ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা প্রাক-বর্ষা (মার্চ-মে) মৌসুমের জন্য অস্বাভাবিক বলছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এতে এ মুহূর্তে চট্টগ্রাম নগরের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে আছে।
Advertisement
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ রেজাউল করিম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বৃষ্টির কারণে নগরজুড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। আগামীকালও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।’
চলতি মৌসুমে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জলাবদ্ধতায় পড়তে হলো চট্টগ্রাম নগরের বাসিন্দাদের। টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা মারাত্মক রূপধারণ করেছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরের একটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনসহ বিস্তীর্ন এলাকা। এতে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন আছেন চট্টগ্রামের ২০ শতাংশ গ্রাহক। অন্যদিকে, বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে দুইদিন পরও স্বাভাবিক হয়নি চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরের মানুষ।
ভারী বর্ষণের মধ্যেই নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার টেক্সটাইল জেড আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেওয়ালচাপা পড়ে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়।
Advertisement
এর আগে রোবরার রাত ১০টার পর থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি শুরু হয়। তার সঙ্গে যোগ হয় জোয়ারের পানি। দিনগত রাত দেড়টার দিকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হতে শুরু করে। ফলে শহরের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী হাজারো মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। সোমবার সকাল থেকে স্থায়ী রূপ পেয়েছে জলাবদ্ধতা।
তলিয়ে গেছে চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, বাদুড়তলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, কালারপোল, বড়পোল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকা। সর্বশেষ আজ সন্ধ্যা ৬টা এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার সকাল থেকে পথে বের হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। এরমধ্যে নগরীর প্রবর্তক মোড় ও বহদ্দারহাটের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি করুণ। এ সড়কে কোমরসমান পানি ঠেলে রিকশা চলছে, পানির মধ্যেই হেঁটে চলাচল করছেন পথচারীরা।
নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নাসির হোসেন বলেন, সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি আমাদের এলাকায় পানি। অনেক কষ্টে তা পেরিয়ে বহদ্দারহাট মোড়ে আসি। সেখানেও পানি। মুরাদপুর এলাকায়ও ডুবেছে। রিকশায় আর হেঁটে অনেক কষ্টে দুই ঘণ্টায় অক্সিজেন মোড়ে পৌঁছেছি।’
Advertisement
চান্দগাঁও সমশেরপাড়ার গৃহিণী নাজমা বেগম বলেন, ‘বেলা ১১টার বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এখন ঘরের ভেতর এক হাঁটুপানি। আগে কখনো এত পানি হয়নি। স্বামী-সন্তান নিয়ে খাটে ওপর বসে আছি। রান্নাবান্না বন্ধ, হোটেল থেকে কিনে এনে খাচ্ছি।’
এর আগে ৬ মে এক দফা জলাবদ্ধতায় ডুবেছিল চট্টগ্রাম নগর। ওই দিন বিকেলে টানা এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বন্দরনগরীর নিচু এলাকা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও গোড়ালি থেকে হাঁটুসমান পানি জমেছিল সেদিন।
এএজেড/এমএএইচ/এএসএম