ভ্রমণ

বিহারি ক্যাম্পে বোবা বিরিয়ানির খোঁজে

রাজধানীর বুকে এক অন্যরকম খাদ্যাভিযানে বেরিয়ে পড়েছিলাম তিন বন্ধু সাদ্দাম, মাহমুদ আর আমি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বিহারি ক্যাম্পের বিখ্যাত বোবা বিরিয়ানি চেখে দেখা, যার স্বাদ নিয়ে শহরের আনাচে-কানাচে নানা গল্প প্রচলিত।

Advertisement

আমাদের এই রসনাযাত্রার শুরু হয়েছিল শুক্রবারের এক তপ্ত দুপুরে, যখন রোদ ঢাকার আকাশে ছড়িয়ে পড়েছিল। বন্ধুরা তিনজনই ছিলাম খাদ্যপ্রেমী। সাদ্দাম ছিল বিরিয়ানির ভক্ত, মাহমুদ ছিল মসলার স্বাদে মুগ্ধ আর আমি ছিলাম নিরীক্ষাধর্মী খাদ্যাভিযানী।

সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম এবার বিহারি ক্যাম্পের বোবা বিরিয়ানি খেয়ে দেখতে হবে। ফার্মগেট থেকে বাসে করে আসাদগেট, এরপর রিকশায় চেপে পৌঁছালাম মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্পের দিকে।

বিহারি ক্যাম্পে পৌঁছে চোখের সামনে দেখতে পেলাম সরু গলিতে সাজানো ছোট ছোট দোকান, যেখান থেকে ভেসে আসছিলো সুগন্ধি মসলার সুবাস। চারদিকে মানুষের ভিড়, হাঁকডাক, আর রান্নার ঝাঁঝালো গন্ধ।

Advertisement

যেন এক ভিন্নতর জগতে প্রবেশের আমন্ত্রণ জানাচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে সামনে দেখা মিললো একটি ভিড়ের। ভিড়ের মাঝেই উপরের সাইনবোর্ডে লেখা ‘বোবা বিরিয়ানি’।

আরও পড়ুন

ছুটির দিনে ঢাকার আশপাশেই ঘুরবেন যেসব স্থানে কুমিল্লা ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন যত স্পট

তিন বন্ধু দোকানের ছোট্ট বেঞ্চে বসে পড়লাম। অর্ডার দেওয়া হয় তিন প্লেট বোবা বিরিয়ানি। ভিড় থাকায় বিরিয়ানি পেতে কিছুটা সময় লাগবে। এই ফাঁকে এক বয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে কথার ছলে গল্প জুড়ে দিলাম।

বয়স্ক লোকটি জানায়, ‘এই বিরিয়ানির প্রস্তুত প্রণালীতে আছে কয়েক প্রজন্মের ঐতিহ্য, যা মসলা ও মাংসের নিখুঁত মিশ্রণে রূপ নেয়।’

Advertisement

বিরিয়ানি আসতেই আমদের চোখ ছানাবড়া। সোনালি রঙের ভাতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা তিন টুকরো খাসির মাংস, আলু আর তার সঙ্গে লেগে থাকা মসলা যেন স্বাদের এক পরিপূর্ণ যাত্রা। তিনজনে একসঙ্গেই প্রথম লোকমা মুখে নিলাম। এক নিমিষেই স্বাদে মুগ্ধ হলাম।

মাহমুদ বলে ওঠে, ‘এত মসলা, কিন্তু একটুও অতিরিক্ত নয়।’ সাদ্দাম যোগ করে, 'মাংসটা এত নরম, যেন মুখেই গলে যাচ্ছে।’ আর আমার মতে ১৪০ টাকার এই বিশেষ কাচ্চি বিরিয়ানি, ‘এক কথায় অনবদ্য।’

খাবার শেষে দোকানের এক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করি এই অসাধারণ স্বাদের রহস্য। লোকটি জানান, এখানকার মসলা ও মাংসের বিশেষ প্রক্রিয়া তাদের বিরিয়ানিকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে। ঘি আর গোপন মসলা ব্যবহারে এই বিরিয়ানির স্বাদ অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়।

ফেরার পথে আমাদের তিন বন্ধুর মনে একটাই কথা, ‘আমরা আবার আসবো।’ এই অভিজ্ঞতা শুধু একটি খাবারের নয়, বরং একটি সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সম্পর্কেও জানা।

এই রসনা যাত্রা আমাদের বন্ধুত্বের বাঁধনকে আরও মজবুত করে তুলছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, বিহারি ক্যাম্পে আরেকদিন এসে ‘কামাল বিরিয়ানি’ চেখে দেখব। আমাদের এই যাত্রা শুধুমাত্র একটি খাবারকে আবিষ্কারের নয়, বরং একটি সংস্কৃতিকে উপলব্ধিরও।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/এএসএম