সাহিত্য

তুমি যেওনা ও অন্যান্য

এক. বিরহী সরোদ

Advertisement

ক্ষয়ে ক্ষয়ে অক্ষয় হতে গিয়েপাথর সময়ের তিরবিদ্ধ হয়েছিদহনের রঙ কী কিংবা অনুতাপের অনুভূতিএমন প্রশ্নে বুকের ভেতর আকাশ ভেঙে পড়েছে বারবার। কষ্টকে যত্নে রাখি, কী ভীষণ আকুলতায়অসুখের মাঝেও নিত্যসুখ খুঁজিপাঁজরের ভাঁজে ভাঁজে শুধুই বেদনার সংসারনোনা জলের প্লাবনে সিক্ত দীর্ঘশ্বাস। প্রাণের জন্য প্রাণ দেওয়া কঠিন কিছু নয়বরং প্রাণ দেওয়ার জন্য প্রাণ খুঁজে পাওয়াই কঠিনআনন্দের গোপন উৎস খুঁজতে গিয়েজন্মান্ধের কাতরতা নিয়ে ফিরে এসেছি। কেবলই স্বপ্নের দুকূল ভাঙে দুঃস্বপ্নহৃদয় গহিন তলে শুধুই যেন বিষবাষ্পঋণাত্মক থেকে ধনাত্মক হতে গিয়ে পৌঁছেছি শূন্যেতরমুজের ফালির মতো এক চিলতে রোদ্দুরের আকাঙ্ক্ষায় বয়স বাড়ে। চারদিকে অবসাদের দেয়ালশরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বঞ্চনার কালো দাগআগুনের ঘ্রাণ নিয়ে বেঁচে আছি বহুকালতুমি যাও, এবার মৃত্তিকায় ডুব দেব। ইচ্ছেগুলো বিনাশীদের হাওয়ায় উড়ে যায়নিঃশব্দ-নির্জনে কাঁদে বিরহী সরোদজানতে বড় সাধ জাগে, বড় সাধনিজেকে কতটা শূন্য করে অন্যকে পূর্ণ করা যায়?

দুই. বিষাদের বিসর্জন আজ সন্ধ্যায় অপ্রাপ্তিগুলো ঝেড়ে ফেলে স্থির করলামপ্রতিক্ষণ আনন্দ নিয়ে আর কখনও বিষাদের দিকে যাবো নাকখনও না, কিছুতেই না। তোমরা আমার স্বজন, কাতর আত্মার আশ্রয়, নিরাশ্রয়ী গৃহীর গৃহবরং আরও একটু স্পষ্ট করে বলি, আড়ষ্টতার জাল ছিঁড়েই বলিতোমাদের নির্মাণের ভাঁজে ভাঁজে গচ্ছিত রেখেছি সুখস্মৃতিগুলোজানি, খুব করেই জানি; অগোচরে তোমরা তা খরচ করবে না কখনওতোমাদের অনুভূতির স্পর্শে দুঃসময়ের কার্নিশ থেকে দুঃখরেখাগুলো মুছে গেছে। তোমরা অনাবিল আনন্দ, মায়াময় আকুলতা, পরার্থে ব্যাকুলআমার কাছে যারা জানতে চেয়েছে, ওদের ধম্ম কী গো?বলেছি, শিকড় দিয়ে মাটি আঁকড়ে থাকা, ওদের ধম্মকম্ম শুধুই সৃজনরেখাতোমরা যোজন যোজন পথ পেরিয়ে সৃষ্টি-নির্মাণের আরামদায়ক সমন্বয়সময়ের বৈরী স্রোতেও রূপান্তরের আশায় প্রতিনিয়ত অনুশীলনে উজানমুখীপ্রেমময়, বন্ধুত্বপূর্ণ ও মনোমুগ্ধকর সম্পর্ক, নিরন্তর কথোপকথন। আমার সকল অনুভূতি যখন সরলরেখায় চলছিল আর সব আনন্দ হেঁটে যেত বিষাদের দিকে অবিরততখনই তোমরা শেখালে নির্মোহ অনুভূতির নামই ভালোবাসাআর তাই আজ সন্ধ্যায় স্থির করলাম আনন্দ নিয়ে আর কখনও বিষাদের দিকে যাবো নাকখনও না, কিছুতেই না।

তিন.তুমি যেও না যেও না, বারণ করছি; যেও নাস্থির জানি, গেলেই তুমি হারিয়ে যাবে। তোমার নিয়তি হতে পারে না নিরুদ্দেশযাত্রাতুমি সাগরের ক্ষুব্ধ তরঙ্গে আছড়ে পড়া ঢেউতুমি মিছিলে মিছিলে বজ্রমুষ্টির স্মারকতোমাকে এভাবে প্রস্থান মানায় না, কখনও নাতুমি কালের যোগ্য উত্তরাধিকার। লোডশেডিংয়ে অসহায় ল্যাম্পপোস্টের মাথা ছুঁইয়েঅন্ধকার তাড়িয়ে তুমিই দেখাও আলোআমাদের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জানুকতাদের সরবরাহ বিদ্যুৎ না পেলেও আমরা আলোহীন নইবহুমাত্রিক বিশ্লেষণে ও বহুরৈখিক বিবেচনায়তোমাকে প্রয়োজন, খুব প্রয়োজন। রাষ্ট্র-সমাজ শব্দ দুটি উচ্চারণমাত্র তুমি আরও বেশিঅপরিহার্য হয়ে ওঠোমনে পড়ে বিদ্রোহ-বিপ্লবের স্বপ্নধ্যানেতোমাকে স্তবের মতো উচ্চারণ করিযেও না, বারণ করছি; যেও নাস্থির জানি, তুমি গেলেই অঙ্গীকারগুলো হারিয়ে যাবে। তুমি প্রাত্যহিক জীবনের খুব জরুরি অনুষঙ্গতুমি তাবৎ নির্মাণের রূপকার, অনিন্দ্যসুন্দরতুমি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের অববাহিকায় চরিত্রায়ণএত ক্লেদের মাঝেও তুমি দহনবেলার উচ্চারণতুমি হৃদয়ের গভীরে অন্তর্গত বোধ ও সৌন্দর্যতুমি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি ও নিঃসংশয়পর্যবেক্ষণ তীক্ষ্ণ, সূক্ষ্ম, তোমার প্রকাশ অনবদ্য। যেও না, বারণ করছি; যেও নাতুমি চলে গেলে রূপগত পরিচর্যার পরিচয়মিশে যাবে ধুলোয়।

Advertisement

এইচআর/এমএস