আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। দুয়ারে ঈদ কড়া নাড়লেও মার্কেট ও ফ্যাশন হাউজগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা নেই। এমনকি দিনের বেশিরভাগ সময় ক্রেতার দেখাই পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
শনিবার (২৫ মে) রাজধানীর পলওয়েল মার্কেট, জোনাকি সুপার মার্কেট, গাজী ভবন মার্কেট ও চায়না টাউন মার্কেট ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব মার্কেট ঘুরে কোনো ক্রেতা দেখা যায়নি। মার্কেটের মধ্যে যারা ঘোরাঘুরি করছেন তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন দোকানের মালিক ও কর্মচারী। ক্রেতা না থাকাই অনেকেই একে অন্যের সঙ্গে গল্পে মেতেছেন। কেউ কেউ আবার ব্যবসার খারাপ অবস্থা নিয়েও কথা বলছেন।
এখনে বিক্রি কমার পেছনে দুই কারণের কথা জানান জোনাকি, চায়না টাউনসহ এসব এলাকার ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, এখন প্রচণ্ড তাপদাহ বইছে দেশজুড়ে। এ কারণে অনেকেই বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। আর মূল কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থকষ্ট। তারা বলছেন, নিজেরাই করোনার পর থেকে ঋণগ্রস্ত হয়েছে, ক্রেতার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি। এ কারণে তারা গত ঈদেও কেনাকাটা করতে পারেননি।
Advertisement
কথা হয় পলওয়েল মার্টেকের সায়ন্তনী ট্রেডিংয়ের মালিক নাসির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে ব্যবসার যে খারাপ অবস্থা এটা আমার গোটা জীবনেও দেখিনি। কোনো না কোনো সময় ক্রেতা আসেই। কিন্তু এবার গত ঈদুল ফিতরের আগেও খুব বেশি ক্রেতা ছিল না। ঈদের পরেও এখনো কোনো ক্রেতার দেখা মিলছে না। গত চার দিনে এক টাকাও বিক্রি নেই। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাও কষ্টকর হবে।
একই কথা জানান টার্গেট ফ্যাশনের সেলস এক্সিকিউটিভ রানা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এখন বিক্রি খরা চলছে। ঈদের পর শুরু হয়ে এখনও কাটেনি। কোরবানির ঈদের আগেই ক্রেতারা পোশাক কিনে থাকেন। ঈদের এক সপ্তাহ আগে কোরবানির পশু কেনায় ব্যস্ত থাকেন। তবে এবার দেখা নেই ক্রেতার। অনেকটা অলস সময় কাটাতে হচ্ছে বিক্রেতাদের।
গাজী ভবনের রিয়াদ ফ্যাশনের মালিক তারেক জাগো নিউজকে জানান, কোরবানির আগেই সবাই টাকা জমিয়ে পশু কেনার চিন্তায় থাকেন। আমার ক্ষেত্রেও একই, পোশাক বিক্রি করে পশু কিনি। এবার এখনও বিক্রি জমেনি, ক্রেতাই আসছে না। হয়তো তাদের কাছেও টাকা নেই। অনেকেই আবার পোশাক কেনার কথা বাদ দিয়ে পশু কেনার কথা ভাবছেন। যেহেতু ক্রেতার হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। তারপরও আগামী মাসের ৪/৫ তারিখ পর হয়তো কিছুটা বিক্রি হতে পারে।
এসব এলাকায় জুতো-সেন্ডেলের দোকানগুলোর অবস্থাও একই রকমের। এখানেও ক্রেতা শূন্য। কথা হয় লেদার ওয়াল্ডের মালিক হামিদের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এবার বেচাকেনার কথা মানুষের কাছে প্রকাশ করা যাবে না। কোনো ধরনের বিক্রি নেই। ছুটির দিন শুক্রবারও বিক্রি হয়নি। শনিবারও একজন ক্রেতাও আসেনি। দেখি বাকি সময়ও হয়তো বসেই থাকতে হবে।
Advertisement
বৈদেশিক পণ্য আমদানিকৃত দেশের ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম মার্কেট পলওয়েল। এখানে চায়না, থাইল্যান্ড, ইন্ডিয়া, ভিয়েতনাম ও অনন্য দেশ বিভিন্ন রকমের পোশাক আমদানি করা হয় ক্রেতার চাহিদা মতো। এসব পণ্য খুচরা এবং পাইকারি বিক্রয়ের মাধ্যমে সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। মার্কেটটিতে বাচ্চাদের বিভিন্ন প্যান্ট, গেঞ্জি, শার্ট পাওয়া যাচ্ছে হাজার টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। বড়দের বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন জুতা সেন্ডেলের মধ্যে ছোটদের জন্য রয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, বড়দের আড়াই হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া বিভিন্ন বেল্ট রয়েছে যেগুলো ৭০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।
এছাড়া পলওয়েল সংলগ্ন বিভিন্ন মার্টেকে ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। এসব পোশাকের মধ্যে রয়েছে-পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, লুঙ্গি, টুপি, সুগন্ধি থেকে শুরু করে মেয়েদের শাড়ি, ঘড়ি, থ্রি-পিস, টু-পিস, সিঙ্গেল কামিজ, রেডিমেট কামিজ, টপস, টাইটস, গজ কাপড়, বিভিন্ন ধরনের অর্নামেন্টস, কসমেটিকস, বাচ্চাদের পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, ফ্রক, স্কার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, বড়-ছোট সবার জুতা, স্যান্ডেল, চশমা ইত্যাদি।
ইএআর/এমআইএইচএস/জেআইএম