বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারিয়েছেন প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী মাহবুবা নাসরিন রুপা।
Advertisement
মঙ্গলবার (২১ মে) দ্বিতীয় দফার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র থেকে কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে লড়াই করে তিনি সাত হাজার ১৫০ ভোট পেয়েছেন। এ নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
বগুড়ার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী প্রার্থীকে জামানত ফেরত পেতে মোট প্রদত্ত ভোটের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ভোট পেতে হয়। দুপচাঁচিয়ায় ভোট পড়েছে ৬৮ হাজার ৫৪৪। জামানত ফেরত পেতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ন্যূনতম ১০ হাজার ২৮১ ভোট পেতে হতো। কাপ- পিরিচ প্রতীকে মাহবুবা নাসরিন সাত হাজার ১৫০ ভোট পাওয়ায় জামানত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদুর রহমান। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীকে ৩৭ হাজার ৫৪৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল হক প্রামাণিক আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ২০ হাজার ৪২৯ ভোট।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাহবুবা নাসরিন ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরে ২০১৯ সালে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পান। এর প্রায় এক বছর পর ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি প্রতিরক্ষা মহা হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তেজগাঁও এলাকা থেকে মাহবুবা নাসরিনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ফোন, অডিটর পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং এক লাখ ৯৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২৩ জানুয়ারি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ থেকে মাহবুবাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয় তাকে। একই বছরের ৫ জুন ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে মাহবুবা নাসরিনকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
ওইসময় তদন্তকারীদের দাবি ছিল, নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতিতে জড়িত। অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৮ প্রার্থীর সঙ্গে চুক্তি করেছিল চক্রটি। এরমধ্যে মাহবুবা নাসরিনের ছোট ভাই রানাও আছেন। ২৪ জানুয়ারি ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুর রহমান রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মাহবুবা নাসরিনসহ সহযোগীদের আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। দুই দফায় ছয় দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মাহবুবা নাসরিন।
মামলাটির তদন্ত শেষে গতবছরের ৪ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাকারিয়াস দাস আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে মাহবুবা নাসরিনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ তদন্ত শেষে মাহবুবাকে অব্যাহতি দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন।
Advertisement
এসবি/এমএস