হিমাচল প্রদেশ একটি ভূমিবেষ্টিত রাজ্য। যার পূর্বে তিব্বতের মালভূমি, পশ্চিমে পাঞ্জাব ও উত্তরে জম্মু ও কাশ্মীরের অবস্থান। হিমালয় ‘দেবভূমি’ নামেও ব্যাপকভাবে পরিচিত। হিমাচল প্রদেশ উত্তর ভারতের একটি নয়নাভিরাম পাহাড়ি রাজ্য।
Advertisement
অত্যন্ত বৈচিত্র্যপূর্ণ ভৌগলিক কাঠামো, নির্মল ও নজরকাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য হিমাচল প্রদেশকে সহজেই প্রতিবেশী অন্যান্য স্থানের চেয়ে আলাদা করা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উচ্চতায় অবস্থিত হিমাচল প্রদেশ।
সবুজ দিওদার বনভূমি, আপেল বাগান থেকে পাহাড়ের ঢালে ঢালে সারিবদ্ধ ঘরবাড়ি, তুষারাবৃত উঁচু হিমালয়ান পাহাড়ি এলাকা থেকে বরফাচ্ছাদিত লেক ও পানিতে টইটম্বুর নদীসমূহ সবকিছুই দেখতে পাবেন সেখানে গেলে।
শুধু ভারতেরই নয় বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার একটি সুপরিচিত ভ্রমণ গন্তব্য হলো হিমাচল প্রদেশ। চলুন এক নজরে জেনে নেওয়া যাক হিমাচল প্রদেশের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে-
Advertisement
কুলু মানালি
শিমলার পাশাপাশি কুলু মানালিও হিমাচল প্রদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ভ্রমণ গন্তব্য। ছোট্ট এই শহরটি চমৎকার সবুজ পাহাড়ে ঘেরা। এর পাশাপাশি আছে ঘন সবুজ ভূমি, চোখ জুড়ানো আপেল গাছের সারি ও দৃষ্টিনন্দন বাগানসমূহ।
সেখানকার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলো হলো বিজলী মানদেব মন্দির, রঙ্গুনাথ মন্দির ও নয়নাভিরাম পাহাড়ি দৃশ্যাবলী। এই জায়গাটির জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হলো এখানকার চমৎকার শীতল আবহাওয়া।
শিমলা
Advertisement
অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি হিমাচল রাজ্যের রাজধানী শিমলা নগরী। সারা বিশ্বেই ‘কুইন অব হিল স্টেশনস’ নামে পরিচিত এই পাহাড়ি শহর দেখতে বিভিন্ন দেশ থেকে ভিড় জমান পর্যটকরা। ভিক্টোরিয়ান স্টাইলে তৈরি ভবনসমূহ, চোখ জুড়ানো পাহাড়ি দৃশ্যাবলী ও ঘন সবুজ ভূমি শিমলাকে হিমাচল প্রদেশের অন্যতম সেরা ভ্রমণ গন্তব্য বানিয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
চমৎকার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে জায়গাটি ট্রেকিং, হাইকিং, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উচ্চতায় ক্যাম্পিং প্রভৃতির জন্য খুবই উপযোগী। এটিঅ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এক বড় আকর্ষণ। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। এসব কারণেই এটি মধুচন্দ্রিমার জন্য আদর্শ এক গন্তব্য।
সেখানে বেড়াতে গেলে দেখতে পাবেন সোলোং ভ্যালি, রোথাং পাস, ভাশিস হট স্প্রিংয়ের মতো বিখ্যাত স্থানসমূহ। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী নবদম্পতিরা করতে পারেন মাউন্টেইন ক্লাইম্বিং, আইস স্কেটিং, গলফিং ও ট্রেকিং।
অন্যান্য জনপ্রিয় ও বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান হচ্ছে- কালি বাড়ি মন্দির, কামনা দেবী মন্দির, তারা দেবী মন্দির, মল, জাখু মন্দির, রিজ, ভিক্টোরিয়াল লজ, স্টেট মিউজিয়াম, ফটো আর্ট গ্যালারি, দর্জি ড্রাগ মন্দির প্রভৃতি। কেনাকাটার জন্য যেতে পারেন শহরের বিখ্যাত মল রোড ও রিজ রোডে।
ধর্মশালা
অপরূপ সুন্দর ধৌলাধর পর্বতমালার পাশেই কাংড়া ভ্যালির উঁচু পাহাড়ি ঢালে ধর্মশালার অবস্থান। শহরটি দু’ভাগে বিভক্ত- আপার ও লোয়ার ধর্মশালা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে ১০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত স্থানটি।
ধর্মশালার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো হলো কাংড়া আর্ট মিউজিয়াম, ওয়ার মেমোরিয়াল, ডাল লেক, সেন্ট জন’স চার্চ, ভাগসুনাথ মন্দির, কুনাল পাথরি মন্দির, হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট এসোসিয়েশন (এইচপিসিএ) স্টেডিয়াম প্রভৃতি। নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা ধর্মশালায় বসবাস করেন।
আরও পড়ুন
ডোমাখালী সমুদ্রসৈকতে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন? মেঘালয় ভ্রমণের সেরা সময় কখন? সেখানে কী কী দেখবেন?ডালহৌসি
