দিনের কর্মহীনতা। এসময়ে প্রায় ৬০০ শিশুকে সাঁতার শেখানো সম্ভব ছিল।

২০২৩ সালে সাঁতার প্রশিক্ষক হিসেবে প্রজেক্ট ভাষায় যুক্ত হন ৮১ জন নারী যাদের বয়স ১৮-৪০ এর মধ্যে। মৌসুমের শুরুতে তাদের বেসিক প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে মাসিক ব্যবস্থাপনা ও মাসিক কাপ পরিধান-পরিষ্কার-খোলা ও সংরক্ষণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের প্রত্যেককে মাসিক কাপ, জীবাণুমুক্তকরণ পাত্র ও ব্যবহারের নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭০ জন মৌসুমের শেষ পর্যন্ত কাজ করেছেন। বাকি ১১ জন বিয়ে, অন্য চাকরিতে যোগদান এসব কারণে প্রকল্প থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে জরিপ করে দেখা গেছে, ৭০ জনের মধ্যে ৬৪ জনই (৯১.৪ শতাংশ) সফলভাবে মাসিক কাপ ব্যবহার করতে পেরেছেন ও স্বাচ্ছন্দ্যে পানিতে নেমে সাঁতার শিখিয়েছেন। ৬ জন প্রশিক্ষক অনিয়মিত মাসিক, গর্ভধারণ এসব কারণে কাপ ব্যবহার করার সুযোগ পাননি কিন্তু সবাই মাসিক কাপকে পছন্দ করেছেন। ব্যবহারকারীদের ৬৪ জনের মধ্যে ৬৩ জন মাসিক কাপের ব্যবহার অব্যাহত রাখবেন বলেছেন এবং ৬৪ জনই তাদের পরিচিত সব নারীকে মাসিক কাপ ব্যবহারের স্বস্তি ও উপকারের কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশই কেবল নয়, নারী সাঁতার প্রশিক্ষকদের মাসিক সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য এমন গবেষণা বিশ্বে প্রথম। যা সাঁতার প্রশিক্ষণ ও মাসিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক নীতিমালা তৈরিতে প্রথম ও অনন্য উদাহরণ।

Advertisement

সাঁতারের পাশাপাশি অন্যান্য খেলায় যে নারীরা আছেন কিংবা বাংলাদেশের প্রজনন বয়সসীমায় থাকা নারীদের কাছে এই মাসিক কাপ কতট গ্রহণযোগ্য আর উপযোগী, তা গবেষণা করে দেখা যেতে পারে।

গবেষণা থেকে নীতিনির্ধারকদের কাছে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো, মেন্সট্রুয়াল কাপ যেন দেশের বাজারে সুলভে পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা করা। আমদানি সহজ করা ও শুল্ক কমানো। দেশি শিল্প কারখানায় উৎপাদন করা যায় সে জন্য দেশীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেওয়া।

তারা জানান, স্যানিটারি প্যাডের চেয়ে মাসিক কাপ অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। কেননা, একটা মাসিক কাপ ৫ বছরের বেশি সময় পর্যন্ত পুনরায় ব্যবহার করা যায়। যাতে নারীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। অপরদিকে পিরিয়ডকালীন অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

আইএইচআর/এসএনআর/জিকেএস