আরও কাছাকাছি ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’, ধেয়ে আসছে দ্রুতগতিতে

বাংলাদেশের উপকূলের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’। বর্তমানে এটি পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে মাত্র ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি গতি বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, রোববার সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়টির এগোনোর গতি ছিল ঘণ্টায় ৬ কিলোমিটার, বিকেলে সেটি ১৩ কিলোমিটার বেগে এগোচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) ও খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

এরই মধ্যে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহও এই মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

আরও পড়ুনসন্ধ্যা ৬টা থেকে উপকূল অতিক্রম করতে পারে রিমালমোংলা-পায়রা বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত

আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি রোববার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বৃষ্টিসহ দমকা বা ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে মোংলার কাছ দিয়ে ভারতের সাগর আইল্যান্ড (পশ্চিমবঙ্গ) ও খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম করতে পারে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র অতিক্রমের পর এর নিম্নভাগ অতিক্রম অব্যাহত থাকবে।

প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে।

এছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহও এ মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।

এদিকে, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর নৌ-মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুনজলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে সুন্দরবনএলাকায় ঢুকেছে পানি, আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন মানুষ

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়টি রিমালের প্রভাবে রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিমি/২৪ ঘণ্টা) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি/২৪ ঘণ্টা) বৃষ্টিপাত হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসেও আশঙ্কা রয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আরএএস/এমকেআর/জেআইএম