জাতীয়

রিকশাওয়ালা-দিনমজুর সবাই ফ্ল্যাটে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকার জলাধার সংরক্ষণ, পার্কগুলোর যত্ন নেওয়া এবং শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নাগরিকদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

Advertisement

তিনি আরও বলেছেন, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুর সবার জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যে বস্তিতে যে ভাড়ায় থাকে, সেরকমই ভাড়া দেবে। স্বল্প ভাড়ায় ফ্ল্যাট দিচ্ছি। কেউ সপ্তাহে এবং মাসে ভাড়া দিতে পারবে।

শনিবার (২৫ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বঙ্গবাজারে সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। চার প্রকল্প হলো- বঙ্গবাজারে ‘বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণিবিতান’, পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত আট লেনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি (ইনার সার্কুলার রিং রোড)’, ধানমন্ডি হ্রদে ‘নজরুল সরোবর’ এবং শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ।

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হবে

Advertisement

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে লেখাপড়া করতে হবে। মাদক, নেশা, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকতে হবে। একটা ঘরে একটা সন্তান মাদকাসক্ত হলে পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। বাবা-মা এবং নিজেদের কষ্ট দেওয়া কেন? মাদকাসক্ত হলে তো নিজেও একটা সময় অসুস্থ হয়ে যায়। নিজেদের ঘর সংসার হয় না, কিচ্ছু হয় না। সেজন্য আমি মনে করি, একটা সচেতনতা তৈরি করা দরকার। যাতে আমাদের সন্তানরা নিজের পায়ে দাঁড়ায়, নিজের আয়ে খায়, আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচে। সেটাই আমরা চাই।

তিনি বলেন, কোনো রকম পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেই উদ্যোক্তা হবেন। নিজেই নিজের বস হবেন। অন্যকেও চাকুরি দেবেন। এজন্য আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি। নানান সুযোগ দিচ্ছি। শুধু দেশে নয়, বিদেশে যেতেও ট্রেনিং নিয়ে গেলে ভালো করে। এগুলোতে আমাদের তরুণদের উদ্যমী করতে হবে।

যত্রতত্র পশু জবাই নয়

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নাগরিকদের সহযোগিতা চেয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আপনাদের সহযোগিতা দরকার। যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা, নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা। সিটি কর্পোরেশনকে বলবো, নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ময়লা নিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে, যাতে শহরটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। সামনে কুরবানির ঈদ আসবে, আপনাদের অনুরোধ, যেখানে সেখানে কুরবানি দেবেন না। তাতে জায়গা নষ্ট হয়, আবর্জনা হয়। সেক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন নয়, সারা বাংলাদেশের জন্য আমার নির্দেশনা রয়েছে, প্রত্যেক জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ব্যবস্থা রাখতে হবে। যার যার পশু নিয়ে যাবে, তার একটা নম্বর থাকবে, সেটা কাটা হলে পরিষ্কার করে তার কাছে পৌঁছে দেবে বা নিয়ে যাবে। একটা জবাইকৃত পশুর রক্ত, চামড়া, হাড়, সবই কিন্তু কাজে লাগে। যেখানে সেখানে এই কার্যক্রম না করতে আমি অনুরোধ করবো।

Advertisement

আরও পড়ুনঢাকা দক্ষিণে ৪ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রধানমন্ত্রীর

জলাধার নষ্ট করে দালান কোঠা করা যাবে না

প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদর আর্কিটেক্টদের একটা খামখেয়ালিপনা আছে। পুকুর দেখলেই একটা দালান করার প্রবণতা আছে তাদের। অথচ এই ঢাকা শহর পুকুর-খালে ভরপুর ছিল। বেশিরভাগ খাল বন্ধ, নয় বন্ধ করে দালান কোঠা করা হয়েছে। পুকুরগুলো বন্ধ। খালগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। দয়া করে যেখানেই পরিকল্পনা নেন, জলাধার সংরক্ষণ করবেন। জলাধার সংরক্ষণ করলে বাতাসও পরিচ্ছন্ন থাকে, এত গরম হয় না। সেদিকে বিশেষভাবে সবাইকে নজর দিতে হবে। জায়গা পেলেই যেখানে সেখানে পরিকল্পনা ছাড়া নির্মাণ কাজ করা যাবে না।