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০০-৯০০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত ডালহৌসি হিমালয়ের সত্যিকারের সৌন্দর্য তুলে ধরে। শান্ত ও ছবির মতো সুন্দর শহরটি। ধৌলাধর রেঞ্জের পশ্চিমাংশের উপরিভাগে পাঁচটি কম উচ্চতার পাহাড় জুড়ে অবস্থিত এই হিল স্টেশনটি রাভি নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত।
দৃষ্টিনন্দন শহরটি উপনিবেশ-পরবর্তী ভবনসমূহ ও নিচু ছাদের দোকানপাট ও হোটেলের সমন্বয়ে গঠিত। শহরের চারপাশে আছে পাইন গাছে আবৃত পাহাড়। যার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে সহজগম্য ট্রেইল ও ট্রেক। যেগুলো কম দূরত্বে বেশ সহজে হাঁটাহাঁটির জন্য আদর্শ।
ডালহৌসির আকর্ষণীয় জায়গাগুলো হলো ডালহৌসি ক্যাসল, সুভাস বাওলি, নরউড পরমধাম, শিবকুল আশ্রম, দক্ষিণা মূর্তি, রং মহল, কিনানস, লক্ষীনারায়ণ মন্দির প্রভৃতি।
পালামপুর
উত্তর-পশ্চিম ভারতের চায়ের রাজধানী হলো পালামপুর। কাংড়া ভ্যালির উঁচু পাহাড়ি ঢালে অবস্থিত শহরটি ধৌলাধর রেঞ্জের সাথে সংযুক্ত। তবে চা-বাগানগুলো একে একটি বিশেষ রিসোর্টে পরিণত করেছে। বিপুল পরিমাণ পানি এবং পাহাড়ের কাছে অবস্থান হওয়ায় জায়গাটির আবহাওয়া একটু শীতল যা যেকোনো পর্যটকেরই ভালো লাগবে।
হিমাচল প্রদেশের আবহাওয়া গ্রীষ্মকালে হালকা শীতল ও শীতকালে পুরোপুরি শীতল। কখনো কখনো তুষারপাতও হয়। স্থানীয় ভাষা মূলত- হিন্দি ও পাঞ্জাবি তবে খুব জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে এখানে এখানে ইংরেজি ভাষার প্রচলন ভালোভাবেই আছে। এপ্রিল থেকে জুন হলো হিমাচলে বেড়ানোর সেরা সময় ও নভেম্বর থেকে ফেব্রয়ারি অফ সিজন।
কীভাবে যাবেন?
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থান হিমাচল প্রদেশের। পর্যটন সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়া রাজ্যটির যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। রাজ্যটিতে তিনটি বিমানবন্দর আছে। এর একটি কুলু জেলার ভুনতারে, অন্যটি ধর্মশালার নিকটবর্তী গাগল বিমানবন্দর ও আরেকটি হলো জুব্বারহাটিতে অবস্থিত শিমলা বিমানবন্দর।
রাজ্যের প্রধান শহরগুলোতে আছে রেল স্টেশন। কলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু প্রভৃতি বড় বড় নগরীর সঙ্গে সরাসরি ট্রেন নেই হিমাচল প্রদেশের রেল স্টেশনগুলোর। রাজধানী দিল্লিতে পৌঁছার পর অন্য ট্রেনে চড়তে হবে উল্লিখিত জায়গাসমূহ থেকে হিমাচলে যেতে হলে।
বাসযাত্রীদের জন্য হিমাচল প্রদেশের রয়েছে বেশ উন্নত সড়ক নেটওয়ার্ক যা উত্তর ভারতের সব প্রধান শহরের সঙ্গে সংযুক্ত। হিমাচল রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (এইচআরটিসি)-র অধীনে প্রতিবেশী শহর ও রাজ্যগুলোতে আছে যথেষ্ট পরিমাণ আরামদায়ক বাস।
ন্যাশনাল হাইওয়ে ওয়ান-এ, ন্যাশনাল হাইওয়ে-২০, ন্যাশনাল হাইওয়ে-২১, ন্যাশনাল হাইওয়ে ২১-এ, ন্যাশনাল হাইওয়ে-২২, ন্যাশনাল হাইওয়ে-৭০, ন্যাশনাল হাইওয়ে-৭২, ন্যাশনাল হাইওয়ে ৭৩-এ এবং ন্যাশনাল হাইওয়ে-৮৮ হিমাচল প্রদেশের সঙ্গে সংযুক্ত।
কোথায় থাকবেন?
খুবই জনপ্রিয় একটি ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে হিমাচল প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে আছে অসংখ্য হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। র্যাডিসন হোটেল শিমলা, আপো অ্যাপ হোম স্টে, হোটেল উইলো ব্যাংকস, হোটেল কম্বারমেয়ার, ম্যারিগোল্ড হলিডে কটেজেস, দি ওবেরয় সেসিল, শিমলা ব্রিটিশ রিসোর্ট, হানিমুন ইন শিমলা, হোটেল গুলমার্গ রিজেন্সি, ব্রিজ ভিউ রিজেন্সী, হোটেল প্রেস্টিজ, হোটেল গঙ্গা প্রভৃতি রাজধানী শিমলা শহরের সুপরিচিত হোটেল।
শিমলা শহরের বাইরে মানালির উল্লেখযোগ্য হোটেল হলো- জনসন লজ, অ্যাপল কাউন্ট্রি রিসোর্টস, হোটেল হলিউড, হোটেল দেভলক, হোটেল কল্পনা, হোটেল শান্ডেলা প্রভৃতি। ডালহৌসিতে আছে মঙ্গাস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট, হোটেল পিয়ারি, হোটেল ওয়াক ভ্যালি রেসিডেন্সি, গ্র্যান্ড ভিউ হোটেল, লালজি ট্যুরিস্ট রিসোর্ট, হোটেল জাসপ্রিত প্রভৃতি।
ধর্মশালায় আছে ম্যকলিওডগানি হোম স্টে, নিউ ভারুনি হাউস, ববস অ্যান্ড বারলে, মুন ওয়াক রেসিডেন্সি, হোটেল গান্ধী’স প্যারাডাইসসহ বিভিন্ন হোটেল।
জেএমএস/এমএস