বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সীতাকুণ্ডের আর আর টেক্সটাইল ও রাজশাহী টেক্সটাইল মিলটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) পদ্ধতিতে চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
Advertisement
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৭ মে) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্ব এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। দুটি বস্ত্রকল পিপিপি পদ্ধতিতে চালু করার নীতিগত অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বিদ্যুতের তিনটি প্রস্তাব সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করে কেনার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান জানান, বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত আর আর টেক্সটাইল মিলটি পিপিপি ভিত্তিতে চালু করার লক্ষ্যে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য চুক্তিতে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
Advertisement
জানা গেছে, বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন আর আর টেক্সটাইল মিলটি ১৯৬৩ সালে ১৯.৪৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে। মিলটি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত উৎপাদন চলমান ছিল। বন্ধ করা মিলটি পিপিপি ভিত্তিতে পুনরায় চালু করার প্রস্তাব ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদিত হয়।
পরবর্তীতে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে যা কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা সর্বোচ্চ স্কোর অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান প্রাণ কনসোর্টিয়াম-এর সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে সম্পাদিত চুক্তি সইয়ের অনুমোদন দেয় কমিটি।
বেসরকারি অংশীদার মিলটির ভূমি ব্যবহার বাবদ আপফ্রন্ট প্রিমিয়াম হিসেবে এককালীন ১০ কোটি টাকা এবং ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষে পরবর্তী বছর থেকে ৩ কোটি ২২ লাখ টাকা বিটিএমসি’কে প্রদান করবে। চুক্তির মেয়াদ হবে ৩০ বছর যা সন্তোষজনক মেয়াদান্তে নবায়নযোগ্য।
এদিকে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন রাজশাহী টেক্সটাইল মিলটি পিপিপি ভিত্তিতে চালু করার লক্ষ্যে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য চুক্তি নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান।
Advertisement
জানা গেছে, বিটিএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন রাজশাহী টেক্সটাইল মিলটি ১৯৭৫ সালে রাজশাহীতে ২৬.৩৪ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে। মিলটি ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত উৎপাদন চলমান ছিল। বন্ধ হওয়া মিলটি পিপিপি ভিত্তিতে পুনরায় চালু করার প্রস্তাব ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদিত হয়।
পরবর্তীতে বেসরকারি অংশীদার নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হলে ১টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দাখিল করে যা কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান চরকা টেক্সটাইল লিমিটেডের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদে চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।
এর ফলে বেসরকারি অংশীদার মিলটির ভূমি ব্যবহার বাবদ আপফ্রন্ট প্রিমিয়াম হিসেবে এককালীন ৬ কোটি টাকা এবং ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষে পরবর্তী বছর থেকে ১ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিটিএমসিকে দেবে।
এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের মধ্যে বাবিউবো’র সকল গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাওয়ার ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কো.লি. থেকে ডিজাইন, সাপ্লাই, ইনস্টলেশন, টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং অব স্মার্ট প্রিপ্রেমেন্ট মিটাস উইথ পিএলসি মডিউল অ্যান্ড থ্রি ইয়ার্স অপারেশনাল সাপোর্ট সার্ভিস ক্রয় কার্যটি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
এই ক্রয় কাজের আওতায় ৪০ হাজারটি সিঙ্গেল ফেজ মিটার, ৩২৫টি ডাটা কানেক্টর ইউনিট ক্রয় ও স্থাপন, বিদ্যমান পোস্টপেইড মিটার প্রতিস্থাপন এবং ৩ বছরের অপারেশনাল সাপোর্ট সার্ভিস নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত বাবিউবো’র ৫৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া নির্ধারিতে সময়ের মধ্যে বাবিউবো’র সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেক্ট্রিকাল কো. লি. থেকে ডিজাইন, সাপ্লাই, ইনস্টলেশন, টেস্টিং অ্যান্ড কমিশনিং অব স্মার্ট প্রিপ্রেমেন্ট মিটারস উইথ পিএলসি মডিউল অ্যান্ড থ্রি ইয়ার্স অপারেশনাল সাপোর্ট সার্ভিস ক্রয় কাজটি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
এই ক্রয় কাজের আওতায় ৪০ হাজারটি সিঙ্গেল ফেজ মিটার, ৩২৫টি ডিইউসি ক্রয় ও স্থাপন, বিদ্যমান পোস্টপেইড মিটার প্রতিস্থাপন এবং ৩ বছরের অপারেশনাল সাপোর্ট সার্ভিস নেওয়া হবে।
সচিব জানান, সভায় হবিগঞ্জের বিবিয়ানা দক্ষিণ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘সাপ্লাই অব স্পেয়ার্স, কনজিউঅ্যাবলস অ্যান্ড সিডিউল মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কস ফর ৬ ইয়ার্স’ কার্যটি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩০ হাজার ৬৯৫ ঘণ্টা রানিং আওয়ার অতিক্রম করেছে। ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ইপিসি ঠিকাদারের ওয়ারেন্টি পিরিয়ড শেষ হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সিডিউল মেইটেন্যান্স করা প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিভিন্ন মালামালের মূল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সিমেন্স,জার্মানি। তাই রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে বিবিয়ানা দক্ষিণ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে ব্যয় হতে পারে ৬৪৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯৬ হাজার ৭৪ টাকা।
এমএএস/এমএএইচ/এএসএম