পার্ক সংরক্ষণে জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগী হতে হবে

পার্ক সংস্কারে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন পার্কগুলো করা হয় খুব সুন্দর থাকে। কিছুদিন পর দেখা যায়, পার্কে বাচ্চাদের খেলার জিনিস নষ্ট, ময়লা আবর্জনা, আড্ডাখানা অথবা মাদক সেবনের জায়গা হয়ে যায়। এখানে আমাদের ওয়ার্ড কমিশনার, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় লোক সবাই আছেন। আপনারা আপনাদের যার যার এলাকা, অবশ্যই আপনাদের দেখতে হবে। পার্কগুলো যেন যথেচ্ছ ব্যবহার না হয়, মাদক সেবনের জায়গা না হয়। এই জায়গাগুলো যেন নষ্ট না হয়। যার যার ওয়ার্ডের সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিচ্ছন্নতা কিন্তু আপনাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব। মনে রাখতে হবে, জনগণ ভোট দিয়ে আপনাদের নির্বাচিত করেছে। এই কাজগুলো করার দায়িত্ব আপনাদেরই। সেক্ষেত্রে সরকার ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা আপনারা পাবেন।

পরিবেশ সংরক্ষণে গাছ লাগানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর

পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে গাছ লাগানোর অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ছাদে, বারান্দায় বা বাসার সামনে ফুলের বা ফলের গাছ লাগান। যাদের গ্রামের বাড়ি আছে, তারা সেখানেও গাছ লাগান। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে এটা খুব প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পুরান ঢাকার সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বাবাকে গ্রেফতারের পর আমরা দীর্ঘদিন নাজিরাবাজার প্রয়াত মেয়র হানিফের বাড়িতে ছিলাম। পরে বন্যা হলে সেখানে থেকে আরমানিটোলার বাঘওয়ালা বাড়িতে ছিলাম। আমার ছোটবোন রেহানার জন্ম কিন্তু মিটফোর্ড হাসপাতালে হয়েছে। সে কিন্তু পুরোই এই পুরান ঢাকার লোক। কাজেই পুরান ঢাকার সঙ্গে আমাদের আলাদা একটা নাড়ির টান আছে। পুরান ঢাকার মানুষ ভালো থাকুক, সেটাই আমার লক্ষ্য। সেই চিন্তা করেই জনগণ যাতে সেবা যথাযথভাবে পায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে দুভাগে ভাগ করি। যেগুলো ইউনিয়ন ছিল, সেগুলোকেও সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনা হয়েছে, সেখানেও উন্নয়নের নানা প্রকল্প নিয়েছি। বাস্তবায়ন হচ্ছে।

শুধু বড়লোকরা নয়, বস্তিবাসীও ফ্ল্যাটে থাকবে

তিনি বলেন, ঢাকা সিটির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের ফ্ল্যাট বানিয়ে দিচ্ছি। তাদের সম্মানজনক পদবীর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। শুধু বড়লোকরা ফ্ল্যাটে থাকবে, তা কিন্তু হবে না। রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিনমজুর সবার জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যে বস্তিতে যে ভাড়ায় থাকে, সেরকমই ভাড়া দেবে। স্বল্প ভাড়ায় ফ্ল্যাট দিচ্ছি। কেউ সপ্তাহে এবং মাসে ভাড়া দিতে পারবে। বস্তি বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেউ থাকবে না। সবার জন্য সুন্দর স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কেউ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে ২ শতক জমি ও ঘর করে দিচ্ছি।

বঙ্গবাজারের আগুনের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিন যে জায়গাটা আগুনে পুড়ে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিল, আজকে তাদর পুনর্বাসনের জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামরে সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস, সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইব্রাহীম।

এসইউজে/এমএইচআর/এএসএম