যুক্তরাজ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের দিন ঠিক হয়েছে আগামী ৪ জুলাই। এতে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। নির্বাচনের আগে তারা উভয়েই ব্যবসায়ীদের বোঝাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন, দেশ পরিচালনার জন্য তিনিই সেরা।
Advertisement
যুক্তরাজ্যে প্রধান দুই দল যখন নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, তখন দেশটির সাতটি বড় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) সঙ্গে কথা বলেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। সাক্ষাৎকারে তারা জানিয়েছেন, দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কী কী চান।
স্টিভেন ফাইন, পিল হান্টব্রিটিশ বিনিয়োগ ব্যাংক পিল হান্টের প্রধান নির্বাহী চান, যুক্তরাজ্যের পরবর্তী সরকার লন্ডনের ইক্যুইটি বাজার সংস্কারের মাধ্যমে এগিয়ে যাক। এটিকে তিনি দেশের ‘অর্থনীতির ইঞ্জিনরুম’ বলে অভিহিত করেছেন।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
লন্ডনে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ কয়েকটি কোম্পানি শেয়ারবাজার ছেড়ে বেরিয়ে গেছে। এর জন্য তারা কম মূল্যায়ন এবং তারল্যের অভাবকে দায়ী করেছে।
ফাইন আশা করেন, ব্রিটিশ সরকারের ম্যানশন হাউস সংস্কারগুলো চূড়ান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পরবর্তী সরকার ম্যানশন হাউসের প্রতিশ্রুতিগুলো অনুসরণ করা, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ব্যবসা এবং ছোট ও মধ্যম ক্যাপ লিস্টেড কোম্পানিগুলোতে পেনশন মূলধনকে উৎসাহিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মার্টিন সোরেল, এস৪ ক্যাপিটালবিজ্ঞাপনী সংস্থা এস৪ ক্যাপিটাল পিএলসির প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেছেন, ডেপুটি লেবার নেতা অ্যাঞ্জেলা রেনারের প্রস্তাবিত শ্রমিক অধিকার আইন সংস্কারের মতো বিষয়গুলোই ব্যবসাগুলোকে বেশি উদ্বিগ্ন করে।
অনিশ্চয়তা কমানো জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের একটি পরিকল্পনা দরকার। আমি মনে করি, ব্যবসার জন্য প্রধান উদ্বেগ হলো, তারা যা বলছে তা করবে কি না। যুক্তরাজ্যে কম উৎপাদনশীলতা সমাধানেরও আহ্বান জানিয়েছেন সোরেল।
Advertisement
বৈদ্যুতিক পণ্য বিক্রেতা এও ওয়ার্ল্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জন রবার্টস যুক্তরাজ্যের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং তরুণদের সহায়তা করার জন্য জরুরিভিত্তিতে শিক্ষানবিশ লেভি সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন।
তার কথায়, শুল্ক সংস্কার করুন, সঠিক ব্যক্তি ও সংস্থাকে সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করুন; যেমন- এও, এমঅ্যান্ডএস, টেসকো অ্যান্ড টিম্পসন- যারা জানে তারা কী করছে, যারা পাশে আছে, যারা তরুণদের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করতে প্রস্তুত। রবার্টসের মতে, সরকার ভালো তহবিলদাতা। কিন্তু তারা কোনো অপারেটর বা উদ্ভাবক নয়।
আরও পড়ুন>>
যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন ৪ জুলাই সাড়ে ১০ হাজার বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য ভারতীয় মসলা আমদানিতে বাড়তি সতকর্তা যুক্তরাজ্যের টিম মার্টিন, জে ডি ওয়েদারস্পুনজনপ্রিয় পাব চেইন জে ডি ওয়েদারস্পুনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরেই বার এবং রেস্তোঁরাগুলোর জন্য একই হারে কর নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। তার অভিযোগ, বর্তমান নিয়মগুলো তার শিল্পকে অসুবিধায় ফেলেছে।
মার্টিন বলেন, আতিথেয়তা শিল্পকে খাদ্য ও অ্যালকোহলের জন্য উচ্চহারে কর দিতে হয়। এর অর্থ, সুপারমার্কেট গোষ্ঠীগুলো বিয়ার ও ওয়াইনের দাম কম রাখতে পারে।
তার কথায়, করের নীতি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত হওয়া উচিত। তাই ওয়েদারস্পুন নতুন সরকারকে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানাচ্ছে।
গ্রাহাম প্রোথেরো, এমজে গ্লিসনকনস্ট্রাকশন কোম্পানি এমজে গ্লিসনের সিইও বলেছেন, নতুন বাড়ির ঘাটতি কমাতে সাহায্য করার জন্য তিনটি জিনিস দরকার। একটি লক্ষ্যযুক্ত আর্থিক উদ্দীপনা দিয়ে প্রথমবার ক্রেতার বাজার শুরু করুন, দক্ষ ব্যবসায়ীদের গুরুতর ঘাটতি মেটাতে আমাদের সাহায্য করুন এবং সর্বোপরি, পরিকল্পনা ব্যবস্থাকে উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত করে তুলুন।
ব্রিটিশ সরকার তার ২০১৯ সালের ইশতেহারে ইংল্যান্ডে বছরে তিন লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু তারা সেই লক্ষ্যের কাছাকাছি যেতে ব্যর্থ হয়েছে।
আরও পড়ুন>>
নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হারবে ঋষি সুনাকের দল, বলছে জরিপ আর দেরি নয়, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডায় পাঠানো হচ্ছে: সুনাক শেখ হাসিনার পাশে হাঁটু গেড়ে বসা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, ছবি ভাইরাল জেনিন হার্ট, ইনোভেট ফাইন্যান্সযুক্তরাজ্যের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল এখনো তাদের ইশতেহার প্রকাশ না করলেও অর্থ-প্রযুক্তি সংস্থা ইনোভেট ফাইন্যান্স নিজস্ব কিছু দাবি-দাওয়া প্রকাশ করেছে। তারা পরবর্তী সরকারকে জালিয়াতি মোকাবিলায় অগ্রাধিকার দেওয়া এবং অর্থের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য উত্তম নিয়ন্ত্রক পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানিয়েছে।
ইনোভেট ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী বলেন, আমরা সব দলকে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো বিবেচনা করার এবং পরবর্তী সরকারের সামনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জালিয়াতি মোকাবিলা ও সারা দেশে গ্রাহকদের জন্য আরও ভালো আর্থিক পরিবেশ তৈরির মতো বড় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় ফিনটেক যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তা স্বীকার করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
টম গ্রোগান, উইংস্টপ ইউকেচিকেন শপ চেইন উইংস্টপ ইনকরপোরেটের মূল ফ্র্যাঞ্চাইজি লেমন পেপার হোল্ডিংসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা টম গ্রোগান খুচরা বিক্রেতাদের ওপর সম্পত্তি কর সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন। আতিথেয়তা এবং রিটেইল খাতের নেতারা তথাকথিত ব্যবসায়িক হারকে ‘অন্যায়ভাবে উচ্চ’ উল্লেখ করে এর কঠোর সমালোচনা করেছেন।
গ্রোগান বলেন, আমাদের উঁচু রাস্তাগুলো যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য অত্যাবশ্যক। তবুও অনেক ঐতিহ্যবাহী ব্যবসা একটি পুরোনো ব্যবসায়িক হার কাঠামোর কারণে হিমশিম খাচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির এটি পুনঃমূল্যায়ন জরুরি বলে দাবি করেছেন তিনি।
কেএএ/