খেলাধুলা

‘যদি সামান্য কয়টা রান করতে না পারেন, তবে আর কী বলব’

‘কি ভাই, খুব তো আমাকে দুষেছেন! দল হারলেই সব দায়দায়িত্ব আমার ও আমাদের নির্বাচকদের ওপর চাপিয়ে যা খুশি তাই বলতেন। আমাদের গোষ্ঠী উদ্ধার করেছেন। ভাবখানা এমন ছিল, দল সাজানো ও ক্রিকেটার নির্বাচনে ভুল ছিল বলেই ব্যর্থ টিম বাংলাদেশ। আর কারো কোনো দায় নেই। সব দায়-দায়িত্ব আমাদের। জাতীয় দলের ব্যর্থতার জন্য আমরা নির্বাচকরাই দায়ী। এখন কাকে বলবেন এসব কথা?’

Advertisement

‘আসলে খুঁটিয়ে দেখলে আপনারা দেখবেন, শুধু নির্বাচকদের ওপর দোষ চাপিয়ে লাভ নেই। লক্ষ্য-পরিকল্পনা আর মাঠের অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশন ভালো হওয়াই সবচেয়ে বেশি জরুরি।’

শেষ দিকে যাকে সবাই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন, সেই সাবেক প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই অপ্রত্যাশিত সিরিজ হারের কারণ খুঁজতে গিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে ওপরের দুটি মন্তব্য করেছেন।

এ ব্যর্থতার কারণ কী? দল সাজানো কি ঠিক ছিল? টিম কম্বিনেশনে ও একাদশ সাজানোয় কি কোনোরকম ভুল ত্রুটি ছিল? লক্ষ্য-পরিকল্পনায় কি কোনো ভুল ছিল? নাকি অ্যাপ্রোচ, অ্যাপ্লিকেশন ও পারফরম্যান্সে ঘাটতি? শুক্রবার সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে অনেক কথার ভিড়ে নান্নু দল নির্বাচন ও ক্রিকেটার সাজানো নিয়ে একটি কটু কথাও বলেননি। তিনি কোনো ব্যক্তি বা ডিপার্টমেন্টের ওপর দোষও চাপিয়ে দেননি। সাবেক প্রধান নির্বাচকের মূল্যায়ন, এটি হয়েছে টিম পারফরম্যান্সের অভাবের কারণে।

Advertisement

নান্নু বলেন, ‘দল নির্বাচন ও ক্রিকেটার নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই আমার। আর দেড়শো রানের কম টার্গেট তাড়া করতে আবার লাইনআপ নিয়ে কথা বলার কী দরকার? পুরো হতাশাজনক। সবাই খারাপ খেলেছে। সব ডিপার্টমেন্টই অনুজ্জ্বল। লক্ষ্যবিহীন ক্রিকেট খেলেছে। দেখে মনে হচ্ছে, কোনো পরিকল্পনা নেই।’

‘একটা টিম বিচ্ছিন্নভাবে দুই একজনের কিংবা এক ডিপার্টমেন্টের ভালো ও উজ্জ্বল পারফরম্যান্স দিয়ে পার পাবে না। জিততে হলে এবং সাফল্য পেতে একই সঙ্গে তিন ডিপার্টমেন্টের ভালো খেলতে হবে। সবার জ্বলে ওঠতে হবে। তা আর হচ্ছে কই? ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে হতশ্রী অবস্থা।’ নান্নুর উপলব্ধি, ‘ব্যাটিং ও বোলিং আপ টু দ্য মার্ক হওয়া অতি জরুরি। কোনো ঘাটতি থাকা চলবে না। ব্যাটিংয়ে কী করলেন- কয়টা ডট ডেলিভারি দিলেন, কয়টা বল মিস করলেন, কয়টা স্কোরিং শট খেললেন তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে বোলিংয়েও আপনি কয়টা ডট বল দিলেন, কয়টা বলে মার খেলেন, চার ও ছক্কা হজম করলেন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের কয়জনের ব্যাটিং ও বোলিংয়ে ওই পারফেকশন (পরিপূর্ণতা) ছিল, বলুন? কে সঠিক সময় সঠিক কাজ করেছেন? সঠিক জায়গায় সঠিক কাজ করতে না পারেন, তাহলে জেতা কঠিন।’ নান্নু কিছুতেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের সিরিজ হার মেনে নিতে পারছেন না। সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মেনে নিচ্ছি, প্রথম ম্যাচ ভ্রমণক্লান্তি আর অবসাদ ছিল। কম সময়ে জলবায়ু ও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো মানিয়ে নেওয়া সহজ ছিল না। উইকেটের সঙ্গে অ্যাডজাস্টমেন্টেরও (সমন্বয়) ব্যাপার ছিল। তাই প্রথম ম্যাচের পারফরম্যান্স ও ফল নিয়ে আমি তেমন কিছু বলতে চাই না। ধরে নিতে চাই, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম খেলতে গিয়ে নিজেদের স্বাভাবিক নৈপুণ্য দেখাতে পারেনি আমাদের ছেলেরা। কিন্তু কালকের ম্যাচকে আপনি কী বলবেন?’ একাদশ সাজানো, ম্যাচের পরিকল্পনায় কোনো ধরনের সমস্যা বা অসামঞ্জস্যতা কি চোখে পড়েছে? এমন প্রশ্নে নান্নুর জবাব, ‘নাহ, ওসব ঠিক ছিল। আর ওসবের প্রশ্নই আসে না। আপনার টার্গেট হলো ১৪৫। আপনি এই সামান্য কয়টা রান যদি করতে না পারেন, তাহলে আর কী বলবো। টোটাল দেখেন- হান্ড্রেড পারসেন্ট চেজেবল (টপকে যাওয়ার মতো)। আমাদের ক্রিকেটারদের যে সক্ষমতা আছে, তা প্রয়োগ করতে পারলে সমস্যা হওয়ার কথা না।’ অবশ্যই সহজে টপকে যাওয়ার মতো স্কোর। ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা ধরে আগাতে না পারলে তা কঠিন। এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের পথ কী?

নান্নুর পরামর্শ, ‘ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। নিজেরও একটা গেম প্ল্যান থাকতে হবে। ক্রিকেট খেলা হলো সেলফ অ্যাসেসমেন্ট (আত্মমূল্যায়ন)। কেউ আপনাকে নিজ করণীয় কাজ করে দেবে না। আপনার নিজের প্ল্যান করে খেলতে হবে। আপনার করণীয় কী, তা ঠাউরে নিজের মতো করে কৌশল অবলম্বন করে কাজ করতে হবে। আপনি যদি শুধরাতে না পারেন, তাহলে আপনাকে কেউ শেখাতে পারবে না।’

‘যারা গেছে, তারা দেশের সেরা ১৫ খেলোয়াড়। ব্যাটিং শুধু না, বোলিংও গুরুত্বপূর্ণ। কোরি অ্যান্ডারসন যে মোস্তাফিজকে ছক্কা হাঁকালো, বোলিং পিচ আপটা দেখছেন? এমন বোলিং করলেও হবে না’-যোগ করেন নান্নু।

Advertisement

এআরবি/এমএইচ/এমএমআর/এএসএম