আকাশের চাঁদ মেঘে ঢাকা পড়েছে বহু আগে। ঘন অন্ধকারে আচ্ছাদিত ছোট্ট এই গ্রামের নাম কুসুমপুর। নীরবতা ভঙ্গ করে কেবল মাঝে মাঝে শোনা যায় কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ। গ্রামের প্রান্তে একটি পুরোনো ভাঙাচোরা বাড়ি, কেউ ডাকে পোড়া বাড়ি বলে। যা নিয়ে গ্রামের মানুষের মুখে নানা গল্প শোনা যায়। কেউ বলে, এই বাড়িতে ভূত আছে। কেউ বলে এক অত্যাচারী ব্রিটিশকে এখানে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
রাতে গ্রামের সবাই যখন গভীর ঘুমে মগ্ন। তখন সেই বাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন আজাদ। আজাদ একজন ডিটেকটিভ। তার লক্ষ্য, গ্রামের মানুষদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে এই বাড়ির রহস্য উদঘাটন করা। কাঁপা কাঁপা হাতে টর্চলাইট জ্বালিয়ে বাড়ির ভেতরে পা রাখলেন তিনি। বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই এক অদ্ভুত গন্ধে তার নাক ভরে উঠল। মনে হলো, বাড়ির বাতাসে মিশে আছে অজানা কিছু আতঙ্ক।
আজাদ টর্চলাইটের আলোতে বাড়ির বিভিন্ন কক্ষ খুঁজতে লাগলেন। হঠাৎ একটি কক্ষে ঢুকে দেখলেন, মেঝেতে রক্তের দাগ এবং ছেঁড়া ছেঁড়া কাগজের টুকরো। তিনি এগিয়ে গিয়ে কাগজের টুকরোগুলো একত্রিত করলেন এবং পড়তে শুরু করলেন। সেগুলোতে লেখা ছিল, ‘এখান থেকে কেউ ফেরে না’। আজাদের শরীর কাঁপতে লাগল। এরই মধ্যে পেছন থেকে কাঁচ ভাঙার শব্দ ভেসে এলো।
আজাদ দ্রুত পেছনে ফিরে দেখলেন, একটি ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছে। আজাদের ভয়ে গা কাঁটা দিতে লাগল, হাত-পা অবশ হয়ে এলো। মূর্তিটি ধীরে ধীরে তার কাছে চলে এলো এবং তার মুখে এক পৈশাচিক হাসি। আজাদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মূর্তিটি ফিসফিস করে বলল, ‘এবার তুমিও মরবে।’
Advertisement
আজাদ কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলেন। কিন্তু বাড়ির দরজা ততক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেন কিন্তু সেটাও যেন অদৃশ্য কোনো শক্তিতে আটকে আছে। এদিকে ছায়ামূর্তিটি তার দিকে এগিয়ে আসছে।
গ্রামের লোকজন তখনো ঘুমিয়ে। কেউ জানে না তাদের গ্রামের এই বাড়িতে কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে চলেছে। আজাদের হাতে কেবল একটি টর্চলাইট এবং তার মনোবল। তিনি শেষবারের মতো মূর্তিটির দিকে তাকিয়ে সাহস সঞ্চয় করলেন। পেছন ফিরে একটি কাঠের লাঠি তুলে নিলেন। লাঠিটি দিয়ে মূর্তির দিকে আঘাত করতেই সেটি ছায়ার গা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। আর ছায়ার প্রতিফলন লাঠির ওপর পড়ছে।
আরও পড়ুনযুবতী ও চাওয়ালার প্রেমদারুস সালাম মাসুদের গল্প: সাধআজাদ বুঝতে পারলেন, এটি ছিল কেবল একটি থ্রিডি চিত্র ও ভিজ্যুয়াল সাউন্ড ইফেক্ট। কিন্তু তার পেছনের আসল সত্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। কথাটি ভাবতে ভাবতে বাড়িটি পুরোপুরি আলোকিত হয়ে উঠল। আর চারদিক থেকে আজাদ অস্ত্রের মুখে জিম্মি।
আজাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না, কোনো অপরাধীচক্র এই বাড়িতে তাদের আস্তানা গেড়েছে। নির্বিঘ্নে তাদের কাজ চালানোর জন্যই ভূতের এই আয়োজন।
Advertisement
হঠাৎ গুলির শব্দ। আতঙ্কে নিজের বুকে হাত দিয়ে বসলেন আজাদ। কিন্তু না, গুলি তার গায়ে লাগেনি। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলেন, অপরাধচক্রের সবাইকে পুলিশ ঘিরে ফেলেছে।
আজাদ মোটেও ভূতে বিশ্বাসী নন। তাই তিনি এই বাড়িতে প্রবেশের আগেই থানায় যোগাযোগ করে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রাম হওয়ায় পুলিশও বাড়িটি সম্পর্কে আগে অবগত ছিল না। আজাদের মতো একজন সাহসী ডিটেকটিভকে পেয়ে পুলিশও পোড়া বাড়ির রহস্য ভেদ করতে চেয়েছে। তাই বাড়িতে প্রবেশের আগেই আজাদের পকেটে একটি ওয়াকিটকি রাখা ছিল। যার সাহায্যে বাইরে দশ মিটার দূরত্বে থেকে পুলিশ বাহিনী আজাদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখছিল। এরপর পুলিশ সদস্যরা সুযোগ বুঝে অপরাধীদের ধরে ফেলেন।
গ্রামের সেই পুরোনো বাড়ি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তার রহস্য আজ উন্মোচিত। পুলিশের প্রেস ব্রিফিং প্রচার হলে আজাদ জানতে পারেন, অপরাধীরা মূলত চোরাচালানকারী। পোড়া বাড়ির নিকটবর্তী জঙ্গলে মহামূল্যবান কাঠ কেটে তা শহরে পাচার করতো। গ্রামবাসীরা যেন পোড়া বাড়ি কিংবা জঙ্গলে না আসে তাই বছরের পর বছর চোরাচালানকারীরা ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়ে রেখেছিল।
এরপর একদিন আজাদ তার ডায়েরিতে লিখতে বসলেন, ‘অন্ধকারের ছায়া কেবল ছায়া নয়। তা হলো আমাদের মনের ভয়। যা সত্যের মুখোমুখি হওয়ার পর বিলীন হয়ে যায়।’
এসইউ/জেআইএম