দেশজুড়ে

বিপদে-আপদে মানুষের কাছে ছুটে যেতেন এমপি আনার, মিশতেন বন্ধুর মতো

২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। ঘটনাস্থল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার। হঠাৎ খবর আসে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। পরে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সেখানে ছুটে যান তিনি। যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সঙ্গে।

Advertisement

নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ও পিকআপে করে আহতদের পৌঁছে দেন কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে নিজের পিকআপে মরদেহগুলো নিয়ে যান হাসপাতালে। ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের। আহত হয়েছিলেন অন্তত ৩০ জন।

আরেকটি দুর্ঘটনায় আহত রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক না থাকায় নিজেই ওই অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে রোগীকে পৌঁছে দেন যশোর হাসপাতালে।

এভাবে এলাকার মানুষের বিপদে-আপদে সাধারণ মানুষের মতই ছুটে যেতেন এমপি আনোয়ারুল আজীম। সাধারণ, খেটে খাওয়া থেকে শুরু করে সবাই তাকে চেনেন আপনজন হিসেবে। ভোরের আলো ফুটতেই মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন বিভিন্ন বাজার-গ্রামে। খোঁজখবর নিতেন কেমন আছেন তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ। এক্ষেত্রে তার কাছে প্রাধান্য পায়নি কে কোন দল করেন। এমনই একজন জনপ্রতিনিধির মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোটা কালীগঞ্জ উপজেলার মানুষ।

Advertisement

এমপির মৃত্যুর খবর শুনে তার বাড়ির সামনে এসে অনিক বিশ্বাস নামের একজন বলেন, ‘আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বন্ধু ছিলেন এমপি আনার। বিভিন্ন সময় বেরিয়ে যেতেন, মিশতেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। বিকেল হলে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবলও খেলতেন। কখনো মনে হয়নি তিনি একজন এমপি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতে যাওয়ার আগের দিনও আমাদের বলেছেন, সবাই ভালো থাকবেন। মানুষের দিকে খেয়াল রাখবেন। এমপি মহোদয় অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। তার কাছে যেতে কখনো অনুমতি লাগেনি।’

সালাম নামের একজন কৃষক বলেন, ‘চলার পথে কারও মাঠে ধান কাটা দেখলেও তিনি চলে আসতেন। নেমে পড়তেন তাদের সঙ্গে ধান কাটতে।’

স্থানীয় রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, ‘আমরা এমন একজন মানুষকে হারালাম যার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। সবার দাবি, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।’

Advertisement

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারতে গিয়েছিলেন গত ১২ মে। কিন্তু এর পরদিন থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। এরপর থেকে চলছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর ছড়ায়, কলকাতায় খুন হয়েছেন বাংলাদেশি এমপি, পাওয়া গেছে তার খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ। যদিও মরদেহ পাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তবে আনোয়ারুল আজীম যে সত্যিই খুন হয়েছেন, সেটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রী।

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/এমএস