সৌর উপকরণ আমদানির ওপর করের বোঝা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। শনিবার (২৫ মে) কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার সেন্টারে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এমন সুপারিশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নেট মিটারিং ব্যবস্থায় অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করা সম্ভব।
Advertisement
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ইশতিয়াক বারী। তিনি জানান, দেশে গত ৭ বছরে মাত্র ১১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ নেট মিটারিং পদ্ধতিতে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৫৫ শতাংশ এসেছে বাণিজ্যিক ভবনের মাধ্যমে।
গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, নেট মিটারিংয়ের মাধ্যমে ৫৫.৬ শতাংশ শিল্প উৎপাদনে কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমেছে। রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে নেট মিটারিংয়ের সুবিধা দেওয়া হলে মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকা থেকে প্রায় ৩৩৩ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়ন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ। ধারাবাহিক গবেষণার অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে বিশেষত ইপিজেড এলাকায় সোলার নেট মিটারিংয়ের সম্ভাবনা ও প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে।
Advertisement
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ইপিজেডগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে নেট মিটারিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়বে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এতে দেশের টেকসই অর্থনীতিকে নিশ্চিত করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য আবুল খায়ের মোহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, ইপিজেড এলাকায় নেট মিটারিং বাস্তবায়নের জন্য হুইলিং চার্জের একটি অংশ যদি ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে দেওয়া যায় তাহলে উভয়পক্ষ লাভবান হবে।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাতকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এরই অংশ হিসেবে টেস্টিং ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে অনেকদিন ধরেই নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প হিসেবে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানোর যেতে পারে।
গোলটেবিল আলোচনায় সোলার ও রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নূরুল আকতার বলেন, অনেক শিল্প উদ্যোক্তাই সোলার নেট মিটারিং সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। সম্ভাবনাময় এই সেক্টরে নেট মিটারিং প্রতিষ্ঠা করা গেলে শিল্প কারখানায় বিদ্যুতের চাহিদা অনেকটাই মিটবে।
Advertisement
অনুষ্ঠানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের উদ্যোগ সোল শেয়ারের পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, কোনো ইপিজেডে এলাকাতেই নেট মিটারিং ব্যবস্থা চালু নেই। এটি করা গেলে বিদ্যুতের ঘাটতি অনেকটা দূর হবে। এটি বাস্তবায়নে পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) চালু করতে হবে।
এছাড়া, সোলার নেট মিটারিংয়ের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি জানান ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ, ডিসিসিআইয়ের পরিচালক সাইফ উদ দৌলা।
এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ বলেন, বেপজা নিজেই বিদ্যুৎ কারবারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে যা সংশ্লিষ্টখাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এ ক্ষেত্রে অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা ও করের বোঝা লাঘব করে নেট মিটারিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে রপ্তানিখাতে সহনশীল অগ্রগতি আনা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন মিয়া, স্রেডার সাবেক সদস্য সিদ্দিক জোবায়ের, পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের রেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দীন, ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানিখাত সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠান শেষে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভসহ ১২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও তরুণ সংগঠনের উদ্যোগে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সপ্তাহ (২৬ মে-১ জুন) বিষয়ক কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
এনএস/এমআইএইচএস/জেআইএম